একুশে ফেব্রুয়ারির কর্মসূচি গৃহীত, শহীদ মিনারে শ্রদ্ধায় মানতে হবে বিধিনিষেধ
একুশে ফেব্রুয়ারি যথাযোগ্য মর্যাদায় ‘শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে পালনের লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০২২ পালনেরর লক্ষ্যে গত ১৬ জানুয়ারি সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদের সভাপতিত্বে দিবসের কর্মসূচি বিষয়ক এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিভিন্ন কর্মসূচি গৃহীত হয়।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর বিশেষ অবদানের বিষয়টি শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের বিভিন্ন কর্মসূচিতে উপস্থাপন করার কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে একুশে ফেব্রুয়ারি দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবনে সঠিক নিয়মে, সঠিক রং ও মাপে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। দিবসটি উপলক্ষ্যে জাতীয় অনুষ্ঠানের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বর্তমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বিবেচনায় যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
আজিমপুর কবরস্থানে ফাতেহা পাঠ ও কোরআনখানির আয়োজনসহ দেশের সব উপাসনালয়ে ভাষা শহীদদের রুহের মাগফেরাতের জন্য দোয়া ও প্রার্থনার আয়োজন করা হবে। বর্তমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বিবেচনায় যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে প্রতিটি সংগঠনের পক্ষ হতে সর্বাধিক পাঁচ জন প্রতিনিধি হিসেবে এবং ব্যক্তি পর্যায়ে একসঙ্গে সর্বাধিক দুজন শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করতে পারবেন।
শহীদ মিনারের সব প্রবেশমুখে হাত ধোয়ার জন্য বেসিন ও লিকুইড সাবান রাখা হবে। মাস্ক পরা ছাড়া কাউকে শহীদ মিনার চত্বরে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা এবং দিবসটি পালনে নিয়োজিত সব প্রতিষ্ঠান এবং সংলগ্ন এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারকরণে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন উপলক্ষ্যে ঢাকা শহরের বিভিন্ন সড়কদ্বীপে এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সুবিধাজনক স্থানে বাংলাসহ অন্যান্য ভাষার বর্ণমালা সম্বলিত ফেস্টুন দ্বারা সজ্জিত করা হবে। একুশের বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার এবং ভাষা শহীদদের সঠিক নাম উচ্চারণ, শহীদ দিবসের ভাবগাম্ভীর্য রক্ষা, শহীদ মিনারের মর্যাদা সমুন্নত রাখা, সুশৃঙ্খলভাবে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণের মতো জনসচেতনতামূলক বিষয়ে সরকারি ও বেসরকারি গণমাধ্যম প্রয়োজনীয় প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সংবাদপত্রে ক্রোড়পত্র প্রকাশের ক্ষেত্রে ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর অবদানের বিষয়টি বিশেষভাবে উপস্থাপন করা হবে।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ সংলগ্ন এলাকায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ এবং প্রয়োজনীয় ভ্রাম্যমাণ টয়লেট স্থাপন করা হবে। শহীদ মিনারসংলগ্ন এলাকার আশপাশে ধুলাবালি রোধকল্পে পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করা হবে এবং রাস্তাঘাট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা হবে। এ ব্যাপারে সিটি করপোরেশন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। জরুরি চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শহীদ মিনার এলাকায় চিকিৎসা ক্যাম্প স্থাপন এবং পর্যাপ্তসংখ্যক অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখা হবে। শহীদ মিনার এলাকার আশপাশে ঢাকা ওয়াসা বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করবে। একুশে ফেব্রুয়ারি রাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় সব ধরনের সরঞ্জামসহ ফায়ার সার্ভিস টিম প্রস্তুত রাখা হবে।
রাষ্ট্রপ্রধান, সরকারপ্রধানসহ সবাই পূর্বের ঐতিহ্য বজায় রেখে যাতে শহীদ মিনারে উপস্থিত হয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারেন, সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিদেশে বাংলাদেশ মিশনে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ, বঙ্গবন্ধু ও ভাষা আন্দোলন বিষয়ক আলোচনা সভা, পুস্তক, চিত্র প্রদর্শনীসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করবে যেখানে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক ও বাঙালি অভিবাসীদের আমন্ত্রণ জানানো হবে।
দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন উপলক্ষ্যে গণযোগাযোগ অধিদপ্তর ঢাকা মহানগরে ট্রাকের মাধ্যমে রাজপথে ভ্রাম্যমাণ সংগীতানুষ্ঠান এবং নৌযানের সাহায্যে ঢাকা শহরসংলগ্ন নৌপথে সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজনসহ জেলা-উপজেলায় ভ্রাম্যমাণ চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর তিন ধরনের পোস্টার মুদ্রণ করবে। যার মধ্যে প্রথমটি হবে সর্বজনীন, দ্বিতীয়টি স্কুল-কলেজের শিশু-কিশোরদের জন্য এবং তৃতীয়টি বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশন এবং বাংলাদেশে অবস্থিত বৈদেশিক দূতাবাসে প্রচারের জন্য। বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, কবি নজরুল ইনস্টিটিউট, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর, গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর, আরকাইভস্ ও গ্রন্থাগার অধিদপ্তর, বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক একাডেমি, বিরিশিরি, নেত্রকোণা, রাজশাহী বিভাগীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কালচারাল একাডেমি, মণিপুরী ললিতকলা একাডেমি, কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গ্রন্থমেলা, আলোচনাসভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, আবৃত্তি, চিত্রাঙ্কন, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন, সুন্দর হাতের লেখা ও রচনা প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে।
এ ছাড়া বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর ও শাখা জাদুঘরগুলো এবং প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সব প্রত্নস্থল ও জাদুঘে শিশু-কিশোর, শিক্ষার্থী, বৃদ্ধ ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন (অটিস্টিক) শিশুদের বিনা টিকেটে পরিদর্শনের ব্যবস্থা করা হবে।