এক থেকে দেড় মিনিটে ১২ গুলি, হত্যা করা হয় দুজনকে
রাজধানীর শাহজাহানপুরে দুর্বৃত্তের গুলিতে মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু ও সামিয়া আফরিন প্রীতি নামের এক শিক্ষার্থী নিহত হন। পুলিশ বলছে, খুব অল্প সময়ের মধ্যে ১২টি গুলি ছোড়া হয় এ কিলিং মিশনে।
এদিকে প্রত্যক্ষদর্শী, সিসিটিভি ফুটেজ, পুলিশ ও র্যাব সূত্রে জানা যায়, যিনি এ হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছেন, তিনি মাত্র দেড় মিনিটের মধ্যে ১২টি গুলি ছোড়েন। মাথায় হেলমেট ও মাস্ক পরে তিনি এ কিলিং মিশনে অংশ নেন। মিশন শেষ হওয়ার পরপরই তিনি ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান।
এ বিষয়ে শুক্রবার বিকেলে শাজাহানপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ঠাকুর দাশ বলেন, খুব অল্প সময়ের মধ্যে ১২টি গুলি ছোড়ে ওই দুর্বৃত্ত। কিলিং মিশন শেষ করে দ্রুতই ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন তিনি।
অন্যদিকে দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গের সামনে উপস্থিত টিপুর বন্ধু মো. মিজানুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, তিনি ঘটনার সময় টিপুর গাড়িতে ছিলেন। সর্বোচ্চ এক থেকে দেড় মিনিট সময় ধরে হত্যাকারী গুলি ছুড়ে। গুলি লাগার পর টিপু কোনো কথা বলেনি। গুলি লাগার সঙ্গে সঙ্গেই টিপু মারা যায় বলে আমার মনে হয়েছিল।
মো. মিজানুর রহমান বলেন, আমরা যখন যানজটে পড়ি তখন এলোপাতাড়ি গুলি আসতে থাকে আমাদের দিকে। তবে কে গুলি ছুড়ছিল তা আমরা দেখিনি। টিপু ভাই চালকের পাশে বসা ছিলেন, আমরা পেছনে ছিলাম দুই জন। শুধু বৃষ্টির মতো গুলি আসছিল, আমরা কিছু বুঝতে পারিনি, কাউকে চিনতেও পারেনি। গাড়ির দরজার গ্লাসের ওপর দিয়ে গুলি ছুড়া হয়, গুলি গ্লাস ভেদ করে জাহিদুলকে বিদ্ধ করে। এ সময় গাড়ির চালক মুন্নার হাতেও গুলি লাগে। তখন মুন্না এক হাতে গাড়ি চালিয়ে প্রথমে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে যায়, পরে সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসি।
আজ শুক্রবার দুপুরে নিহত জাহিদুল ইসলাম টিপুর স্ত্রী বাদী হয়ে শাহজাহানপুর থানায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নম্বর ১৮।
টিপুকে ৪-৫ দিন আগে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছিল তার স্ত্রী মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছেন। এ বিষয়ে কিছু জানেন কিনা প্রশ্ন করা হলে মিজান বলেন, টিপুর সঙ্গে আমার কোনো রাজনৈতিক সম্পর্ক নেই। আমি তার বন্ধু, মাঝে-মধ্যে আড্ডা দিতাম একসঙ্গে। এ ধরনের কোনো কথা সে আমাকে বলেনি। কোনো সময়ই সে আমার সঙ্গে এ ধরনের কোনো কথা বলেনি।
মিল্কি হত্যার সঙ্গে তার নাম জড়িত ছিল এ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন কিনা প্রশ্ন করা হলে বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। প্রশাসন বিষয়টা দেখছে, তারা বলতে পারবে।
এজাহারে নিহতের স্ত্রী ফারজানা ইসলাম ডলি উল্লেখ করেন, আমার স্বামী মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির সদস্য ছিলেন। আমার বাবার মতিঝিল কাঁচা বাজার এলাকায় একটি রেস্টুরেন্ট আছে। আমার স্বামী রেস্টুরেন্ট দেখাশোনা করতেন। আমরা স্বামী বৃহত্তর মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের ১০ বছর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি সাধারণ সম্পাদক থাকাকালীন দলীয়ভাবে কোন্দল ছিল। গত ৪-৫ দিন আগে আমার স্বামীকে অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতকারীরা মোবাইল ফোনে হত্যার হুমকি দেয়।
এজাহারে ফারজানা ইসলাম ডলি আরও বলেন, প্রতিদিনের মতো গতকাল মাইক্রোবাস নিয়ে গাড়িচালক মনির হোসেন মুন্নাকেসহ তিনি হোটেলের উদ্দেশ্যে যাওয়ার জন্য রওনা হন। মতিঝিল এজিবি কলোনির গ্র্যান্ড সুলতান নামে রেস্টুরেন্টে কাজ শেষে বাসার উদ্দেশে আসার পথে রাত আনুমানিক সোয়া দশটার দিকে শাজাহানপুর মানামা ভবনের বাটার দোকানের সামনে অজ্ঞাত দুষ্কৃতকারীরা পূর্ব শত্রুতার জের ধরে আমার স্বামীকে এলোপাতাড়ি গুলি করে এবং গুলিতে গাড়ির গ্লাস ভেঙে যায়। এ সময় গুলির কারণে আমার স্বামীর গলার ডান পাশে, বুকের বাম পাশে, বুকের বাম পাশের বগলের কাছাকাছি, পেটের মধ্যে নাভির নিচে, বাম কাঁধের ওপরে, পিঠের বাম পাশের মাঝামাঝি স্থানে, পিঠের বাম পাশের কোমর বরাবর, পিঠের ডান পাশের কোমরের ওপর মারাত্মক জখম হয়। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।