এবার ব্যঙ্গচিত্র হাতে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন
এবার রাজধানীর রামপুরায় ব্যঙ্গচিত্র নিয়ে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের এ কর্মসূচি ছিল পূর্ব নির্ধারিত। আজ রোববার দুপুরে সড়ক দুর্ঘটনার বিচার এবং নিরাপদ সড়কের দাবিতে ১১ দফা বাস্তবায়নে রামপুরা সড়কের হাতিরঝিলসংলগ্ন ফুটপাতে এ অবস্থান নেন তাঁরা।
এর আগে গতকাল শনিবার রামপুরার একই স্থানে সড়কে অব্যবস্থাপনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে লাল কার্ড দেখিয়েছিলেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। ঠিক সেখানেই আজ ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন করেছেন শিক্ষার্থীরা।
গত ২৯ নভেম্বর রাতে রামপুরায় বাসচাপায় এসএসসি পরীক্ষার্থী মো. মাঈনুদ্দিন নিহত হন। এরপর থেকে প্রতিদিনই কর্মসূচি পালন করছেন বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। এরই ধারাবাহিকতায় গতকালের লাল কার্ড প্রদর্শনী শেষে আজ এ ব্যঙ্গচিত্র প্রদশর্নী।
নিরাপদ সড়ক সংশ্লিষ্ট ১১ দফা দাবিতে কয়েক দিন ধরে রামপুরায় এলাকায় অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন শিক্ষার্থীরা।
রামপুরা ব্রিজের ওপ আজ দুপুর ১২টা ১৪ মিনিটে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। এরপর ১টা ৫ মিনিটে তাঁরা সেখান থেকে চলে যান। সে সময় তাঁদের হাতে ছিল নানা ধরনের ব্যঙ্গচিত্র।
ব্যঙ্গচিত্রে নানা স্লোগান লেখা রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘গণপরিবহণে হাফ পাস চাই’, ‘জাতির ভবিষ্যৎ মরলে কে গড়বে সোনার বাংলা’।
ওই সময় আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া খিলগাঁও সরকারি মডেল কলেজের সোহাগী সামিয়া বলেন, ‘আমরা আমাদের যে ১১ দফা দাবি আছে, তা সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চাই। আমাদের আন্দোলন কারও বিপক্ষে নয়। আমরা সবার হয়ে এ আন্দোলন করছি। অথচ আমাদের আন্দোলনকে ভিন্ন দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য কিছু লোক অপপ্রচার চালাচ্ছে।’
‘এসব অপপ্রচার করে আমাদের থামিয়ে দেওয়া যাবে না। আমরা আমাদের চলমান আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি আর যাব’, যোগ করেন সোহাগী সামিয়া।
সোমবারের কর্মসূচি নিয়ে সোহাগী বলেন, ‘আমরা আগামীকাল ঠিক দুপুর ১২টায় সড়কে নাঈম, মাঈনউদ্দিনসহ যারা মারা গেছে, তাদের জন্য শোক প্রকাশ এবং কালো পতাকা ধারণ করব।’
সোহাগী সামিয়া আরও বলেন, ‘সড়কে দুর্ঘটনায় পুরো সিস্টেম জড়িত। এ সিস্টেমে ঘুষ আছে, লুটপাট আছে। এর সঙ্গে জড়িত সরকারি-বেসরকারি লোক। এ লুটপাট ও দুর্নীতিকে আজ আমরা লাল কার্ড দেখাচ্ছি।’
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা নিজেদের ‘রেফারি’ দাবি করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর কথা জানায়।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, সড়ক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত সরকারি-বেসরকারি কর্তৃপক্ষ ‘দুর্নীতিপরায়ণ’ হয়ে উঠেছে। এর ফলে রাস্তায় ফিটনেস ও লাইসেন্সবিহীন গাড়ি দেখা যায়। তারা অপেশাদার চালক নিয়োগ দেয়। যাঁরা চালকদের দারিদ্র্যের সুযোগ নিচ্ছেন, তাঁরা দুর্নীতি করছেন।
শিক্ষার্থীদের ১১ দফা দাবি
১. সড়কে নির্মম কাঠামোগত হত্যার শিকার নাঈম ও মাইনুদ্দিন হত্যার বিচার করতে হবে। তাদের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। গুলিস্তান ও রামপুরা ব্রিজসংলগ্ন এলাকায় পথচারী পারাপারের জন্য ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করতে হবে।
২. সারাদেশে সব গণপরিবহণে শিক্ষার্থীদের হাফ পাস সরকারি প্রজ্ঞাপন দিয়ে নিশ্চিত করতে হবে। হাফ পাসের জন্য কোনো সময় বা দিন নির্ধারণ করে দেওয়া যাবে না। বর্ধিত বাস ভাড়া প্রত্যাহার করতে হবে। সব রুটে বিআরটিসি’র বাসের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে।
৩. গণপরিবহণে ছাত্র-ছাত্রী ও নারীদের অবাধ যাত্রা ও সৌজন্যমূলক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
৪. ফিটনেস ও লাইসেন্সবিহীন গাড়ি এবং লাইসেন্সবিহীন চালক নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। গাড়ি ও ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে বিআরটিএ’র দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
৫. সব রাস্তায় ট্রাফিক লাইট, জেব্রা ক্রসিং নিশ্চিত করাসহ জনবহুল রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা বাড়াতে হবে। ট্রাফিক পুলিশের ঘুষ দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
৬. বাসগুলোর মধ্যে বেপরোয়া প্রতিযোগিতা বন্ধে এক রুটে এক বাস এবং দৈনিক আয় সব পরিবহণ মালিকের মধ্যে তাদের অংশ অনুযায়ী সমানভাবে বণ্টন করার নিয়ম চালু করতে হবে।
৭. শ্রমিকদের নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র নিশ্চিত করতে হবে। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করতে হবে। চুক্তির ভিত্তিতে বাস দেওয়ার বদলে টিকিট ও কাউন্টারের ভিত্তিতে গোটা পরিবহণ ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। শ্রমিকদের জন্য বিশ্রামাগার ও টয়লেটের ব্যবস্থা করতে হবে
৮. গাড়ি চালকের কর্মঘণ্টা একনাগাড়ে ছয় ঘণ্টার বেশি হওয়া যাবে না। প্রতিটি বাসে দুজন চালক ও দুজন সহকারী রাখতে হবে। পর্যাপ্ত বাস টার্মিনাল নির্মাণ করতে হবে। পরিবহণ শ্রমিকদের যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
৯. যাত্রী-পরিবহণ শ্রমিক ও সরকারের প্রতিনিধিদের মতামত নিয়ে সড়ক পরিবহণ আইন সংস্কার করতে হবে এবং এর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
১০. ট্রাক, ময়লার গাড়িসহ অন্যান্য ভারী যানবাহন চলাচলের জন্য রাত ১২টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করে দিতে হবে।
১১. মাদকাসক্তি নিরসনে সমাজজুড়ে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। চালক-সহকারীদের জন্য নিয়মিত ডোপ টেস্ট ও কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।