এবার সুশীল সমাজের ৩৯ প্রতিনিধিকে ইসির সংলাপে আমন্ত্রণ
শিক্ষাবিদদের সঙ্গে সংলাপের পর এবার সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বসতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ জন্য সুশীল সমাজের ৩৯ জন প্রতিনিধিকে সংলাপে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে আগামী মঙ্গলবার বেলা ১১টায় এ সংলাপে বসবে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃতাধীন নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ আজ রোববার এনটিভি অনলাইনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘আগামীতে অনুষ্ঠিত সব নির্বাচন কীভাবে সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য করা যায়, সে বিষয়ে রোডম্যাপ ঠিক করতে সংলাপে অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে মতামত নেওয়া হবে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইসির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘মোট ৩৯ জন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিকে এরই মধ্যে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ আসতে চান না বলেও জানিয়েছেন। তবে, ইসি ধরে নিচ্ছে অমন্ত্রণ জানানোদের অধিকাংশই সংলাপে উপস্থিত থাকবেন।’
ইসি সূত্রে জানা গেছে, পরবর্তীতে বুদ্ধিজীবী, নির্বাচন পর্যবেক্ষক, সাংবাদিকের সঙ্গেও সংলাপে বসার পরিকল্পনা রয়েছেন বর্তমান কমিশনের। এ সংলাপ শেষ হলে পরবর্তী সংলাপের জন্য কাজ শুরু করবে ইসি।
ইসির সংলাপে আমন্ত্রণ পাওয়া ৩৯ জন হলেন—সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, বেগম রাশেদা কে চৌধুরী, ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, এম হাফিজ উদ্দিন খান, আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী, ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ, মির্জা আজিজুল ইসলাম, বেগম রোকেয়া এ রহমান, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য, সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহদীন মালিক, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারকাত, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, বাংলাদেশ হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ওয়ালি উর রহমান, ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এমএম আকাশ, নিজেরা করি’র কো-অর্ডিনেটর খুশী কবির, সেন্টার ফর আরবান স্টাডিজের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম ও সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার।
এ ছাড়া সংলাপের আমন্ত্রণ পাওয়া আরও প্রতিনিধিরা হলেন, বাংলাদেশ ইনডিজিনাস পিপলস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, সাবেক রাষ্ট্রদূত এএফএম গোলাম হোসেন, অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জামান, সাবেক সচিব আব্দুর লতিফ মন্ডল, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন, প্রেসিডেন্ট গভনের্ন্স অ্যান্ড রাইট সেন্টারের ড. জহুরুল আলম, সাবেক পররাষ্ট্রসচিব মহিউদ্দিন আহমেদ ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক বেগম শাহীন আনাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আমেনা মহসিন এবং গণযোগাগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. কাবেরী গায়েন।
এ ছাড়া আমন্ত্রণ পাওয়াদের মধ্যে রয়েছেন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গণযোগাগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রুবায়েত ফেরদৌস, অধ্যাপক ড. এসএম শামীম রেজা, অধ্যাপক ড. শেখ হাফিজুর রহমান, সিপিডির সম্মানিত ফেলো অধ্যাপক রওনক জাহান, ড. মোস্তাফিজুর রহমান, সাবেক সচিব আবু আলম শহীদ খান, লিডারশিপ স্টাডিজ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. সিনহা এম এ সাঈদ এবং লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমেদ।
এর আগে ২০১৭ সালে কেএম নুরুল হুদা কমিশনও দায়িত্ব নেওয়ার পর সমাজের বিভিন্ন মহলের সঙ্গে সংলাপে বসেছিলেন। ২০১৭ সালের ৩১ জুলাই সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বসার মধ্য দিয়ে ওই সংলাপ শুরু হয়েছিল। পরবর্তীতে নুরুল হুদা কমিশন ৪০টি রাজনৈতিক দল, নারী নেতৃত্ব, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে সংলাপে বসেছিল।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি সিইসিসহ চার কমিশনার নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার করা হয় সাবেক সিনিয়র সচিব কাজী হাবিবুল আউয়ালকে। নির্বাচন কমিশনের অন্য কমিশনার হলেন- সাবেক জেলা ও দায়রা জজ বেগম রাশিদা সুলতানা, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবিব খান, সাবেক সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর এবং আনিছুর রহমান।
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও ইসির বাকি চার কমিশনার শপথ নেন। পরদিন ২৮ ফেব্রুয়ারি নতুন কমিশন ইসিতে যোগদান করেন। যোগদানের পর গত ১৩ মার্চ প্রথম শিক্ষক সমাজের ৩০ জনকে সংলাপে বসার আমন্ত্রণ জানালেও প্রথমদিনের সংলাপে মাত্র ১৩ জন উপস্থিত হন। উপস্থিত ছিলেন না ১৭ জন।