এবার স্বীকারোক্তি দিলেন এসআই নন্দদুলাল
অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় তৃতীয় দফা রিমান্ড শেষে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন পুলিশের বরখাস্ত হওয়া উপপরিদর্শক (এসআই) ও মামলার তিন নম্বর আসামি নন্দদুলাল রক্ষিত।
আজ সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহর আদালতে আসামি নন্দদুলালকে হাজির করা হয়। পরে বিচারক তাঁর খাস কামরায় ১৬৪ ধারামতে আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করে। পাঁচ ঘণ্টা ধরে জবানবন্দি দেন নন্দদুলাল। এর আগে তাঁকে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হয়। পরে তাঁকে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
পরে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা র্যাবের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) খায়রুল ইসলাম গণমাধ্যমের কাছে দাবি করেন, ‘আদালতে নন্দদুলাল সিনহা হত্যাকাণ্ডের ঘটনা সবিস্তারে বর্ণনা দিয়েছেন। আশা করি, তিনি আদালতে সত্য স্বীকার করেছেন। র্যাবের হেফাজতে আসামি নন্দদুলাল স্বীকার করেছেন, তাঁর কাছ থেকে অস্ত্র নিয়ে পরিদর্শক লিয়াকত সিনহাকে গুলি করেছেন।’
এর আগে গতকাল রোববার মামলার প্রধান আসামি বরখাস্ত হওয়া পরিদর্শক লিয়াকত আলী স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
গত ৩১ জুলাই ঈদুল আজহার আগের রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশ কর্মকর্তা লিয়াকত আলীর গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। ঘটনার পর পুলিশ বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় দুটি মামলা করে। আর রামু থানায় একটি মামলা করে।
পরে ৫ আগস্ট কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হত্যা মামলা করেন সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। এতে নয়জনকে আসামি করা হয়। আসামিরা হলেন টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ, টেকনাফের বাহারছড়া শামলাপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের প্রত্যাহার হওয়া পরিদর্শক লিয়াকত আলী, উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিত, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া, পুলিশ কনস্টেবল সাফানুর রহমান, কামাল হোসেন, আবদুল্লাহ আল মামুন, মো. মোস্তফা ও এসআই টুটুল। এদের মধ্যে আসামি মোস্তফা ও টুটুল পলাতক।
এরপর গত ৬ আগস্ট প্রথম দফায় বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, পরিদর্শক লিয়াকত আলী ও এসআই নন্দদুলাল রক্ষিতের সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছিলেন কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিনের আদালত।
এরপর গত ২৪ আগস্ট কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক তামান্না ফারাহ আসামিদের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। একই আদালত গত ২৮ আগস্ট তাদের তৃতীয় দফায় রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
আর আজ চতুর্থ দফায় প্রদীপের একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
এই মামলায় মোট ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সদস্য তিনজন। তাঁরা হলেন- সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) শাহজাহান, কনস্টেবল মোহাম্মদ আবদুল্লাহ ও কনস্টেবল রাজীব। এই তিনজনই আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তাঁরা ঘটনার দিন তল্লাশি চৌকিতে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
অন্য তিন আসামি হলেন- পুলিশের দায়ের করা দুটি মামলার সাক্ষী টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের মারিশবুনিয়া এলাকার বাসিন্দা মো. নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও মোহাম্মদ আয়াছ।
এ ছাড়া পুলিশের দায়ের করা মামলায় দুই আসামি সিনহা রাশেদের দুই সহযোগী সাহেদুল ইসলাম সিফাত এবং অপর সহযোগী শিপ্রা দেবনাথ জামিনে মুক্ত আছেন।