‘ওস্তাদ সাবধান, শোনে নাই’, ঝিমুনি নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছিলেন চালক
সাভারে সড়ক দুর্ঘটনায় পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের দুই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও এক প্রকৌশলীসহ ৫ জনের মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্ত বাসচালক ঝিমিয়ে গাড়ি চালাচ্ছিলেন বলে জানিয়েছে ঘাতক বাসের হেলপার তানভীর আহমেদ সুলতান। হাত ও পা ভাঙা নিয়ে তানভীর আহমেদ সাভারে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
শারীরিক অবস্থার উন্নতির পর মঙ্গলবার দুপুরে তিনি সাংবাদিকদের জানান, ‘ঝিমুনি আসার পর গাড়ি চালানো ছিল অস্বাভাবিক। বার বার বলার পরেও চালক মারুফ হোসেন মুন্না (২৪) সর্তক হয়নি। উল্টো ঝাড়ি দিয়েছে। তারপর হঠাৎ করেই দেখি গাড়ি পাগলা ঘোড়ার মতো চলা শুরু করলো। ততক্ষণে চালকের হাতে আর নিয়ন্ত্রণ ছিল না। মুহূর্তের মধ্যেই কি থেকে কি হলো। পরে দেখি আমি হাসপাতালে।’
দুর্ঘটনায় তানভীর আহমেদ সুলতানের বাঁ হাত ভেঙে গেছে, কেটে গেছে বাঁ পা। মারা যায় বাসচালক মারুফ হোসেন মুন্না (২৪)। সে চাঁদপুর জেলার শাহরাস্তি থানার বোয়ালিয়া গ্রামের মোস্তফা কামালের ছেলে। থাকতেন মিরপুর দারুস সালামের লালকুঠি এলাকায়।
তানভীর জানান, ‘দুর্ঘটনাকবলিত বাসটি ঢাকা-কুষ্টিয়া-শৈলকুপা রুটে চলাচল করত। গত শনিবার সকালে যাত্রী নিয়ে ঢাকার গাবতলী থেকে শৈলকুপার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া বাসটি চালাচ্ছিলেন মারুফ হোসেন। পৌঁছাতে পৌঁছাতে ওই দিন রাত সাড়ে ৯টার দিকে বাসটি ঝিনাইদহের শৈলকুপায় পৌঁছে। মাত্র দুই ঘণ্টার ব্যবধানে ৪০ জন যাত্রী নিয়ে বাসটি ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেয়।
তানভীর জানান, বিরামহীন গাড়ি চালনার কারণে চালক ছিলেন প্রচণ্ড ক্লান্ত। প্রায় সময় অসতর্কতায় চালককে বলতে হয়েছে ওস্তাদ সাবধানে। কিন্তু তিনি ঝিমিয়ে ঝিমিয়েই গাড়ি চালাতে থাকেন। এ সময় বেশ কয়েক দফায় বাসটি সড়ক থেকে বিচ্যুত হলেও তখন চালক সামলে নেন। কিন্তু বলিয়ারপুরে পৌঁছেও আর নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পারেননি।
সাভার হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আতিকুর রহমান জানান, হেলপারের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে।
দুর্ঘটনাকবলিত বাসের পেছনে ‘সেফ লাইন’লেখা থাকলেও মূলত বাসটি চলত ‘নিউ গ্রিন এক্সপ্রেসের’ব্যানারে। এই কোম্পানির চারটি বাস রয়েছে।
দুর্ঘটনার পর সাভার মডেল থানার কন্ট্রোল রুমের সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায়, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বলিয়ারপুরে ‘সেফ লাইন পরিবহণের’ বাসটি মহাসড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা অপর একটি বাসকে ধাক্কা দিয়ে সড়ক বিভাজকের ওপর উঠে যায়। এ সময় পেছন থেকে আসা একটি গরুবোঝাই ট্রাক ওই বাসকে ধাক্কা দিলে বাসটি সড়কের ওপর আড়াআড়ি দাঁড়িয়ে যায়। সে সময় ঢাকা থেকে আসা আশুলিয়ার গণকবাড়িগামী বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের একটি বাসকে সেফলাইন পরিবহণের বাসটি সজোরে ধাক্কা মারে। এতে পরমাণু শক্তি কমিশনের দুই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, এক প্রকৌশলী ও বাসের চালক নিহত হন।