কক্সবাজারের দুই পৌরসভায় নৌকার জয়
কক্সবাজার জেলার চকরিয়া ও মহেশখালী পৌরসভা এবং জেলার চার উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন পরিষদে প্রথম ধাপের নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। চকরিয়া পৌরসভায় নৌকার প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত আলমগীর চৌধুরী ও মহেশখালীতে নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগ মনোনীত মকসুদ মিয়া।
আজ সোমবার সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ আরম্ভ হয়। নির্বাচনের প্রথম দিকে বেশ উৎসবের আমেজ ছিল। গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টিতেও ভোটারদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো ছিল। প্রার্থী ও ভোটাররা শঙ্কামুক্ত হয়ে ভোট দেয়। কিন্তু বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চিত্র পাল্টে যায়। ঘটে মারামারি, গোলাগুলি ও কেন্দ্র দখলের ঘটনা। ছিনিয়ে নেয় ব্যালট পেপার। কুতুবদিয়া, মহেশখালী, টেকনাফের কয়েকটি কেন্দ্রে সহিংস ঘটনা উৎসবের আমেজে অনেকটা ঢিল ছুঁড়ে।
আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মহেশখালী উপজেলার কুতুবজুম ইউনিয়নের পশ্চিমপাড়ায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ কামাল ও বিদ্রোহী প্রার্থী মোশাররফ হোসেন খোকনের সমর্থকদের মধ্যে গোলাগুলিতে আবুল কালাম (৩২) নামের একজন নিহত হন। আহত হয় ১০ জন। এছাড়া দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ব্যালেট পেপার ছিনতাইকালে কুতুবদিয়ার বড়ঘোপ ইউনিয়নে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল হালিম (৩৫) নিহত হয়েছেন।
অন্যদিকে, টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নে ব্যালেট ছিনতাইকে কেন্দ্র করে লম্বাবিল মাদ্রাসা কেন্দ্র অবরুদ্ধ করে এলাকাবাসী। এ সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়ি ভাঙচুর ও সড়ক অবরোধ করে বিক্ষুব্ধ লোকজন। পরে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসে দুই কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত ঘোষণা করেন।
জেলা ও উপজেলা নির্বাচন অফিস, আইনশঙ্খলা বাহিনী ও নানা সূত্রে জানা যায়, কুতু্বজুম ইউনিয়নে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কুতুবজুমের ৪ নম্বর ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটকেন্দ্রে গোলাগুলি ও ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে চেয়ারম্যান প্রার্থীরা একে অপরকে দোষারোপ করছে।
এ বিষয়ে নৌকা প্রতীকের চেয়াম্যান প্রার্থী শেখ কামাল বলেন, ‘আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মোশাররফ হোসেন খোকনের সমর্থকরা কুতুবজুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও জামিউস সুন্নাহ দারুল উলুম মাদ্রাসা কেন্দ্র দখল নিতে পরিকল্পিতভাবে গোলাগুলি ও ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটিয়েছে।’
তবে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর করা অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মোশারররফ হোসেন খোকন বলেন, ‘প্রায়ই বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে তার এজেন্টদের বের করে দেয় শেখ কামালের সন্ত্রাসী বাহিনী। এমন খবর পেয়ে ভোটার ও তার সমর্থকরা ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কেন্দ্রে গেলে নৌকার প্রার্থীর ক্যাডাররা গুলি করেছে। জামিউস সুন্নাহ দারুল মাদ্রাসা কেন্দ্রে দুই ইউপি সদস্য প্রার্থী ফুটবল প্রতীকের ফরিদুল আলম ও টিউবওয়েল প্রতীকের জহিরুল ইসলামের সমর্থকের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।’
এ বিষয়ে কুতু্বজুম ইউপি নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘গোলাগুলির খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই। দুই কেন্দ্রই পাশাপাশি। আপাতত দুই কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ বন্ধ করা হয়।’
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘নিহতের মৃতদেহ কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে রয়েছে।’
এদিকে, কুতুবদিয়ার বড়ঘোপ ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের পিলটকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে আবদুল হালিম নামের একজন নিহত হয়েছেন। এতে পিলটকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কুতুবদিয়া সরকারি কলেজ কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ ছিল। এছাড়া সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন।
নিহত আবদুল হালিম বড়ঘোপ ইউনিয়নের গোলদারপাড়া এলাকার মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে এবং ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
কুতুবদিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওমর হায়দার জানান, ভোটকেন্দ্রে গোলযোগ সৃষ্টির চেষ্টাকালে আবদুল হালিম নামে একজন নিহত হয়েছেন। তিনি নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সমর্থক।
কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান বলেন, ‘পুলিশের গুলিতে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল হালিম নিহত হয়েছেন। তবে কী কারণে পুলিশ গুলি করেছে তা তিনি জানাতে পারেননি।’
অন্যদিকে, টেকনাফের হোয়াইক্ষ্যং আলী আছিয়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ব্যালট ছিনতাইয়ের ঘটনায় দুই মেম্বার প্রার্থীর মধ্যে গোলাগুলি হয়েছে। ঘটনার পর কিছুক্ষণ ভোটগ্রহণ স্থগিত ছিল। পরে স্বাভাবিক হয়। একইভাবে হোয়াইক্যংয়ের উনছিপ্রাং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও লম্বাবিল এমদাদিয়া মাদরাসা ভোটকেন্দ্রে ব্যালট ছিনতাই হয়েছে। এ ঘটনায় নির্বাচন কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে রাখে উত্তেজিত জনতা। ঘটেছে সড়ক অবরোধ ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে থেমে থেমে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে স্বানীয়রা।
খবর পেয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) আবু সুফিয়ান, টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পারভেজ চৌধুরী, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইরফানুল হক চৌধুরী বেলা ১টার দিকে লম্বাবিল ভোটকেন্দ্রে পৌঁছেন। তারা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও এজেন্টদের অভিযোগ শোনেন। তাৎক্ষণিক দুই কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত থাকার কথা জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পারভেজ চৌধুরী।
বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনা ছাড়া জেলার দুই পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সম্পন্ন হয়।