কখন কী বিষয়ে বলতে হয়, সেটি বঙ্গবন্ধু জানতেন : তথ্যমন্ত্রী
‘কখন কী বিষয়ে বলতে হয়, সেটি বঙ্গবন্ধু জানতেন, সেজন্যই বঙ্গবন্ধু রাজনীতির কবি’ বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকাকে প্রকাশ না করা ছিল জাতীয়ভাবে আমাদের ভুল ও রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা। যারা বঙ্গবন্ধুর ভূমিকাকে খাটো করে দেখানোর অপচেষ্টা করেছেন, তারা অন্যায় করেছেন।’
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে প্রেসক্লাব আয়োজিত ‘ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তথ্যমন্ত্রী একথা বলেন।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে ও প্রেসক্লাবের আন্তর্জাতিক লিয়াঁজো উপ-কমিটির আহ্বায়ক আইয়ুব ভূঁইয়ার সঞ্চালনায় রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ, বাংলা একাডেমির সভাপতি ড. শামসুজ্জামান খান এবং প্রেসক্লাবের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাঈনুল আলম আলোচনায় অংশ নেন। সেমিনারে ‘বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন ও বাংলার বিশ্বব্যাপ্তি’ মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, ১৯৪৮ সালে ঢাকায় মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর ‘উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’ ঘোষণার প্রতিবাদে আন্দোলন সংগঠিত করার কারণেই ১১ মার্চ ১৯৪৮ বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ১৫ মার্চ মুক্তি লাভ করে আবার পরদিন ১৬ মার্চ ভাষার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগ্রাম পরিষদের সভায় সভাপতিত্ব করেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৪৯ সালে ডিসেম্বর মাসে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়, একটানা ১৯৫২ সাল পর্যন্ত তিনি কারাগারে ছিলেন। কারাগারে থাকাকালীনও তিনি কিন্তু বসে ছিলেন না। সেখান থেকেই তিনি ভাষা আন্দোলন সংগঠিত করার দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। এমনকি তিনি জেলখানায় অনশন করেছেন। এই বিষয়গুলো আসলে আগে কখনো জনসম্মুখে প্রকাশিত হয়নি এবং এটি অপ্রকাশিত রাখা একটি বড় অন্যায় ছিল।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, একটি কথা অনেকে জানে না, ১৯৫২ সালের পরে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু ১৯৫৬ সালে আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার গঠন করার আগ পর্যন্ত বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হলেও সেটাকে কার্যকর করা হয়নি। ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলাকে সরকারি কার্যকরণে নিয়ে আসা হয়। রাষ্ট্রীয়ভাবে ২১ ফেব্রুয়ারি পালন, শহীদ মিনার সরকারিভাবে নির্মাণও তখনই শুরু হয়।
‘ভাষা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় আমাদের স্বাধিকার আদায়ের সংগ্রাম, এর ধারাবাহিকতায় স্বাধীনতা সংগ্রাম; কিন্তু বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পরিকল্পনা করেছিলেন পাকিস্তান হওয়ার পরপরই’ উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী এবং এখন প্রকাশিত সিক্রেট ডকুমেন্ট পড়লে বোঝা যায়, বঙ্গবন্ধু আসলে পাকিস্তান সৃষ্টির পরপরই বাংলাদেশের স্বাধীনতার কথা চিন্তা করেছেন এবং সেই লক্ষ্যে তিনি কাজ শুরু করেছিলেন।
‘কখন কী বিষয়ে বলতে হয়, সেটি বঙ্গবন্ধু জানতেন, সেজন্যই বঙ্গবন্ধু রাজনীতির কবি’, বলেন হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু যদি ৬৬ সালে ৬ দফা ঘোষণা না করে তাঁর মনে যে স্বাধীনতার কথা ছিল সেটি বলতেন, তাহলে তো স্বাধীনতা আসতো না। বঙ্গবন্ধু ৬৬ সালে ৬ দফা ঘোষণা করে প্রথমে বাঙালির মনন তৈরি করেছেন স্বাধীনতার জন্য। এরপর তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন, ৬ দফার পক্ষে ম্যান্ডেট নিয়েছেন। তারপর তিনি জানতেন যে ৭০ সালে নির্বাচনের পর পাকিস্তানিরা ক্ষমতা হস্তান্তর করবে না। কি করতে হবে সেই পরিকল্পনাও তার ছিল। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী ৭ মার্চের ভাষণের মধ্যে তিনি স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু ‘বাংলাদেশ স্বাধীন’ সেই কথা তিনি বলেন নাই। যে মহূর্তে স্বাধীনতা ঘোষণা করা প্রয়োজন, সে মুহূর্তে স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন। এভাবে বঙ্গবন্ধু ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলন এবং স্বাধীনতা সংগ্রাম সংগঠিত করে বাঙালিকে স্বাধীন রাষ্ট্র উপহার দিয়েছেন।’
‘আমরা বঙ্গবন্ধুকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বলি। কারণ হাজার হাজার বছরের ইতিহাসে বাঙালির জন্য কখনো স্বাধীন রাষ্ট্র ছিল না, বঙ্গবন্ধুই ঘুমন্ত বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত করে, সংগঠিত করে স্বাধীনতা সংগ্রামের মাধ্যমে, স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে তাঁর নেতৃত্বে বাঙালিদের জন্য স্বাধীন বাংলাদেশ জাতি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছেন’, বলেন তথ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ইতিহাসের পাতায় আরো বহু বাঙালি নেতা স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছেন, চেষ্টা চালিয়েছেন কিন্তু সফল হননি, বঙ্গবন্ধুই সেই সফলতা এনে দিয়েছেন এবং সেই কারণেই বঙ্গবন্ধু সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি।
‘আজকে বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যেমন এগিয়ে যাচ্ছে, শুধু তাই নয় আজ ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এবং কেউ স্বীকার করুক আর না করুক, বাংলাদেশ আজ অনেক এগিয়ে গেছে’ উল্লেখ করে ড. হাছান বলেন, ‘আশাহীন মানুষ যেমন এগুতে পারে না তেমনি আশাহীন জাতিও এগিয়ে যেতে পারে না। আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে জাতিকে আশাবাদী করা, স্বপ্ন দেখানো। শুধু বিরূপ সংবাদ পরিবেশিত হলে জাতি কখনো আশা দেখবে না। তাই আমার অনুরোধ, এই জাতির বহু অর্জন আমরা গণমাধ্যমে তুলে ধরব, জাতিকে আশার আলো দেখাব। আর আমাদের দেশকে নিয়ে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র হচ্ছে, সেদিকে সজাগ থাকতে হবে।’
বিটিভির মহাপরিচালকের বিদায় সংবর্ধনা
বৃহস্পতিবার বিকেলে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ টেলিভিশনের বিদায়ী মহাপরিচালক এস এম হারুন-অর-রশীদকে সংবর্ধনা জানানো হয়। তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, তথ্য সচিব খাজা মিয়া, প্রধান তথ্য কর্মকর্তা সুরথ কুমার সরকার, মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জাহানারা পারভীনসহ কর্মকর্তাবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন। তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বিদায়ী মহাপরিচালকের কর্মদক্ষতার প্রশংসা এবং তাঁর সুন্দর ও শান্তিময় ভবিষ্যৎ কামনা করেন।
স্থানীয় সরকার বিভাগে সংযুক্ত অতিরিক্ত সচিব সোহরাব হোসেনকে বিটিভির মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগাদেশ দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।