কচুরিপানা অপসারণে জার্মানি থেকে মেশিন আনবে সরকার
খাল ও জলাশয়ে থাকা কচুরিপানা এবং ভাসমান ময়লা-আবর্জনা অপসারণ করতে জার্মানি থেকে অত্যাধুনিক মেশিন আনার উদ্যোগ নেবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এডিস মশা নিধনে সরকার এ উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, চীন, জাপান, কোরিয়া ও ব্রিটেনসহ বিশ্বের অনেক দেশেই এই মেশিনগুলো চালু রয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার অনলাইনে আয়োজিত এডিস মশা নিধন এবং ডেঙ্গু সংক্রমণ প্রতিরোধ সংক্রান্ত আন্তমন্ত্রণালয় সভায় সভাপতির বক্তব্যে এ কথা জানান মন্ত্রী। সভায় ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, খুলনা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র, স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক সমন্বয়ক ও ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) অংশ নেন।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, ঢাকাসহ সব সিটি করপোরেশনের খাল ও জলাশয় থেকে কচুরিপানা এবং অন্যান্য ভাসমান পদার্থ পরিষ্কার করে মশার প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস ও পানির প্রবাহ ঠিক রাখার লক্ষ্যে এই মেশিন আমদানি করা হচ্ছে। সবগুলো দেশের মেশিন যাচাই-বাছাই করে জার্মানি থেকে ক্রয় করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই মেশিন কচুরিপানাসহ ভাসমান পদার্থ এমনকি পানির এক মিটার নিচের ময়লা-আবর্জনা অপসারণ করতেও সক্ষম।
চলমান সময়টিকে এডিস মশার প্রজননের উর্বর সময় উল্লেখ করে তাজুল ইসলাম বলেন, এডিস মশা স্বচ্ছ পানিতে জন্মে থাকে। তাই বাসাবাড়িতে কোথাও পানি জমিয়ে রাখা যাবে না। নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে। এ ব্যাপারে অনেক সচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়েছে। এরপরও যারা এডিস মশার প্রজননে ভূমিকা রাখবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্ত্রী জানান, এডিস মশা নিধনে প্রয়োজনীয় কীটনাশক ওষুধ বিশেষ করে এডাল্টিসাইড ও লার্ভিসাইড পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। এ ছাড়া, পর্যাপ্ত ফগিং মেশিন, প্রশিক্ষিত জনবলও প্রস্তুত আছে। সরকারি নির্দেশনা অমান্য করলে অভিযান চালাতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার জন্য সিটি করপোরেশনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে। নগরবাসীকে মশার উপদ্রপ থেকে বাঁচাতে সব ধরনের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
তাজুল ইসলাম বলেন, মানুষ সচেতন না হলে এবং খাল-জলাশয় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না করতে পারলে মশার প্রজনন বৃদ্ধি ঠেকানো সম্ভব হবে না। জনমানুষের অংশগ্রহণ অর্থাৎ সব শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণ যেকোনো প্রতিকূলতা মোকাবিলা করা সম্ভব। মন্ত্রণালয় ও সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে স্ব স্ব দায়িত্ব পালন করতে হবে। তাদের আওতাধীন অফিস এবং অন্যান্য অবকাঠামোতে যেন এডিস মশার লার্ভা না জন্মে সেদিকে নজর রাখতে হবে এবং নির্দেশনা প্রদান করতে হবে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড, রেলওয়ে, সিভিল এভিয়েশন এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে ডেঙ্গু মশা নিধনে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। মন্ত্রী এডিস মশা নিধনে সিটি করপোরেশনের সিদ্ধান্তসমূহ এসব প্রতিষ্ঠানকে জানিয়ে দিয়ে তা প্রতিপালন করার জন্য চিঠি দিতে বলেন এবং পরবর্তী মিটিংয়ে প্রতিনিধি উপস্থিত থাকতে বলেন।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রী জানান, সিটি করপোরেশন একটি আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং এই আইন লঙ্ঘিত হলে যে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে। দেশ ও মানুষের স্বার্থের পরিপন্থি কিছু করলে যে কারো বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার অধিকার সিটি করপোরেশনের আছে। এডিস মশা নিধন এবং ডেঙ্গু সংক্রমণ প্রতিরোধে নেওয়া সিদ্ধান্তসমূহ কেউ না মানলে যে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন মন্ত্রী।