কঠোর বিধিনিষেধের দ্বিতীয় দিনেও তৎপর প্রশাসন
সারা দেশে চলছে সরকারঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধের দ্বিতীয় দিন। বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে মাঠে রয়েছে নিরাপত্তাবাহিনীসহ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
জেলায় জেলায় বিধিনিষেধ
বান্দরবান : সারা দেশের মতো পার্বত্য জেলা বান্দরবানে চলছে দ্বিতীয় দিনের মতো কঠোর বিধিনিষেধ। বিধিনিষেধ অমান্য করায় জেলার সাত উপজেলায় ১৮টি ভ্রাম্যমাণ আদালতের টিম অভিযান চালিয়ে ৩৮টি মামলা এবং ১১ হাজার ৭৫০ টাকা আদায় করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত আইন অমান্যকারীদের এ মামলা ও জরিমানা আদায় করা হয়।
এদিকে, লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে সকাল থেকে শহরের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পয়েন্টে সেনাবাহিনী ও পুলিশ টহল দিচ্ছে। মানুষকে সচেতন করতে অলিগলিতে রয়েছেন রোভার স্কাউটের সদস্যেরা।
একজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে বিধিনিষেধে সরকারি নির্দেশনা মানাতে পুরো জেলায় ১৮টি ভ্রাম্যমাণ আদালতের টিম কাজ করছে ।
এদিকে, বিধিনিষেধ অমান্য করে যারা ঘরের বাইরে আসছে এবং স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চলাচল করছে, তাদের বিভিন্ন ধরনের মামলার পাশাপাশি জরিমানা আদায় করছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. কায়েসুর রহমান বলেন, ‘আমরা সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে মাঠে কাজ করছি। যারা আইন অমান্য করে সড়কে আসছে, তাদের অনেককেই সর্তক করার পাশাপাশি জরিমানা করা হচ্ছে।
মো. কায়েসুর রহমান আরও বলেন, ‘সাধারণ জনগণ আরও সচেতন হলে আমরা এই করোনা মহামারি থেকে মুক্ত থাকব এবং নিরাপদে বসবাস করতে পারব।’
ফেনী : সরকার নির্দেশিত কঠোর বিধিনিষেধের (লকডাউন) দ্বিতীয় দিনে তৎপর রয়েছে ফেনী জেলা প্রশাসন। আজ শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে শহরের মহিপাল এলাকা পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ-উল হাসান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার ফেনীর উপপরিচালক ড. মো. মঞ্জুরুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সুজন চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. গোলাম জাকারিয়া এবং অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আলী আজগর।
জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ-উল হাসান জানান, আজ ফেনী সদরে ১০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ১০টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছেন। দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে সকালে ও বিকেলে আদালতগুলো পরিচালিত হবে। এরই মধ্যে সকালে পাঁচটি ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান শুরু হয়েছে।
এ ছাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা এবং সহকারী কমিশনারেরা (ভূমি) আরও ১০টি ভ্রাম্যমাণ আদালত দায়িত্বরত উপজেলায় পরিচালনা করছেন।
আজ সকালে মহিপাল এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সজল কুমার দাস। তিনি জানান, স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করায় ১২টি মামলা হয়েছে। এতে ১২ ব্যক্তিকে তিন হাজার ৪০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার ফেনীতে স্বাস্থ্যবিধি ও কঠোর নিষেধাজ্ঞা অমান্য করায় ৯৯ জনকে ৪৫ হাজার ৫৫০ টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, গতকাল দিনভর জেলা শহর ও উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পৃথকভাবে অভিযান পরিচালনা করেন ১৫ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
কুমিল্লা : জেলার দেবীদ্বারে কঠোর বিধিনিষেধের (লকডাউন) দ্বিতীয় দিনে আজ শুক্রবার ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ২৬ ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও পরিবহণকে ১১ হাজার ৪০০ টাকা জরিমানা করা হয়।
সকাল ৬টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও দেবীদ্বার উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের নেতৃত্বে এই অভিযান পরিচালিত হয়।
উপজেলা সদরসহ উপজেলার বিভিন্ন সড়কে অভিযান চালিয়ে সংক্রমণ রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল আইনে ২৬টি মামলায় মোট ১১ হাজার ৪০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চলাকালে আরও উপস্থিত ছিলেন ভূমি অফিসের অফিস সহায়ক রতন কুমার দেবনাথ, দেবীদ্বার থানার উপপরিদর্শক (এএসআই) ইকরাম হোসেন প্রমুখ।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ রোধে সারা দেশে কঠোর লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। লকডাউন কার্যকরে সকাল থেকে মাঠে কাজ করে যাচ্ছি। সরকারি আইন অমান্য করে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মাস্কবিহীন ঘর থেকে রাস্তায় বের হওয়া ব্যক্তিসহ যারা গণপরিবহণ, পিকআপ ভ্যান, মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশা বা রিকশা চালাচ্ছেন এবং দোকানপাট সও ব্যাবসাপ্রতিষ্ঠান খোলা রেখেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।’
নড়াইল : মহামারি করোনা প্রতিরোধে দেশব্যাপী চলছে সাত দিনের কঠোর বিধিনিষেধের (লকডাউন) দ্বিতীয় দিন আজ শুক্রবার। নড়াইলে বিধিনিষেধ কঠোরভাবে পালন করা হচ্ছে। পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর টহল চলছে।
জানা গেছে, সকাল থেকে বাস, ইজিবাইক, ভ্যানসহ যানবহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ব্যাবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয়, মাছবাজার ও কাঁচাবাজার খোলা থাকবে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি তল্লাশিও চালানো হচ্ছে। পুলিশ টহলের পাশাপাশি শহরে সেনাবাহিনীর টহল রয়েছে।
নড়াইল জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত যশোর সেনানিবাসের মেজর আতিক বলেন, ‘মহামারি করোনাকালে সরকার ও সেনাপ্রধানের নির্দেশে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আমরা কাজ করছি।’ মহামারি করোনার মধ্যে সরকারি নির্দেশ মেনে চলার জন্য তিনি সবাইকে অনুরোধ জানান।