কনস্টেবল সাইফুলের আত্মহত্যার কারণ খুঁজছে পুলিশ
স্বামী-স্ত্রী দুজনই পুলিশ সদস্য হিসেবে মুজিবনগর এবং মেহেরপুর সদরে কর্মরত ছিলেন। তাদের সুবিধার কথা চিন্তা করে কিছুদিনের মধ্যে তাকে স্ত্রীর কাছে মেহেরপুর সদরে পোস্টিং অর্ডার হওয়ার কথা ছিল। শুধু তাই নয়, নতুন বিয়ে হওয়ায় কর্তৃপক্ষ তাকে যথেষ্ট ছুটিও দিত। তাহলে পুলিশ সদস্য সাইফুল কেন নিজ রাইফেলের গুলিতে আত্মহত্যা করলেন, তা খুঁজছে পুলিশের তদন্তদল।
গত ২১ জুলাই নিজের সরকারি অস্ত্র মাথায় ঠেকিয়ে গুলি করে আত্মহত্যা করেছে মেহেরপুরের মুজিবনগর থানার রতনপুর পুলিশ ক্যাম্পে কর্মরত সাইফুল ইসলাম। কেন এভাবে নিজেকে শেষ করে ফেললেন পুলিশ সদস্য সাইফুল তাঁর কারণ খুঁজে পাচ্ছে না তাঁর সহকর্মী, স্ত্রীসহ পুলিশ।
নিহত কনস্টেবল সাইফুলের ঘনিষ্ট সূত্র জানায়, ৯৪ সালে জন্ম নেওয়া সাইফুলের বাড়ি কুষ্টিয়া কুমারখালী উপজেলার চাপড়া গ্রামে। তার বাবার নাম মোহাম্মদ আলী। চলতি বছরে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার জয়রামপুর গ্রামের ফজলুর সরকারের মেয়ে ফরিদা খাতুনের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। মেহেরপুরে দুজনেই চাকরি করতেন সেই সুবাদে দুজনের পরিচয় হয় এবং পারিবারিক আয়োজনে বিয়ে হয়। বয়সে স্বামী-স্ত্রী দুজনে এক বছরের ছোটবড় ছিলেন। দুজনেরই বর্তমান কর্মস্থল ছিল ২০ মিনিট দূরত্বের।
পুলিশ অফিস সূত্রে জানা গেছে, নতুন বিয়ে হওয়ায় সাইফুলের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ মাঝে মধ্যেই তাকে ছুটি দিত। সেইরকম ছুটি তাঁর স্ত্রীও ভোগ করতেন। দাম্পত্য জীবনও ছিল খুবই মধুর। তিনি ছুটি না পাওয়ায় মনোকষ্ট পেয়ে আত্মহত্যা করেছেন অনেকের এই সন্দেহকে সম্পূর্ণ অমূলক বলে দাবি করছেন সাইফুলের ঘনিষ্ঠ পুলিশ সহকর্মীরা।
গত ছয় মাসে সাইফুল ৫৪ দিন ছুটি ভোগ করেছেন। শুধু তাই নয়, দূরত্ব ঘোচাতে কর্তৃপক্ষ তাকে স্ত্রীর সঙ্গে মেহেরপুর সদরে বদলির অর্ডার দিয়েছিল। ছুটি বেশি ভোগ করায় এই ঈদে নিহত সাইফুল ছুটির কোনো আবেদনও করেননি।
ক্যাম্পে নাইট ডিউটি করার সময় মাস্কপরা অবস্থায় তিনি নিজের অস্ত্রের গুলিতে আত্মহত্যা করেন। তাহলে এমন সময় এমন কি হলো যে কারণে তিনি আত্মহত্যা করলেন? এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে সর্বমহলে। বিশেষ করে পুলিশ কর্তৃপক্ষ এই কারণ খুঁজতে শক্তিশালী তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন।
আত্মহত্যার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানের জন্য মেহেরপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়েছে।
তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামিরুল ইসলাম জানান, একজন তরুণ পুলিশ সদস্যের এমন মৃত্যু খুবই দুঃখজনক ও বেদনার। পুলিশ সুপার রাফিউল আলম স্যারের নির্দেশে এই আত্মহত্যার প্রকৃত কারণ খুঁজতে তাৎক্ষণিক তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। একাধিক বিষয় মাথায় নিয়ে ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটি কাজও শুরু করে দিয়েছে। আশা করা যায় দ্রুতই বেরিয়ে আসবে এমন মৃত্যুর মূল কারণ।’
নিহতের চাচা লিটন হোসেন জানান, বিয়ে করতে গিয়ে এবং কিছু জমি কিনতে গিয়ে সাইফুল অর্থনৈতিক সমস্যায় ছিলেন। কাউকে কিছু দিতে পারবে না বলে এবার ঈদে বাড়ি আসেনি সাইফুল। এসব বিষয় নিয়ে চরম মানসিক অস্থিরতায় ভুগতেন তিনি। নিজেকে ইদানীং খুব উদভ্রান্তের মতো রাখতেন। সব কথায় হতাশা প্রকাশ করতেন।
স্ত্রী ফরিদা খাতুন জানান, রাতেও তাঁর সঙ্গে মোবাইলে কথা হয়। হতাশার কথা বললে সান্ত্বনা দিই। সব সময় পরিবার পরিজন নিয়ে বেশি চিন্তা করতেন। তাই মানসিক বিকারগ্রস্ততার মধ্যে চলতেন সব সময়।