কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার সোলায়মানই ফ্যাকো সার্জন ডা. মোস্তফা সারোয়ার!
পাবনার পাশের জেলা রাজবাড়ীর প্রাণকেন্দ্রে আলিশান ভবনে অনুমোদনহীন চক্ষু হাসপাতাল খুলে ৫০০ টাকা ভিজিট নিয়ে রীতিমতো রোগী দেখছেন তিনি। তিনি একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও ফ্যাকো সার্জন।
প্রকৃত নাম মো. সোলায়মান হোসেন। পাবনা জেলার বেড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার থেকে নাম বদলে সরাসরি বনে গেছেন চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও ফ্যাকো সার্জন ডা. মো. মোস্তফা সরোয়ার। এভাবেই তিনি দীর্ঘদিন ধরে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছেন।
জানা গেছে মো. সোলায়মান হোসেনের এই প্রতারণার কাজে সহযোগিতা করছেন তার দ্বিতীয় স্ত্রী শিমুল মুন। তিনিও নিজেকে অপথালমোলজিস্ট হিসেবে পরিচয় দেন।
বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, পাবনার বেড়া থেকে সপ্তাহে তিন দিন (বুধ, বৃহস্পতি ও শুক্রবার) রাজবাড়ী গিয়ে মিথ্যা ডাক্তার পরিচয় দিয়ে চক্ষু রোগী দেখেন সোলায়মান হোসেন। আসলে তিনি পাবনা জেলার বেড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার পদে চাকরি করেন। ২০২০ সালে রাজবাড়ী শহরের বড়পুলে রাবেয়া টাওয়ারের তৃতীয় তলায় সরকারি কোনো অনুমোদন ছাড়াই গড়ে তোলেন আইভি আই কেয়ার অ্যান্ড ফ্যাকো সেন্টার নামে চক্ষু হাসপাতাল।
সেখানে নিজের নাম পালটে বনে যান চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও ফ্যাকো সার্জন ডা. মো. মোস্তফা সরোয়ার। এই নামেই তৈরি করেন ভিজিটিং কার্ড ও সাইনবোর্ড। ভিজিটিং কার্ডে তার উপাধি লেখা হয় সিয়াম সামী আই কেয়ার অ্যান্ড ফ্যাকো সেন্টারের কনসালটেন্ট। কার্ডে সেন্টারটির ঠিকানা না থাকলেও এমবিবিএস, ডিও (ডিইউ) এপিডি/স্পেশাল ট্রেনিং মাইক্রো সার্জারি, ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতাল, ঢাকা/ট্রেইন্ড ইন অরবিস (আমেরিকা) ডিগ্রির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
একইভাবে ক্লিনিকটির চেম্বারেও তার পরিচয় লিখে রাখা হয়েছে। চেম্বারের অপর প্রান্তে সাজিয়ে রাখা হয়েছে ৮-১০টি বেড। একই ভবনের পঞ্চম তলায় দ্বিতীয় স্ত্রী শিমুল মুনকে নিয়ে বসবাস করেন তিনি।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি রাজবাড়ীর এক সাংবাদিকের কাছে সোলায়মান হোসেন নিজেকে ডা. মো. মোস্তফা সরোয়ার নামে পরিচয় দেন। এ সময় তিনি ওই সাংবাদিকের সঙ্গে থাকা একজনের চোখের পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেন।
এ ব্যাপারে বেড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে সোলায়মান হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি রোগীদের সঙ্গে নিজের প্রতারণার কথা ও দোষ স্বীকার করে খবর প্রকাশ না করার অনুরোধ করেন। এ সময় তিনি এমন প্রতারণা পরবর্তী সময়ে আর কখনো করবেন না বলেও অঙ্গীকার করেন।
জানা যায়, সোলায়মান হোসেন নিজেকে যে নামে পরিচয় দিতেন সেই চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও ফ্যাকো সার্জন ডা. মো. মোস্তফা সরোয়ার টাঙ্গাইলের রোকেয়া আই কেয়ার অ্যান্ড ফ্যাকো সেন্টারের পরিচালক ও চিফ কনসালটেন্ট। তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, রাজবাড়ীর আইভি আই কেয়ার অ্যান্ড ফ্যাকো সেন্টারের সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ নেই। এখানে তিনি কোনোদিনই রোগী দেখেননি। তার নাম ভাঙিয়ে যদি কেউ প্রতারণা করেন তাহলে সেই প্রতারকের শাস্তি দাবি করেন তিনি।
পাবনা জেলার বেড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফাতেমাতুজ জান্নাত মোবাইল ফোনে বলেন, সোলায়মান হোসেন বেড়ায় উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন। এখানে তার ডিউটি তিনি ঠিকমতোই পালন করেন। এখানে তার স্ত্রী ও দুই ছেলেও রয়েছে। রাজবাড়ীতে তার দ্বিতীয় স্ত্রী ও চিকিৎসক সেজে প্রতারণার বিষয়টি আমার জানা ছিল না। বিষয়টির আমি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
পাবনার সিভিল সার্জন ডা. মনিসর চৌধুরী বলেন, এ বিষয়ে রাজবাড়ীর সিভিল সার্জনের সঙ্গে আলাপ করে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।