করোনার টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া শুরু
দেশে করোনার টিকার দ্বিতীয় ডোজ প্রদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে দুই মাস আগে টিকার প্রথম ডোজ গ্রহণকারীদের দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হচ্ছে। প্রথম দিনে দ্বিতীয় ডোজ পাবেন ৩১ হাজার ১৬০ জন। একইসঙ্গে টিকার প্রথম ডোজ দেওয়ার কার্যক্রমও চলছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, প্রথম ডোজ দেওয়ার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে দেশের সব জেলা-উপজেলায় স্বাস্থ্যকর্মীরা আজ সকাল থেকে একযোগে এই দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেওয়া শুরু করেছেন। কেউ প্রথম ডোজের টিকা নিয়ে থাকলে আট সপ্তাহ পর মোবাইলে এসএমএস পেলে নির্দিষ্ট কেন্দ্রে গিয়ে দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিতে টিকা কার্ডসহ যেতে হবে। কোনো কারণে মোবাইলে এসএমএস না পেলেও আট সপ্তাহ পূর্ণ হওয়ার পর নির্দিষ্ট কেন্দ্রে গিয়ে দ্বিতীয় ডোজের টিকা নেওয়া যাবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, দ্বিতীয় ডোজের জন্য গতকাল (বুধবার) থেকে পর্যায়ক্রমে এসএমএস পাঠানো হয়েছে প্রথম ডোজ নেওয়া সবার কাছে। প্রথম ডোজ নেওয়া কেউ যদি এসএমএস না পান তবে তিনি যে তারিখে প্রথম ডোজ নিয়েছিলেন, সেই তারিখ থেকে দুই মাস পর টিকা কার্ড নিয়ে আগের কেন্দ্রে গিয়ে দ্বিতীয় ডোজ নিতে পারবেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র আরও জানায়, দুই মাস আগে গত ৭ ফেব্রুয়ারি যারা টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন, তাঁদের ডাকা হয়েছে আজ। একদিনে দ্বিতীয় ডোজ পাবেন ৩১ হাজার ১৬০ জন। গত ২৭ ও ২৮ জানুয়ারি উদ্বোধনী কার্যক্রমের আওতায় কয়েকজনকে টিকা দেওয়া হয়। তাঁদের অনেকে গত চার-পাঁচ দিনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ অন্য কেন্দ্র থেকে দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন।
দ্বিতীয় ডোজ নিয়ে জনসাধারণের জন্য নির্দেশনা
টিকা গ্রহণ নিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলার সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে জনসাধারণের উদ্দেশে বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়-
১. বৃহস্পতিবার থেকে এসএমএস পাওয়া সাপেক্ষে দ্বিতীয় ডোজের ভ্যাকসিন নেওয়া যাবে।
২. যাঁরা যোগ্য হবেন তাঁদের মোবাইল ফোনে এসএমএস চলে যাবে, যাঁদের ভ্যাকসিন দেওয়ার পর দুই মাস অতিবাহিত হয়েছে, কিন্তু এসএমএস পাননি তাঁরা অবশ্যই টিকা কার্ড এবং টিকা কার্ডের ফটোকপি নিয়ে টিকা কেন্দ্রে আসবেন।
৩. দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার জন্য সবাইকে টিকা কার্ড এবং জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে আসতে হবে। কারও টিকা কার্ড হারিয়ে গেলে কিংবা কোনো কারণে নষ্ট হয়ে গেলে অনলাইন থেকে পুনরায় কার্ড ওঠানো যাবে।
৪. দুই মাস হওয়ার আগে দ্বিতীয় ডোজের টিকা নেওয়া যাবে না। তবে পরে নেওয়া যাবে (১২ সপ্তাহ পর্যন্ত)।
৫. রেজিস্ট্রেশন করা হজ যাত্রীদের বয়স ১৮ বছরের বেশি হলেই রেজিস্ট্রেশন করে ভ্যাকসিন নিতে পারবেন। (এমন হজযাত্রীর সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার। তাঁদের দ্রুত রেজিস্ট্রেশন করে ভ্যাকসিন নিতে হবে। সৌদি আরবের হজ কর্তৃপক্ষও জানিয়েছে, ভ্যাকসিন গ্রহণের প্রমাণপত্র ছাড়া এ বছর হজে অংশ নিতে দেওয়া হবে না)।
৬. প্রথম ডোজের টিকা দেওয়ার কর্মসূচি আগের মতোই এমনকি রমজান মাসেও অব্যাহত থাকবে। তাই প্রথম ডোজের টিকা নেওয়ার জন্য অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করে নির্ধারিত দিনে নির্ধারিত কেন্দ্রে গিয়ে টিকা নিতে হবে।
৭. পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন আছে। শেষ হওয়ার ভয়ে কেউ ভীত হবেন না, গুজবে বিশ্বাস করবেন না, রোজা রেখে টিকা নেওয়া যাবে।
৮. কেন্দ্র পরিবর্তন করে আপাতত দ্বিতীয় ডোজের টিকা নেওয়া যাবে না।
৯. টিকা কেন্দ্রে বাধ্যতামূলক মাস্ক পরে আসতে হবে এবং প্রত্যেক টিকাগ্রহণকারীকে অন্তত তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, টিকাদাতা এবং স্বেচ্ছাসেবীদের সহযোগিতা করলে গ্রহীতার কাজ দ্রুত এবং সহজ হবে।
এ ছাড়া স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাইরে গেলেই ঘরে ফেরার পর বা যেখানে সুবিধা আছে সেখানে সাবান-পানি দিয়ে ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। সঠিক তথ্যের প্রয়োজনে ৩৩৩, ৯৯৯ অথবা ১৬২৬৩ হেল্প লাইনে ফোন করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
গত ২৭ জানুয়ারি কুর্মিটোলা হাসপাতালে একজন নার্সকে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন দেওয়ার মাধ্যমে দেশে করোনাভাইরাসের টিকাদান কার্যক্রম শুরু হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে প্রয়োগ শুরু হয় ৭ ফেব্রুয়ারি। এ কার্যক্রমের আওতায় একজন ব্যক্তিকে দুই ডোজ টিকা নিতে হবে।