করোনার টিকা নিয়েছেন খালেদা জিয়ার বাসভবনের আরও ৫ জন
বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ছাড়াও তাঁর বাসভবনের আরও পাঁচজন আজ বুধবার শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে করোনার টিকা নিয়েছেন।
বিএনপির চেয়ারপারসন টিকা নিয়ে গুলশানের বাসায় ফেরার পরে তাঁর চিকিৎসক দলের সদস্য ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের একথা জানান।
ডা. জাহিদ হোসেন বলেন, করোনার টিকা যেটা আজকে এভেইলেবল সেটা বিএনপি চেয়ারপারসন নিয়েছেন। শুধু উনিই নেননি, উনার সাথে যারা কাজ করেন, উনাকে সহায়তা করেন, উনার বাসার উনিসহ ছয়জন আজকে টিকা নিয়েছেন। আর গুলশানের বাসার আরও কয়েকজন টিকা আগেই নিয়েছেন।
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার বিষয়ে ব্যক্তিগত চিকিৎসক বলেন, ‘যে কথাটি বলতে হয়, আপনারা সাংবাদিক ভাইয়েরা সবাই দেখেছেন, উনি হেঁটে হেঁটে আলিয়া মাদ্রাসার আদালতে গেছেন এবং তার পরবর্তী সময়ে উনি ২০২০ সালের ২৫ মার্চ যখন বের হলেন তখন হুইল চেয়ারে বাসায় এসেছেন। হুইল চেয়ারে করে তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে গেছেন এবং আবার এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে হুইল চেয়ারে করে তিনি বাসায় ফেরেন। আজকে আপনারা দেখলেন, হুইল চেয়ারে করে উনি বাসায় দোতলার কক্ষে গেলেন। অর্থাৎ এতেই বোঝা যায়, উনার শারীরিক অবস্থা কেমন। উনি তো এরকম ছিলেন না। দীর্ঘ কথা বলতে চাই না।
করোনাভাইরাসের টিকা নিতে খালেদা জিয়া গত ৯ জুলাই ‘সুরক্ষা’ ওয়েবসাইটে গিয়ে নিবন্ধন ফরম পূরণ করেন। টিকার কেন্দ্র হিসেবে নির্বাচন করেন শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালকে। এরপর টিকার জন্য এসএমএস পান খালেদা জিয়া। কিন্তু, সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় তাঁকে ঘরের বাইরে নেওয়াটা নিরাপদ মনে করেননি ব্যক্তিগত চিকিৎসকেরা। এজন্য খালেদা জিয়া যেন বাসায় টিকা নিতে পারেন সে চেষ্টা করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা। কিন্তু সেই চেষ্টা সফল হয়নি।
এর আগে গত ১১ এপ্রিল খালেদা জিয়ার শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। একইসঙ্গে বিএনপির চেয়ারপারসনের বাসভবন ‘ফিরোজা’র আরও আটজন ব্যক্তিগত কর্মীও করোনায় আক্রান্ত হন।
এরপর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এফ এম সিদ্দিকীর নেতৃত্বে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা শুরু হয়। এরপর ২৭ এপ্রিল খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরদিন ২৮ এপ্রিল খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য ১০ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। এর মধ্যে ৩ মে খালেদা জিয়ার শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় তাঁকে সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ৬ মে তিনি করোনামুক্ত হন। এরপরও তাঁর শারীরিক জটিলতা থাকায় তিনি হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।
দীর্ঘদিন চিকিৎসা শেষে গত ১৯ জুন এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে নিজ বাসায় ফেরেন খালেদা জিয়া। পরে করোনাভাইরাসের টিকা নেওয়ার জন্য নিবন্ধন করেন তিনি।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিশেষ আদালতের রায়ে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড নিয়ে কারাবন্দি হন খালেদা জিয়া। তারপর নাজিমউদ্দিন রোডের সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগারে শুরু হয় তাঁর কারাজীবন। একই বছরের ৩০ অক্টোবর রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা পাঁচ বছর বাড়িয়ে ১০ বছরের আদেশ দেন বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বেঞ্চ।
অন্যদিকে, ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত। রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে অবস্থিত ঢাকার ৫ নম্বর অস্থায়ী বিশেষ জজ ড. মো. আখতারুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে সাত বছরের কারাদণ্ড ছাড়াও খালেদা জিয়াকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানা অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত।
নাজিমউদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে এক বছরের বেশি সময় বন্দিজীবন কাটানোর পর চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে নিয়ে আসা হয় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) কেবিন ব্লকের প্রিজন সেলে।
গত বছর সারা বিশ্বে মহামারি করোনা ছড়িয়ে পড়লে শর্তসাপেক্ষে সরকার প্রধানের নির্বাহী আদেশে জামিন পান খালেদা জিয়া। প্রায় ২৫ মাস (কারাগার ও বিএসএমএমইউ'র প্রিজন সেল) কারাভোগের পর তিনি ২০২০ সালের ২৫ মার্চ মুক্ত হন। বিএসএমএমইউ প্রিজন সেল থেকে মুক্তির পর গুলশানে নিজের ভাড়া বাসা ‘ফিরোজা’য় অবস্থান করছেন সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী।