করোনার সংক্রমণরোধে জনসমাগম সীমিত করাসহ সরকারের ১৮ দফা নির্দেশনা
দেশে করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় আন্তঃজেলা বাস চলাচল সীমিত করা, রাত ১০টার পর ঘরের বাইরে থাকা নিয়ন্ত্রণ করা, বেশি সংক্রমিত এলাকায় জনসমাগম নিষিদ্ধ, হোটেল, রেস্তোরাঁয় ধারণক্ষমতার অর্ধেক প্রবেশসহ ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করেছে সরকার। এর আগে এসব বিষয়ে সুপারিশ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। আজ সোমবার দুপুরে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের নতুন ভবন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এ কথা জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
করোনা সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় দেশে বিভিন্ন ধরনের লকডাউন আসতে পারে বলেও জানান মন্ত্রী।
এদিকে আজ সোমবার প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে সরকারের পক্ষ থেকে ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে যা বলা হয়েছে, তা নিচে হুবহু দেওয়া হলো-
করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সরকার নিম্নরূপ সিদ্ধান্তসমূহ গ্রহণ করেছে:
ক) সকল ধরনের জনসমাগম (সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও অন্যান্য) সীমিত করতে হবে। উচ্চ সংক্রমণযুক্ত এলাকায় সকল ধরনের জনসমাগম নিষিদ্ধ করা হলো। বিয়ে, জন্মদিনসহ যেকোনো সামাজিক অনুষ্ঠান উপলক্ষে জনসমাগম নিরুৎসাহিত করতে হবে;
খ) মসজিদসহ সকল ধর্মীয় উপাসনালয়ে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে;
গ) পর্যটন/ বিনোদন কেন্দ্র/ সিনেমা হল/ থিয়েটার হলে জনসমাগম সীমিত করতে হবে এবং সকল ধরনের মেলা আয়োজন নিরুৎসাহিত করতে হবে;
ঘ) গণপরিবহণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে এবং ধারণ ক্ষমতার ৫০ ভাগের অধিক যাত্রী পরিবহণ করা যাবে না;
ঙ) সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাতে আন্তঃজেলা যান চলাচল সীমিত করতে হবে; প্রয়োজনে বন্ধ রাখতে হবে;
চ) বিদেশ হতে আগত যাত্রীদের ১৪ দিন পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক (হোটেলে নিজ খরচে) কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে হবে;
ছ) নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী খোলা/ উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি পরিপালনপূর্বক ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যবস্থা করতে হবে; ওষুধের দোকানে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে;
জ) স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানসমূহে মাস্ক পরিধানসহ যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে;
ঝ) শপিং মলে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েরই যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে;
ঞ) সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাদ্রাসা, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়) ও কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে;
ট) অপ্রয়োজনীয় ঘোরাফেরা/ আড্ডা বন্ধ করতে হবে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া রাত ১০টার পর বাইরে বের হওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে হবে;
ঠ) প্রয়োজনে বাইরে গেলে মাস্ক পরিধানসহ সকল ধরনের স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে; মাস্ক পরিধান না করলে কিংবা স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘিত হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে;
ড) করোনায় আক্রান্ত/ করোনার লক্ষণযুক্ত ব্যক্তির আইসোলেশন নিশ্চিত করতে হবে। করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসা অন্যান্যদেরও কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে হবে।
ঢ) জরুরি সেবায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান ছাড়া সকল সরকারি-বেসরকারি অফিস/ প্রতিষ্ঠান/ শিল্প কারখানাসমূহ ৫০ ভাগ জনবল দ্বারা পরিচালনা করতে হবে। গর্ভবতী/ অসুস্থ/ বয়স ৫৫-ঊর্ধ্ব কর্মকর্তা/ কর্মচারীর বাড়িতে অবস্থান করে কর্মসম্পাদনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে;
ণ) সভা, সেমিনার, প্রশিক্ষণ, কর্মশালা যথাসম্ভব অনলাইনে আয়োজনের ব্যবস্থা করতে হবে;
ত) সশরীরে উপস্থিত হতে হয় এমন যেকোনো ধরনের গণপরীক্ষার ক্ষেত্রে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে;
থ) হোটেল-রেস্তোরাঁসমূহে ধারণ ক্ষমতার ৫০ ভাগের অধিক মানুষের প্রবেশ বারিত করতে হবে;
দ) কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ এবং অবস্থানকালীন সর্বদা বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরিধানসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, উপর্যুক্ত সিদ্ধান্তসমূহ অবিলম্বে সারা দেশে কার্যকর হবে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত আপাতত দুই সপ্তাহ পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ/দপ্তর/সংস্থা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।