করোনায় মৃত স্বামীকে নিয়ে রাতভর একা শ্মশানে, শেষে মাটিচাপা
লাশ ফেলে সবাই চলে গেলেও যেতে পারেননি স্ত্রী। শ্মশানের পাশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বারান্দায় স্বামীর লাশ নিয়ে সৎকারের উদ্দেশ্যে একাই পার করেন পুরো রাত। মধ্যরাত থেকে সকাল অবধি অপেক্ষার পরও মরদেহ সৎকারে শ্মশান কমিটি বা নিজ আত্মীয়স্বজনের কেউ এগিয়ে আসেননি। পরে কয়েকজন মুসলিম ব্যক্তির সহায়তায় ওই মরদেহ মাটি চাপা দেন তিনি।
ঘটনাটি ঘটেছে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার পৌর শ্মশানে।
অ্যাম্বুলেন্সে মরদেহ যখন শ্মশানে পৌঁছায় তখন মধ্যরাত। শ্মশানের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা নিজ নিজ বাড়িতে। তারা তালার চাবি দিলেও শ্মশানে আসেননি কেউ। কারণ, মৃত ব্যক্তি ছিলেন করোনায় আক্রান্ত। তাই লোকজনের অভাবে শ্মশানে লাশটি নামানো সম্ভব হয়নি। পরে লাশ নামিয়ে ফেরত যায় অ্যাম্বুলেন্সও। ফেরত যায় সঙ্গে থাকা অন্যরাও। শ্মশানের পাশে গোপালপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বারান্দায় স্বামীর লাশ নিয়ে সৎকারের জন্য একাই পার করেন পুরো রাত।
এলাকাবাসী জানায়, গতকাল শনিবার রাতে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের হরিতলা এলাকার প্রফুল্ল কর্মকার (৭০)। রাতেই অ্যাম্বুলেন্স করে মিরপুর পৌর শ্মশানে তাঁর লাশ নিয়ে যান স্ত্রী কল্পনা কর্মকার ও কয়েকজন স্বজন। সে সময় ওই শ্মশানের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা মৃত ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় শ্মশান প্রাঙ্গণে আসেননি। মরদেহ সৎকারেও অনীহা প্রকাশ করেন তারা।
এ অবস্থায় অ্যাম্বুলেন্সচালক মরদেহ নামিয়ে রেখে ফেরত যান। স্বজনরাও চলে যান বাড়িতে। মরদেহ নিয়ে একাকী বিপদে পড়েন স্ত্রী কল্পনা। কোনো উপায় না পেয়ে তিনি স্বামীর মরদেহ নিয়ে পাশের বিদ্যালয়ের বারান্দায় অবস্থান নেন। স্বামীর পাশে বসে পার করেন পুরো রাত। সকালে শ্মশান কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলেও মরদেহ সৎকারে কোনো উদ্যোগ নেয়নি তারা।
একপর্যায়ে বিষয়টি অবহিত করেন স্থানীয় প্রশাসনকে। পরে মুসলিম সম্প্রদায়ের কয়েকজন মিলে ওই শ্মশানের পাশেই মাটিচাপা দেন প্রফুল্ল কর্মকারের লাশ।
প্রফুল্ল কর্মকারের স্ত্রী কল্পনার সঙ্গে যোগাযোগ করেও অসুস্থতার কারণে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
স্থানীয় কাউন্সিলর জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রফুল্ল কর্মকারের পরিবারের অন্য সদস্যরাও করোনায় আক্রান্ত। সে কারণে তাঁর পরিবারের সদস্যরা মরদেহ সৎকার করতে পারেননি। তবে হিন্দু সম্প্রদায়েরও কেউ মরদেহটির সৎকারে এগিয়ে আসেনি। পরে সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিষয়টি জানালে তিনি স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজনের সহায়তায় তাঁকে সমাহিত করার ব্যবস্থা করেন।’
কাউন্সিলর আরও জানান, প্রফুল্ল কর্মকার গত এক সপ্তাহ ধরে মিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তাঁর শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে রাতে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী কল্পনা। মৃত্যুর পর মরদেহটি স্ত্রী বাড়ি নিতে চাইলেও বাড়িতে নেওয়ার অনুমতি মিলেনি।
মিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লিংকন বিশ্বাস জানান, বিষয়টি জানার পর পরই তিনি পৌর মেয়র ও স্থানীয় কাউন্সিলরকে অবহিত করেন। তারা স্থানীয় লোকজন দিয়ে সমাহিত করার কাজটি সম্পন্ন করেছেন।