কাঁচা পাটের চাহিদা ও দাম বেড়েছে, স্বস্তিতে রপ্তানিকারকরা
এক সময় দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম পণ্য ছিল কাঁচা পাট। এ জন্য কাঁচা পাটের নাম হয়েছিল সোনালি আঁশ। করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে রপ্তানি মন্দা হলেও এ বছর কাঁচা পাট রপ্তানি বেড়েছে। ফলে স্বস্তি ফিরেছে পাট রপ্তানিকারকদের মধ্যে।
পাট অধিদপ্তর সূত্র মতে, ২০২১-২২ অর্থবছরের চেয়ে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের অক্টোবর মাস পর্যন্ত ১০ হাজার বেল পাট রপ্তানি বেশি হয়েছে; যা টাকার হিসাবে ১১৩ কোটি বেশি।
কাঁচা পাট রপ্তানি হওয়া শীর্ষ দেশ ভারতে এক লাখ ৫৫ হাজার ১৭৮ বেল, বৈদেশিক মুদ্রা এসেছে ২১৭ দশমিক ৮ লাখ মার্কিন ডলার। দ্বিতীয় স্থানে পাকিস্তানে ৭৯ হাজার ২২১ বেল, যার বৈদেশিক মুদ্রা এসেছে ১১০ দশমিক ৮১ মার্কিন ডলার।
এ ছাড়া চীন, নেপাল, ব্রাজিল, ইউকে, ভিয়েতনাম, অস্ট্রিয়া, ইউএসএ, স্পেন, জার্মানি, মেক্সিকো, ফ্রান্স, মালয়েশিয়া, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, তুর্কি, ইন্দোনেশিয়ায় মোট ২ লাখ ৮৩ হাজার বেল কাঁচা পাট রপ্তানি করে ৩৯৩ দশমিক ০৪ মার্কিন ডলার আয় হয়েছে; যা বাংলাদেশি টাকায় ৩৭৩ কোটি ২৯ লাখ। একই সময় গত ২০২১-২০২২ অর্থবছরের অক্টোবর মাস পর্যন্ত এক লাখ ১৪ হাজার ১৫৬ বেল রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছিল ৩০৯ দশমিক ৮৩ লাখ ইউএস ডলার।
বিদেশে পরিবেশবান্ধব আন্দোলনের ফলে কাঁচা পাটের চাহিদা ও মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় এ বছর পাট রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হচ্ছে ।
খুলনার দৌলতপুরের প্রবীণ পাট রপ্তানিকারক মণ্ডল জুট মিলের প্রধান নির্বাহী রবিউল আহসান জানান, বিশ্ব পরিবেশ নিয়ে সচেতন হওয়ায় পরিবেশবান্ধব হিসেবে পাটের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। এখন পাট পণ্যের চেয়ে কাঁচা পাট নিয়ে তারা নিজেরাই পণ্য তৈরি করছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রও পরীক্ষামূলকভাবে পাট দিয়ে ব্যাগ তৈরি করছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জাহাজভাড়া অনেক বেড়েছে। এই ভাড়া কমে গেলে পাট আবারও আগের মতো অন্যতম রপ্তানি পণ্য হিসেবে স্থান করে নিবে।
পাট রপ্তানিকারক আকঞ্জী ব্রাদার্স এর কর্নধার হারুন আকুঞ্জী জানান, মাঝে পাট খাতে ব্যাংক সুবিধা দেওয়ার জন্য কিছু ব্রিফকেস ব্যবসায়ী পাট রপ্তানিকারক হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে সেসব অসাধু ব্যবসায়ীরা ঝড়ে গিয়ে প্রকৃত ব্যবসায়ীরা টিকে আছে। যে হারে পাটের চাহিদা বাড়ছে, তাতে পাট ব্যবসা ঘুরে দাঁড়াবে। আর দেশীয় পাটকল মালিকরা প্রভাব বিস্তার করে ইতোপূর্বে কাঁচাপাট রপ্তানি বন্ধ করায়, দেশের বাজার নষ্ট হয়েছে।
বাংলাদেশ জুট এসোসিয়েশন এর প্রেসিডেন্ট শেখ সৈয়দ আলী জানান, পাট রপ্তানি মূলত নারায়ণগঞ্জ ও খুলনা-দৌলতপুর কেন্দ্রিক। এরশাদ সরকারের আমলে এক দফা আর এই সরকারের আমলে দুই দফা পাট রপ্তানি বন্ধ করার কারণে তাদের বিশ্ব বাজার নষ্ট হয়েছে। তবে সারা বিশ্ব প্লাস্টিক ব্যাগ বর্জন করায় পাটের সোনালী অতীত ফিরে আসা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
পাট অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আজিজুল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে জানান, গত এক বছরের মধ্যে দশ হাজার বেল পাট রপ্তানি বেড়েছে, যা মন্দার বাজারে ইতিবাচক। শুধু রপ্তানি বৃদ্ধিই হয়নি, বিশ্ব বাজারে পাটের চাহিদার সাথে দামও বেড়েছে।