কান্নায় ভেঙে পড়লেন সিনহা হত্যা মামলার আসামিরা
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার তৃতীয় দফা সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। আজ বুধবার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে কঠোর নিরাপত্তায় আসামিদের প্রিজনভ্যানে তোলার সময় স্বজন ও আসামিদের কান্নায় আদালত চত্বর ভারি হয়ে ওঠে। চতুর্থ দফায় সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ২৮ ও ২৯ সেপ্টেম্বর নির্ধারণ করেছেন আদালত।
আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে এ সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। এর আগে মামলার সব আসামিকে কঠোর পুলিশি নিরাপত্তায় আদালতে আনা হয়।
দিনব্যাপী মামলার অন্যতম সাক্ষী সেনা কর্মকর্তা সার্জেন্ট আয়ুব আলী, কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. শাহীন আবদুর রহমান ও টেকনাফ উপজেলার মোক্তার আহমদের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন করা হয়। এ নিয়ে এই পর্যন্ত ১৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করা হলো।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) ফরিদুল আলম জানান, আজ দিনব্যাপী তিনজন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ১৪ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। পরে আদালত চলতি মাসের ২৮ ও ২৯ তারিখে পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিনধার্য করেন।
পিপি জানান, আসামিপক্ষের আইনজীবী বিচারকে বিলম্বিত করতে আদালতে বার বার বিভিন্ন অজুহাতে দরখাস্ত দিয়ে যাচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে আজ আরও একটি দরখাস্ত দেন। কিন্তু দেশের একটি বড় সংস্থার গোপন নথি চাওয়ায় আদালত দরখাস্তটি নাকচ করে দেন।
এর আগে প্রথম দফায় গত ২৩ থেকে ২৫ আগস্ট টানা তিন দিন মামলার ১ নম্বর সাক্ষী ও বাদী শারমিন সাহরিয়া ফেরদৌস ও ২ নম্বর সাক্ষী সাহেদুল ইসলাম সিফাতের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়। একইভাবে গত ৫ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর টানা চার দিন দ্বিতীয় দফায় সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করেন আদালত। আজ তৃতীয় দফার শেষ দিন পর্যন্ত ১৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হলো।
তৃতীয় দফার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আবার কঠোর নিরাপত্তায় আসামিদের প্রিজনভ্যানে তোলা হয়। এ সময় আসামিদের স্বজনরাও পুলিশের সঙ্গে আদালত চত্বরে দাঁড়িয়েছিলেন। তারা কাঁদতে কাঁদতে একেক আসামিকে উদ্দেশ করে ডাকতে থাকেন। আসামিরা স্বজনদের কাঁদতে বারণ করে প্রিজনভ্যানের ভেতরে গিয়ে নিজেরাই কান্নায় ভেঙে পড়েন। প্রিজনভ্যানটি চলতে শুরু করলে স্বজনরা কাঁদতে কাঁদতে হাত নেড়ে আসামিদের বিদায় জানান। এ সময় প্রিজনভ্যানের ভেতর প্রায় সব আসামিকেই কাঁদতে দেখা যায়।
গত বছরের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।
এ ঘটনায় গত বছর ৫ আগস্ট সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বাদী হয়ে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ নয় পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয় লিয়াকত আলীকে। আদালত মামলার তদন্তভার দেন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র্যাব)। ঘটনার ছয় দিন পর ওসি প্রদীপ ও পরিদর্শক লিয়াকতসহ সাত পুলিশ সদস্য আত্মসমপর্ণ করেন।
হত্যার পরপর পুলিশ বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় একটি এবং রামু থানায় আরেকটি মামলা করে। পরে র্যাব পুলিশের করা মামলার তিন সাক্ষী এবং শামলাপুর চেকপোস্টে দায়িত্বরত আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ানের (এপিবিএন) তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। এরপর গ্রেপ্তার করা হয় টেকনাফ থানা পুলিশের সাবেক কনস্টেবল রুবেল শর্মাকে। সর্বশেষ গত ২৪ জুন আদালতে আত্মসমর্পণ করেন টেকনাফ থানার সাবেক সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) সাগর দেব।
গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর র্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়ানের তৎকালীন দায়িত্বরত সহকারী পুলিশ সুপার খায়রুল ইসলাম ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।
গত ২৭ জুন আদালত ১৫ জন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এতে সাক্ষী করা হয়েছে ৮৩ জনকে।