কুমিল্লায় নিখোঁজ তরুণদের সূত্র ধরেই কক্সবাজার থেকে ২ জঙ্গি গ্রেপ্তার
গত বছরের ২৩ আগস্ট কুমিল্লা সদর থেকে ৮ তরুণ নিখোঁজ হয়। ওই ঘটনায় ২৫ আগস্ট কুমিল্লার কোতয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়। পরে নিখোঁজদের উদ্ধারে অভিযান শুরু করে র্যাব। ওই তরুণের মধ্য থেকে পালিয়ে আসা নিলয় নামের একজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে র্যাব। নিলয়ের দেওয়া তথ্যে অভিযান চালিয়ে গত ৫ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ হওয়া রিফাতসহ নতুন জঙ্গি সংগঠনের সাত জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। যাদের জিজ্ঞাসাবাদে নতুন জঙ্গি সংগঠনের কার্যক্রম সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়। যার নাম জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া।
গতকাল সোমবার (২৩ জানুয়ারি) নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র শুরা সদস্য ও সামরিক শাখার প্রধান এবং তার সহযোগী বোমা বিশেষজ্ঞকে কক্সবাজারের কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
আজ মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) রাজধানীর কারওয়ান বাজারের র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন সূরা সদস্য ও সামরিক শাখার প্রধানসহ মাসুকুর রহমান ওরফে রনবীর মাসুদ (৪৪) ও বোমা বিশেষজ্ঞ আবুল বাশার মৃধা ওরফে আলম (৪৪)। গ্রেপ্তারের সময় একটি বিদেশি পিস্তল, তিনটি পিস্তলের ম্যাগজিন, ১০ রাউন্ড গুলি, দুটি একনলা বন্দুক, অস্ত্রবিষয়ক কিছু সরঞ্জাম, একটি মোবাইল ও নগদ আড়াই লাখ টাকা জব্দ করা হয়। এ ছাড়া পার্বত্য অঞ্চলে সামরিক প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের গুরুত্বপূর্ণ ও চাঞ্চল্যকর ভিডিও কন্টেন্ট উদ্ধার করা হয়।
খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘গত সেপ্টেম্বর আজ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি অভিযান চালিয়ে কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ হওয়া ৮ জন তরুণের মধ্যে ৪ জনসহ জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র ৩৮ জন বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ও সক্রিয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ছাড়া ২০২১ সাল থেকে এ জঙ্গি সংগঠনকে সহায়তা প্রদান এবং সামরিক প্রশিক্ষণের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অপরাধে পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কেএনএফের ১৪ জন নেতা ও সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।’
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘গ্রেপ্তার হওয়া মাসুকুর রহমান ওরফে রনবীর মাসুদ ২০০৭ সালের আগে পোস্টঅফিসে চাকরি করতেন। পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে ডাকাতি কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। পরবর্তীতে ডাকাতি মামলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে গ্রেপ্তার হয়ে কারাভোগ করেন। কারাগারে থাকার সময় জঙ্গিদের সঙ্গে তার সাক্ষাত হয়। একপর্যায়ে তিনি জেএমবির আদর্শে অনুপ্রাণিত হন। জেল থেকে বের হয়ে তিনি বিভিন্ন সময়ে কারাগারে থাকা জেএমবি সদস্য ও তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতেন।’
খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘২০১৭ সালে জামাতুল আনসারের শূরা সদস্য এবং অর্থ ও মিডিয়া শাখার প্রধান রাকিবের সঙ্গে পরিচয় হয় মাসুকুর রহমান ওরফে রনবীর মাসুদের। পরে তিনি প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য হিসেবে জামাতুল আনসারে যোগদান করে। এছাড়া তিনি সিলেট অঞ্চলে সংগঠনের দাওয়াতি ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রমসহ সামরিক শাখার সদস্য নির্বাচন কার্যক্রম তত্বাবধায়ন করতেন। প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে মাসুদ সংগঠনের সামরিক শাখার বিভিন্ন নীতি নির্ধারণী বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করতেন।’
খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, ‘গ্রেপ্তার হওয়া বাশার হাটহাজারীর একটি মাদ্রাসা থেকে পড়াশোনা করে আরেকটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন। তার সাংগঠনিক নাম আলম। সারা দেশ থেকে নিখোঁজ ৫৫ জনের তালিকায় আবুল বাশারের নাম রয়েছে। আবুল বাশার মৃধা দীর্ঘদিন নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হুজি’র সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি হুজি সংগঠনে থাকাকালীন সময়ে ঝালকাঠির নলসিটি এলাকায় সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমের জন্য নাশকতার মামলায় ২০১৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন বছর কারাভোগ করে। ২০১৬ থেকে ১৭ সালের দিকে জামাতুল আনসারের আমীর মাহমুদের মাধ্যমে জামাতুল আনসারে যোগ দেয়। পাহাড়ে প্রশিক্ষণের জন্য ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে গৃহত্যাগ করে এবং দুই মাস সমতলের বিভিন্ন জায়গায় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে তিনি রনবীর ও রাকিবের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য পার্বত্য অঞ্চলে গমন করে। তিনি আইইডিসহ বিভিন্ন ধরণের বোমা তৈরিতে দক্ষ।