কুমিল্লায় ‘যৌতুক না পেয়ে’ স্ত্রীর মাথা ন্যাড়া করলেন স্বামী
কুমিল্লার লালমাই উপজেলায় যৌতুকের টাকা না পেয়ে স্ত্রীকে নির্যাতনের পর মাথা ন্যাড়া করে দিয়েছেন মো. হাসান (৪০) নামের এক ব্যক্তি। এ ঘটনায় নির্যাতিত ওই গৃহবধূ বাদী হয়ে তাঁর স্বামী ও দেবরের বিরুদ্ধে লালমাই থানায় মামলা করেছেন। পরে আজ শনিবার ভোরে লালমাই থানা পুলিশ বিশেষ অভিযান চালিয়ে ওই নারীর স্বামী হাসানকে গ্রেপ্তার করে।
নির্যাতিত নারী, এলাকাবাসী ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৮ থেকে ১৯ বছর আগে উপজেলার ভুলইন দক্ষিণ ইউনিয়নের মো. হাসানের সঙ্গে ওই নারীর বিয়ে হয়। হাসান পেশায় একজন পোল্ট্রি ব্যবসায়ী। তাঁদের পরিবারে এক ছেলে (১১) ও এক মেয়ে (৫) সন্তান রয়েছে। বিয়ের পর হাসান শ্বশুরবাড়ি থেকে একাধিকবার আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি তিনি ব্যাবসার জন্য শ্বশুরবাড়ি থেকে পাঁচ লাখ টাকা এনে দিতে স্ত্রীর ওপর চাপ তৈরি করেন। কিন্তু যৌতুকের টাকা এনে দিতে অসম্মতি জানানোর কারণে গত ১৯ জুন বিকেলে স্বামী হাসান ও দেবর হোসাইন ক্ষুব্ধ হয়ে ওই গৃহবধূকে টয়লেট পরিষ্কারে ব্যবহৃত ব্রাশ দিয়ে শারীরিক নির্যাতন শেষে মাথা ন্যাড়া করে দেন। পরে গত ২৪ জুন বিকেলে দ্বিতীয় দফায় নির্যাতন করায় বিষয়টি জানাজানি হয়।
এরপর গত ৩০ জুন বুধবার দুপুরে মৌখিক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ভুলইন দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান একরামুল হক নিজ কার্যালয়ে উভয়পক্ষের উপস্থিতিতে বিষয়টি সমাধান করতে সালিশ বৈঠকের আয়োজন করেন। হাসান সংসার করতে না চাওয়ায় সেই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, স্বামী তাঁর স্ত্রীকে দুই লাখ টাকা দেবেন এবং স্ত্রী ডিভোর্স দেবেন। কিন্তু, নির্যাতন ও মাথা ন্যাড়া করার ঘটনায় বিচার না পাওয়ায় ওই নারী সেই সিদ্ধান্ত মানেননি।
পরে গতকাল শুক্রবার বিকেলে মাকে সঙ্গে নিয়ে ওই গৃহবধূ লালমাই থানার নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী সার্ভিস ডেস্কে কর্মরত সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) হ্লাচিং মারমার সহায়তা চান। তখনই বিষয়টি লালমাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) নজরে আসে। তিনি ওই গৃহবধূর কাছ থেকে ঘটনার বিস্তারিত শোনেন এবং প্রাথমিক তদন্তে সত্যতা পেয়ে লিখিত অভিযোগ ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১ (গ) ৩০ ধারায় এফআইআর (নম্বর ০৫, তারিখ ০৩/০৭/২১) হিসেবে গ্রহণ করেন।
পরে আজ শনিবার ভোরে লালমাই থানাধীন ভুশ্চি বাজার পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে ওই গৃহবধূর স্বামী মো. হাসানকে গ্রেপ্তার করেন।
ওই গৃহবধূ বলেন, ‘ভুলইন দক্ষিণের চেয়ারম্যান সালিশ বৈঠক করে দুই লাখ টাকায় ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। কিন্তু শারীরিক নির্যাতন ও মাথা ন্যাড়া করার বিচার না পাওয়ায় আমি সেই সিদ্ধান্ত মানিনি। তাই থানায় মামলা করেছি।’ তাঁর স্বামীকে গ্রেপ্তার করায় তিনি পুলিশের প্রশংসা করেন।
ভুলইন দক্ষিণের ইউপি চেয়ারম্যান একরামুল হক বলেন, ‘উভয়পক্ষের সালিশদারদের উপস্থিতিতে বিষয়টি সমাধান করে দিয়েছি। স্বামী তাঁর স্ত্রীকে দুই লাখ টাকা পরিশোধ করবেন এবং স্ত্রী স্বামীকে ডিভোর্স দেবেন। উভয়পক্ষ এই সমাধানে সন্তোষ হয়েছিল। স্বামী সমাধান মেনে ৪০ হাজার টাকা আমার কাছে জমাও রেখেছেন। বাকি টাকা আগামী মাসে পরিশোধ করার কথা। কিন্তু স্ত্রী কেন মামলা করলেন এ বিষয়টি জানি না।’
লালমাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আইয়ুব বলেন, ‘গৃহবধূকে নির্যাতন ও মাথা ন্যাড়া করার বর্বর ঘটনায় পাষণ্ড স্বামীকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।’