কুষ্টিয়ায় করোনা ওয়ার্ডে ২৪ ঘণ্টায় ৭ জনের মৃত্যু, চলছে ‘কঠোর লকডাউন’
কুষ্টিয়ায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে আজ সোমবার সকাল পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় তাঁদের মৃত্যু হয়। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
জেলা প্রশাসন আরও জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় কুষ্টিয়ায় ২২৬ জনের নমুনা পরীক্ষায় নতুন করে ৮৩ জনের করোনা শনাক্ত করা হয়েছে। শনাক্তের হার ৩৬ দশমিক ৭৩ শতাংশ।
এদিকে, কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তিনটি ওয়ার্ড রোগীতে টইটম্বুর। শয্যা না পেয়ে মেঝেতে ঠাঁই হয়েছে অনেক রোগীর। হাসপাতাল থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, তিনটি ওয়ার্ডে করোনার চিকিৎসার জন্য শয্যার সংখ্যা ১০০টি। সেখানে ভর্তি আছে ১২২ জন। তাদের মধ্যে করোনা পজিটিভ রোগী ৯৫ জন। বাকি ২৭ জন করোনার উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন। এরই মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছে ১৪ জন রোগী।
এদিকে, করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা অর্ধেক রোগীকে ২৪ ঘণ্টা অক্সিজেন সাপোর্ট দিতে হচ্ছে। বিশেষ করে রাতের বেলা রোগীদের অক্সিজেন সাপোর্টের দরকার হচ্ছে বেশি। হাসপাতালে ৩৪৭টি অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে। কিন্তু প্রতিদিন গড়ে ১২০টি সিলিন্ডার রিফিল করতে হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে কয়েকদিনের মধ্যে অক্সিজেন ঘাটতি দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, করোনা রোগী ভর্তির হার বেড়ে যাওয়ায় কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালকে কোভিড ডেডিকেটেড করতে, পর্যাপ্ত পরিমাণ চিকিৎসক ও ওষুধ সরঞ্জামাদি দিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবদুল মোমেন বলেন, ‘রোগী হু হু করে বাড়ছে—এটি অশনি সংকেত। রোগীদের সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে। আজ সোমবার কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালকে করোনা ডেডিকেটেট ঘোষণা করা হতে পারে। উপজেলা থেকে ১০ জন চিকিৎসককে জেনারেল হাসপাতালে আনা হচ্ছে। ভর্তি থাকা অন্য রোগীদের শহরের দুটি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হবে।’
কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ডা. আনোয়ারুল ইসলাম জানান, পুরো জেলাজুড়ে গ্রামে গ্রামে করোনা ছড়িয়ে পড়েছে। যাঁরা মারা যাচ্ছেন, তাঁদের অর্ধেকই গ্রামের বাসিন্দা। তাঁরা আগে থেকেই বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত। করোনা ছড়ানোর প্রকৃতি দেখে মনে হচ্ছে, এটা ডেল্টা (ভারতীয়) ভ্যারিয়্যান্ট। ভাইরাসটি মোকাবিলায় সবাইকে ঘরে থাকার পরামর্শ দেন তিনি।
এদিকে, কুষ্টিয়ায় অস্বাভাবিক হারে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় গতকাল রোববার দিবাগত রাত ১২টা থেকে সাতদিনের ‘কঠোর লকডাউন’ ঘোষণা করে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছে জেলা প্রশাসন। জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির ভার্চুয়াল সভা শেষে রাত ৮টায় এই গণবিজ্ঞপ্তি দেন জেলা প্রশাসক মো. সাইদুল ইসলাম।
গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রোববার রাত ১২টা থেকে ২৭ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত জেলার সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কল-কারখানা, শপিংমল, দোকান, রেস্টুরেন্ট, চায়ের দোকান, পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে। তবে কাঁচাবাজার ও মুদির দোকান সকাল ৭টা থেকে ১২টা পর্যন্ত স্বাস্ব্যবিধি মেনে খোলা রাখা যাবে। বিধিনিষেধ চলার সময়ে কুষ্টিয়া জেলার অভ্যন্তরে আন্তজেলা ও দূরপাল্লার সব ধরনের গণপরিবহণ, ইজিবাইকসহ সব যান্ত্রিক যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। বন্ধ থাকবে গরুর হাটসহ জেলার সব সাপ্তাহিক হাট-বাজার।
এর আগে জেলায় করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় কুষ্টিয়া পৌর এলাকায় সাতদিন করে দুইদফা ও মিরপুর পৌরসভা এলাকায় সাতদিনের কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে প্রশাসন।