কুষ্টিয়ায় প্রস্তুত দেড় লক্ষাধিক গরু-ছাগল, বিক্রি নিয়ে শঙ্কায় খামারীরা
আসছে কোরবানির ঈদ। আর এই ঈদকে ঘিরে ব্যস্ত সময় পার করছেন সীমান্তবর্তী জেলা কুষ্টিয়ার খামারীরা। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে এই জেলায় যে পরিমাণ গরু ও ছাগল প্রস্তুত করা হয় তা স্থানীয় চাহিদা পূরণের পাশাপশি দেশের চাহিদার বড় একটি অংশ পূরণ হয়ে থাকে।
এদিকে, করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাবে সারা দেশেই একটা অস্থিরতা বিরাজ করছে। তাই ঈদ যতই এগিয়ে আসছে কোরবানির পশু বিক্রি করা এবং লোকশান নিয়ে ততই শঙ্কিত হচ্ছে এখানকার খামারীরা।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ঝাউদিয়া ইউনিয়নের হাতিয়া গ্রামের মৃত আরজ আলী বিশ্বাসের ছেলে আমিরুল মেম্বার। কোরবানির জন্য প্রস্তুত করেছেন বিশাল আকারের একটি গরু। গায়ের রঙ কালো হওয়ায় ভালোবেসে গরুটির নাম রেখেছেন ‘ব্ল্যাক কাউ’। দুই বছর আগে গরুটি কিনেন আমিরুল। অল্প অল্প করে টাকা বিনিয়োগ করে কোনো রকম স্টেরোয়েড বা ক্ষতিকর কিছু ছাড়াই শুধু গমের ছাল ও বিচালি খাওয়ায়ে পারিবারিক আদলে গরুটিকে মোটাতাজা করেন তিনি। উদ্দেশ্য, কোরবানির ঈদে বিক্রি করে একবারে হাতে টাকা পাওয়া ও কিছু লাভের আশা। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে গত কোরবানি ঈদে সঠিক দাম না পাওয়ায় বিক্রি করতে পারেনি গরুটি।
বর্তমান সময়ে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাবে সারা দেশেই একটা অস্থিরতা বিরাজ করছে। এর প্রভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে গরুর সব রকম খাদ্যের দাম। এমন অবস্থায় গরুটি বাজারে নিতে পারবেন কিনা, বাজারে নিলেও ক্রেতা মিলবে কিনা, ক্রেতা মিললেও সঠিক দাম পাওয়া যাবে কিনা এসব নানা বিধ বিষয় নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে আমিরুল মেম্বার। আমিরুল মেম্বার জানান, এই ঈদে যেভাবেই হোক গরুটি বিক্রি করতে চান তিনি।
গরু মোটাতাজা করা কুষ্টিয়ার ঐতিহ্য। এ জেলায় এমন বাড়ি খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে দু’একটি গরু নেই। এখানকার খামারী ও কৃষকরা কোরবানির ঈদের পরে কমদামে ছোট গরু কিনে লালন পালন শুরু করে। অল্প অল্প করে টাকা বিনিয়োগ করে এসব খামারে ও বাড়িতে বাড়িতে পারিবারিক আদলে গরুকে মোটাতাজা করে তারা। উদ্দেশ্য, পরের কোরবানির ঈদে বিক্রি করে একবারে হাতে টাকা পাওয়া ও কিছু লাভের আশা।
কুষ্টিয়া সদরের হাটশ হরিপুরের খামারী জাকিরুল ইসলাম ও খাজানগরের খামারী ওমর ফারুক জানান, কোরবানির পশু বাজারে তোলার সময় ঘনিয়ে এলেও মহামারি করোনাভাইরাস নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় ভুগছেন তারা। আসছে কোরবানির জন্য দেশে যথেষ্ঠ গরু প্রস্তুত করা হয়েছে। তাই এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে এবং খামারীদের লোকসানের হাত থেকে বাঁচাতে ভারত থেকে গরু আমদানি না করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তারা।
ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় কোরবানির জন্য দেশীয় গরু হিসেবে কুষ্টিয়া জেলার গরুর রয়েছে বিশেষ চাহিদা।
কুষ্টিয়া জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের তথ্যমতে, জেলায় এবার কোরবানির জন্য প্রায় এক লাখ গরুকে মোটাতাজা করা হয়েছে। কুষ্টিয়ার চাহিদা পূরণ করে প্রায় ৭০ শতাংশ গরু দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যাবে। এছাড়াও এবার ৬০ হাজার ছাগল ও কিছু মহিষও কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।
কোনো রকম ক্ষতিকর উপাদান ছাড়াই মাঠের ঘাস ও স্বাভাবিক খাবারে এসব গরু মোটাতাজা হয়েছে বলে নিশ্চিত করে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা জানান, করোনাভাইরাসের প্রার্দুভাবে ক্ষতিগ্রস্ত আট হাজার খামারীদের প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। খামারীদের গরু ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় অনলাইনের মাধ্যমে বিক্রির করার জন্য প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। খামারীরা এবার কোরবানির গরুর নায্য দাম পাবেন বলেও জানান তিনি।
গত বছরের মতো এবারও লোকসান হলে কুষ্টিয়ার খামারীরা আগামীতে গরু পালন থেকে সরে আসবে। তাই ঐতিহ্যবাহী এই পেশাকে টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারের বিশেষ দৃষ্টির দাবি সংশ্লিষ্টদের।