কুষ্টিয়ায় সংক্রমণ বাড়ছেই, করোনা-উপসর্গে আরও ১৭ মৃত্যু
কুষ্টিয়া করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে গতকাল শনিবার সকাল ৮টা থেকে আজ রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে ১৩ জনের করোনা পজিটিভ এবং চার জনের করোনার উপসর্গ ছিল বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবদুল মোমেন।
এদিকে, পিসিআর ল্যাব ও জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৮৯২ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ২৪৫ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ২৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
টানা একমাস কঠোর বিধিনিষেধের পরও সীমান্তবর্তী জেলা কুষ্টিয়ায় আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে করোনায় মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা। শত চেষ্টার পরও হাসপাতাল থেকে কেউ নিয়ে যাচ্ছে করোনার থাবায় নিথর হয়ে যাওয়া মায়ের দেহ। আবার কেউ বা নিচ্ছেন প্রিয় স্বজনের লাশ। সীমান্তবর্তী কুষ্টিয়ার একমাত্র করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল এখন যেন মৃত্যুপুরী। প্রতিদিনই এখানে দেখা যাচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। গত সাত দিনে শুধু এই হাসপাতালেই করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৮৫ জন এবং উপসর্গ নিয়ে ৩৫ জনসহ মোট ১২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এত মৃত্যুর মধ্যেও আবার অনেকে সুস্থ হয়ে ফিরছে নিজ বাড়িতে।
করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় রোগীর চাপ সামাল দিতে গত ২৫ জুন থেকে কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালকে করোনা ডেডিকেটেড হাসাপাতাল হিসেবে ঘোষণা দেয় কতৃপক্ষ। শুধু কুষ্টিয়া নয়, পার্শ্ববর্তী জেলাগুলো থেকেও করোনায় আক্রান্ত রোগীরা উন্নত চিকিৎসা নিতে আসছে এই হাসপাতলে। এর ফলে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সঙ্গে হাসপাতালে থাকা স্বজনেরা। এভাবে রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই বেড না পেয়ে মেঝেতে ও বারান্দায় শুয়েও চিকিৎসা নিচ্ছে। এত কষ্টের মধ্যেও হাসপাতালের চিকিৎসা সেবায় মোটামুটি খুশি রোগীর স্বজনেরা। আর এত এত রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা।
সিভিল সার্জন অফিসের তথ্য বলছে, জেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত ৩৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর শেষ ১১ দিনে মারা গেছেন ১২০ জন। গত সাত দিনে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে এক হাজার ৮৩১ জন। জেলায় মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ৩০৬ জন।
কুষ্টিয়ায় কেন এত মৃত্যু ও আক্রান্ত—এ বিষয়ে জেলা করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. এস এম মুসা কবির বলছেন, করোনার সংক্রমণ নিয়ে অবহেলা, মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব এবং করোনার উপসর্গ নিয়ে দেরিতে চিকিৎসা নিতে আসার কারণেই ঘটছে এত মৃত্যু ও আক্রান্তের ঘটনা। তিনি দাবি করেন, এভাবে চলতে থাকলে আরো ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে করোনার মহামারি। তবে, সচেতন হলে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সম্ভব। কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের সঙ্গে ভারতের অরক্ষিত সীমান্তের কারণে মানুষ অবাধে এপার-ওপার যাতায়াত করছে। জেলায় করোনায় আক্রান্তের এটাও একটা বড় কারণ বলেও জানান ডা. এস এম মুসা কবির।
জেলা করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আব্দুল মোমেন জানান, ১৫ দিন ধরে হাসপাতালের ২০০ বেডের বিপরীতে করোনায় আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে প্রায় ৩০০ রোগী ভর্তি হয়ে এখানে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে। করোনা রোগীদের চিকিৎসার্থে হাসপাতালে সরকারি- বেসরকারি সহায়তায় আরও আধুনিক যন্ত্রপাতি যুক্ত করা হচ্ছে। বাড়ানো হয়েছে অক্সিজেন ব্যবস্থা। জনবলের কিছুটা অভাব থাকলেও কেটে গেছে চিকিৎসক সংকট। ডা. আব্দুল মোমেন আরও জানান, পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে, সংক্রমণ যদি আরও বৃদ্ধি পায়, তাহলে অক্সিজেনসহ নানা সংকট দেখা দিতে পারে। তাই, করোনার সংক্রমণ রোধে সবাইকে সচেতন ও স্বাস্থবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান তিনি।
এদিকে, চলমান লকডাউনে স্থানীয় প্রশাসনের তৎপরতার মধ্যেও কাঁচাবাজারগুলোতে দেখা গেছে মানুষের উপচেপড়া ভিড়। কোনোভাবেই স্বাস্থ্যবিধি মানছে না তারা।
অন্যদিকে, সরকারি বিধিনিষেধ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে জরিমানা আদায় করছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। জেলায় সেনা সদস্যদের টহল দিতেও দেখা গেছে।
গত রোজার ঈদের পর থেকেই ভারতীয় সীমান্তবর্তী জেলা কুষ্টিয়ায় করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকলে গত ১১ জুন প্রথমে কুষ্টিয়া পৌরসভা এলাকায় এবং ১৭ জুন থেকে জেলাব্যপী কঠোর লকডাউন ঘোষণা করে জেলা প্রশাসন।