কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে গৃহহীন অসংখ্য পরিবার
কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে গত দুই মাসে অর্ধশতাধিক বসতবাড়ি ভেঙে গেছে। গৃহহীন হয়ে পড়েছে অসংখ্য পরিবার। বিনষ্ট হয়েছে গাছপালা। হুমকিতে রয়েছে আবাদি জমিসহ ঐতিহ্যবাহী মোল্লারহাট বাজার। ভাঙন কবলিতরা পাচ্ছেন না মাথা গোঁজার ঠাঁই। ভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় যে কোনো মুহূর্তে বিলীন হয়ে যেতে পারে হাটটি। বার্তা সংস্থা ইউএনবির এক প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার প্রত্যন্ত বেগমগঞ্জ ইউনিয়নে ভাঙনকবলিত স্থানে গিয়ে দেখা যায়, ব্রহ্মপুত্র নদ মোল্লারহাটের পূর্ব দিকের অংশে প্রায় এক কিলোমিটার জায়গাজুড়ে ভাঙছে। বর্তমানে মোল্লারহাটটি ভাঙনের মুখে।
ওই এলাকার উত্তর বালাডোবা গ্রামের বাসিন্দা ছালেহা জানান, তাঁর সংসার চলে স্বামীর খড়ি বিক্রির টাকায়। তিন ছেলে, দুই মেয়ের মধ্যে এক মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। বাড়ি-ভিটা ভেঙে যাওয়ায় জায়গা না পেয়ে নদীর তীরে ছাপড়া তুলে ছয় মাস ধরে অবস্থান করছেন তাঁরা। এখন পর্যন্ত কেউ এগিয়ে আসেনি।
এ রকম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন ওই এলাকার সোনাভান, ছালেহা, ছামাদ ও জহুর আলী। তাঁরা সেখান থেকে ঘর-বাড়ি সরিয়েছেন। কিন্তু এখনো থাকার জায়গা পাননি। ফলে চরম দুশ্চিন্তায় কাটছে তাঁদের দিন।
বেগমগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মহু বাদশা জানান, গত পাঁচ বছরে মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে ৬ নম্বর ওয়ার্ড। এই ওয়ার্ডের মানুষ এখন ৪ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডে আশ্রয় নিয়েছে। চলতি বছর নদী ভাঙনে গৃহহীন হয়েছে দুটি ওয়ার্ডের প্রায় সাত শতাধিক মানুষ। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসেই ভেঙে গেছে ৬০টির মতো বাড়ি। ভাঙনের মুখে রয়েছে বসতবাড়ি, গাছপালাসহ আবাদি জমি। গৃহহীন পরিবারগুলো কোথায় আশ্রয় নেবে, এই দুশ্চিন্তায় কাটছে তাদের দিনক্ষণ। কেউ কেউ জায়গা না পেয়ে নদীর তীরে ছাপড়া তুলে মানবেতর দিন কাটাচ্ছে।
ওই ইউপির আরেক সদস্য জামাল মণ্ডল জানান, এই অঞ্চলের মানুষের একমাত্র ঐতিহ্যবাহী মোল্লারহাট রয়েছে ভাঙনের মুখে। চরাঞ্চলের মানুষের কেনাবেচার জন্য প্রয়োজনীয় এই হাটটি রক্ষায় মানববন্ধনসহ বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি চালাচালি করেও প্রতিকার মিলছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে পাঁচ শতাধিক জিও ব্যাগ দেওয়া হলেও তা কাজে আসছে না। জিও ব্যাগ নয়, স্থায়ী ভাঙনরোধে সিসি ব্লক ফেলার দাবি এলাকাবাসীর।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘শুকনো সময়েও মোল্লারহাটে নদী ভাঙন রয়েছে। এরই মধ্যে আমরা ভাঙন রোধে কিছু জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের প্রস্তুতি নিয়েছি। স্থায়ীভাবে এটা রোধ করার জন্য বাজেট চেয়ে আবেদন করেছি। খুব তাড়াতাড়ি অনুমোদন পেলে আমরা স্থায়ীভাবে কাজ শুরু করতে পারব এবং ভাঙন রোধ করা সম্ভব হবে।’