কৃষকদের ডিজেলে ভর্তুকি দেওয়ার পরিকল্পনা নেই : কৃষিমন্ত্রী
কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, কৃষকদের আপাতত ডিজেলে ভর্তুকি দেওয়ার পরিকল্পনা নেই। এ ছাড়া, কৃষকদের সেচকাজের জন্য ডিজেলে ভর্তুকি দেওয়ার প্রক্রিয়াটি বেশ জটিল। সেচের কথা বলে পাম্পে বা অন্যত্র কাজে লাগায়।
আজ বুধবার সচিবালয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এক প্রশ্নের জবাবে কৃষিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, বিশ্ব বাজারে সারের দাম চারগুণ বাড়লেও দেশে সরকার এই মুহূর্তে সারের দাম বাড়াবে না।
ইউরোপের বাজারে কৃষিপণ্যের রপ্তানি এবং কৃষিখাতে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়াতে গত ৯ থেকে ১৮ নভেম্বর নেদারল্যান্ড ও যুক্তরাজ্য সফর করেছেন কৃষিমন্ত্রীর নেতৃত্বে সরকারি ও বেসরকারি শিল্পোদ্যোক্তাদের একটি প্রতিনিধিদল। এ বিদেশ সফর ও কৃষির সাম্প্রতিক বিষয় নিয়ে মন্ত্রী সাংবাদিকদের সঙ্গে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করেন।
ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, দেশে আন্তর্জাতিক মানের ল্যাব স্থাপন করে পেঁয়াজ ও আলু সংরক্ষণ করা হবে। নেদারল্যান্ডস এ বিষয়ে বাংলাদেশকে সহযোগিতা দেবে। এ ছাড়াও তাদের কাছ থেকে জলবায়ু পরিবর্তনসহনশীল ফসলের জাত উদ্ভাবন, গ্রিন হাউজ ও গ্লাস হাউজ তৈরির ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত সহায়তা পাওয়া যাবে।
কৃষিমন্ত্রী জানান, নেদারল্যান্ডস বেসরকারি খাত থেকে উন্নত উৎপাদন প্রযুক্তি, সংগ্রহ, সংগ্রহত্তোর প্রযুক্তি, বিভিন্ন ধরনের মেশিনারিজ তৈরির প্রযুক্তিগত দিক, রিয়েল টাইম স্বয়ংক্রিয় রিপোর্টিং ব্যবস্থায় প্রযুক্তিগত সহায়তা এবং মানবসম্পদ উন্নয়নে প্রশিক্ষণ ও উচ্চ শিক্ষায় সহায়তা পাওয়া যাবে। এসব বিষয়ে ওখেনিঙেন বিশ্ববিদ্যালয় ও রিসার্চের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক শিগগিরই স্বাক্ষর হবে। এ ছাড়া, দেশে ঘাটতি হলে সেপ্টেম্বর মাসে নেদারল্যান্ডসে উৎপাদিত নতুন পেঁয়াজ আমদানির ব্যবস্থা ও কৃষি প্রক্রিয়াকরণে ডাচ বিনিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে।
মন্ত্রী আরও জানান, আন্তর্জাতিক মানের ল্যাবরেটরি স্থাপন, ইন্টার ল্যাবরেটরি টেস্টিং ভ্যালিডেশ কারিগরি সহযোগিতা প্রদানের ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের ফুড স্ট্যান্ডার্ড এজেন্সি এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হবে। এ ছাড়া, গ্রিনিচ ইউনিভার্সিটির সঙ্গে প্রশিক্ষণ সহযোগিতার প্রক্রিয়া এবং ব্রিটেনের সুপার স্টোর সেইন্টসবারি, আজডা, টেসকোর সঙ্গে ব্রিটিশ বাংলাদেশ চেম্বারের মাধ্যমে বাজার সংযোগ সৃষ্টি হবে।
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমরা কৃষিকে লাভজনক ও বাণিজ্যিকীকরণ করতে চাই। এটি করতে হলে কৃষিপণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধি, দেশে কৃষি প্রক্রিয়াজাত শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপন ও প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজার বিস্তৃত করতে হবে। এতে উৎপাদন মৌসুমে কৃষকের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি ও লাভ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। এসব উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই আমরা নেদারল্যান্ড ও যুক্তরাজ্য সফর করেছি।
মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকারের আমলে দেশে খাদ্য উৎপাদনে অভাবনীয় সাফল্য অর্জিত হয়েছে। আলু, শাকসবজি, আমসহ অনেক ফসলে আমরা উদ্বৃত্ত। এসব কৃষিজ পণ্য রপ্তানির এক বিশাল সম্ভাবনা থাকলেও সেই সুযোগ আমরা পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারছি না। গত অর্থবছরে কৃষিপণ্য রপ্তানি পূর্বের বছরের তুলনায় প্রায় চারগুণ বেড়ে এক বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। রপ্তানির এই প্রবৃদ্ধি টেকসই ও ত্বরান্বিত করতে সরকার বদ্ধপরিকর এবং এ লক্ষ্যে প্রাইমারি প্রসেসিং, প্যাকিং হাউস ও টেস্টিং ক্যাপাসিটি উন্নয়ন তথা আন্তর্জাতিক মানের ল্যাব স্থাপন ও উন্নয়নে কাজ করছে।
এ সময় মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. মো. আবদুর রৌফ, মো. রুহুল আমিন তালুকদার, হাসানুজ্জামান কল্লোল, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ, প্রাণ আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সিইও আহসান খান চৌধুরী, এসিআই এগ্রো লিংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও এফএইচ আনসারী, স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজের চিফ অপারেটিং অফিসার পারভেজ সাইফুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।