কোটালীপাড়ায় কমিউনিটি ক্লিনিকের ভাতার টাকা থেকে উৎকোচ গ্রহণের অভিযোগ
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় কমিউনিটি ক্লিনিকের মাল্টিপারপাস হেলথ ভলান্টিয়ারদের (এমএইচভি) ভাতার টাকা থেকে এক হাজার টাকা করে উৎকোচ গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নন্দা সেনগুপ্তার বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগীরা টাকা কেটে নেওয়ার বিষয়ে অভিযোগ জানালেও উৎকোচ গ্রহণের কথা অস্বীকার করেছেন ওই কর্মকর্তা।
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলায় ৩৯টি কমিউনিটি ক্লিনিকে মোট ২৭৩ জন মাল্টিপারপাস হেলথ ভলান্টিয়াররা (এমএইচভি) গ্রামের মানুষকে ঘরে ঘরে স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দিতে নানা ধরনের কাজ করে আসছেন। এসব এমএইচভি কর্মীরা মাসিক ভাতা পান মাত্র ৩ হাজার ৬০০ টাকা করে। তাও আবার নিয়মিত পান না। গত সোমবার থেকে ১০ মাসের ভাতা দেওয়া শুরু হয় কোটালীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার অফিস থেকে।
গতকাল মঙ্গলবার উৎকোচ গ্রহণের খবর পেয়ে ওই অফিসে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মাল্টিপারপাস হেলথ ভলান্টিয়ারদের ভাতা থেকে ১ হাজার টাকা উৎকোচ গ্রহণ করছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নন্দা সেনগুপ্তার তিন আস্থাভাজন সিএইচসিপি মনোজ দত্ত, পবিত্র বিশ্বাস ও এসএম নাজমুল হুদা। ওই কর্মকর্তার যোগসাজশে ভাতার এক হাজার টাকা কেটে নিচ্ছিলেন তারা। সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে সেখান থেকে দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন এবং ক্যাশিয়ার মানিক-উজ-জামান টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেন। ততক্ষণে ২১৩ জনের কাছ থেকে ১ হাজার করে টাকা কেটে নিয়েছেন ওই অসাধু চক্র।
ভুক্তভোগী হিরণ ইউনিয়নের আশুতিয়া কমিউনিটি ক্লিনিকের এমএইচভি সুবর্ণা, টুপুরিয়া কমিউনিটি ক্লিনিকের এমএইচভি আবুল মোল্লা, মো. সালমান, রুপা সুলতানা ও চৈতি খানম টাকা কেটে নেওয়ার বিষয়ে অভিযোগ করেন। তারা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, টাকা কেটে নেওয়ার আগে আমাদের থেকে কৌশলে অঙ্গীকারনামা নিয়েছেন। আমরা যেন টাকা কেটে নেওয়ার বিষয়ে কোথাও কোনো অভিযোগ করতে না পারি।
যদিও টাকা কেটে নেওয়ার কথা অস্বীকার করেন ওই তিন সিএইচসিপি মনোজ, পবিত্র ও নাজমুল। তারা জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার নির্দেশে ক্যাশিয়ারকে সহযোগিতা করার জন্য সেখানে গিয়েছিলেন।
এদিকে টাকা কর্তনের প্রতিবাদ করায় চাকরিচ্যুতির ভয় দিয়েছেন কুশলা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য সহকারী হাফিজুর রহমানকে। হাফিজুর এনটিভির অনলাইনকে বলেন, তিনি সর্বোচ্চ ভাবে চেষ্টা করেছেন এ অনিয়ম রুখতে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ছোট পদে চাকরি করি। তাই কোনোমতে টাকা কর্তন বন্ধ করতে পারলাম না। আর এজন্য যদি আমাকে চাকরিচ্যুতিও করা হয়, তবু প্রতিবাদ করে যাব।
ভাতার ১ হাজার টাকা কেটে নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নন্দা সেনগুপ্তা। তিনি কৌশলে ডকুমেন্টের কথা বলেন এবং ডকুমেন্টের খাতায় প্রতিটি মাঠকর্মীই ৩৬ হাজার টাকা নিয়েছেন বলে জানান। ক্যাশিয়ারকে সহযোগিতার জন্য ওই তিন সিএইচসিপি মনোজ, পবিত্র ও নাজমুলকে সেখানে প্রেরণ করেছেন বলেও জানান তিনি। আর টাকা নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে ঢাকা থেকে ফিরে তদন্ত কমিটি গঠন করে সিভিল সার্জনের নিকট জমা দিবেন বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে গোপালগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ জানান, ইতোপূর্বে বিষয়টি শুনেছেন। প্রতিটি উপজেলায় এধরনের ফান্ড এসেছে। সেখানে খবর নিয়েছি কোথাও উৎকোচ গ্রহণের সত্যতা এখনও পাইনি। তবে কোটালীপাড়া উপজেলায় টাকা কেটে নেওয়ার বিষয়ে কোনো প্রমাণাদি থাকলে সহযোগিতার কথা বলেন তিনি। সেক্ষেত্রে সত্যতা পেলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানান তিনি।
কোনো অসাধুচক্রের খপ্পরে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারভিত্তিক এই কমিউনিটি ক্লিনিকের সুনাম যেন নষ্ট না হয়, সেদিকে নজরদারির দাবি সকলের।