কোনো স্বৈরাচারি সরকার জোর করে ক্ষমতায় থাকতে পারে না : ড. মঈন খান
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুল মঈন খান বলেছেন, জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। পুলিশের বুলেট দিয়ে ও বিএনপির অফিসে লুটপাট করে মানুষকে দমিয়ে রাখা যায় না। এই সরকার মিথ্যা মামলা, হামলা, গুম, হুমকি দিয়ে এই দেশের মানুষকে অবরুদ্ধ করতে চায়। ইতিহাসের শিক্ষা প্রমাণ করে, পৃথিবীর কোথায়ও কোনো স্বৈরাচারি সরকার জোর করে ক্ষমতায় থাকতে পারে না।
রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে আয়োজিত আজ শনিবার সকাল থেকে শুরু হওয়া বিএনপির গণসমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় তিনি আরও বলেন, আমরা এই সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে এসেছি। এই সরকার মিথ্যা মামলা, হামলা, গুম, হুমকি দিয়ে এই দেশের মানুষকে অবরুদ্ধ করতে চায়। ইতিহাসের শিক্ষা প্রমাণ করে, পৃথিবীর কোথায়ও কোনো স্বৈরাচারি সরকার জোড় করে ক্ষমতায় থাকতে পারে না। জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। পুলিশের বুলেট দিয়ে ও বিএনপি অফিস লুটপাট করে মানুষকে দমিয়ে রাখা যাবে না।
দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মঈন খান আরও বলেন, গতকাল সারা রাত আপনারা ছিলেন। আপনারা প্রমাণ করেছেন, এই দেশের মানুষ কোনো স্বৈরাচার সরকার মেনে নিবে না। স্বাধীনতার সময় গণতন্ত্রের জন্য লাখ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছেন। স্বাধীনতার পরবর্তী তিন বছর তারা মানুষকে হত্যা করে, একদলীয় বাকশাল সরকার গঠন করেছিল। তারা পুনরায় আবার বাকশাল কায়েম করেছে। বাংলাদেশের মানুষ বাকশালের জন্য দেশ স্বাধীন করেনি। আগে ছিল, আমার ভোট আমি দেবো, যাকে খুশি তাকে দেবো। আর এখন তারা ক্ষমতায় জোর করে থেকে বলে, আমার ভোট আমি দেবো, দিনের ভোট রাতে দেবো।
মঈন খান আরও বলেন, আমরা এর পরিবর্তন চাই, এর জন্য আমরা সংগ্রাম করছি। বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় কারাগারে রাখা হয়েছে, তাঁকে আমরা মুক্ত করব। আমরা ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করি না। আমরা খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নির্দেশে কর্মসূচি দিয়ে; এদেশে জনপ্রতিনিধিত্ব পালন করে, জনগণের কাছে এই দেশ ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য সংগ্রাম করছি।
এদিকে, বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় জনসমাবেশে সকল বাধা ও প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে লাখো জনতার সমাগম ঘটেছে গোলাপবাগ মাঠসহ আশেপাশের এলাকায়। জনতার ঢেউ গিয়ে আছড়ে পড়েছে রাজধানীর প্রবেশপথ সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, মানিকনগর, শাহজাহানপুর, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন, গোপীবাগ, টিকাটুলি, মতিঝিলসহ প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে। জনতার স্রোতকে আটকে রাখতে পারেনি কোনো বাধাই।
আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া নিঃশর্ত মুক্তিসহ ৯ দফা দাবিতে এ বিভাগীয় সমাবেশের আয়োজন করেছে বিএনপি।
বিএনপির এ গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিন ছিল ঘটনাবহুল। শর্ত ও পাল্টা শর্তের পর শেষ পর্যন্ত গতকাল শুক্রবার দুপুরে গোলাপবাগ মাঠে গণসমাবেশের অনুমতি দেয় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। অনুমতি পাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে গতকাল শুক্রবার বিকেলে গোলাপবাগ মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়।
আজ শনিবার সকাল আটটার দিকে গোলাপবাগ মাঠে গিয়ে দেখা যায়, তিল ধারণের ঠাঁই নেই মাঠে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা ছড়িয়ে পড়তে থাকে আশেপাশের এলাকায়।
সমাবেশে যোগ দিতে ভোর থেকেই মিছিল নিয়ে ঢাকার আশেপাশের জেলা ও উপজেলা থেকে আসতে থাকেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। সকাল ৭টার দিকে যাত্রাবাড়ী মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও র্যাব সদস্য মোতায়েন রয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যে ডেমরা, ধোলাইপাড় ও চিটাগাং রোড থেকে বড় বড় মিছিল আসতে থাকে। মুহূর্তের মধ্যেই যাত্রাবাড়ী মোড় বিএনপির নেতাকর্মীদের পদভারে মুখরিত হয়ে ওঠে। এখানে সরকারের পদত্যাগ দাবি ও খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা যাত্রাবাড়ী মোড় ছেড়ে মহল্লার অলিগলিতে গিয়ে আশ্রয় নেয়।
সকাল ১০টার দিকে দেখা যায়, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে প্রধান সড়ক ধরে মানিকনগর হয়ে কমলাপুর স্টেডিয়ামের সামনে পর্যন্ত লোকে লোকারণ্য। এরপর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে যেসব মিছিল এসেছে সেগুলো আর সামনে এগুতে না পেরে সড়কেই অবস্থান নেয়। নেতাকর্মীদের স্রোত দেখা যায় কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন, মতিঝিল, গোপীবাগ ও টিকাটুলিসহ আশেপাশের এলাকায়।