‘কোভিড টিকার বুস্টার ডোজ নিয়ে এখনই ভাবার প্রয়োজন নেই’
উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বললেও আসলে বুস্টার ডোজ নেওয়া মানুষজনের শরীরে করোনা প্রতিরোধ ক্ষমতা কতটা বাড়ে? আর, দুই ডোজ নেওয়া মানুষজনেরই বা ছয় মাস পর থেকে সময়ের সঙ্গে প্রতিরোধ ক্ষমতা কতটা কমে? এসব গবেষণার ফলাফল সামনে আসার পরই বাংলাদেশে টিকার বুস্টার ডোজ দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরামর্শ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের।
এখনও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদন দেয়নি, তাই করোনার টিকার তৃতীয় বা বুস্টার ডোজ নিয়ে আপাতত ভাবার প্রয়োজন নেই বলে জানিয়েছেন, কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ। আর, বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায়—দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় আনার পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ারর পরামর্শ দিচ্ছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের অনেক দেশে কোভিড টিকার তৃতীয় বা বুস্টার ডোজ দেওয়া শুরু হয়েছে। বলা হচ্ছে, টিকা দেওয়ার ছয় মাস পর থেকে কার্যকারিতা কমতে থাকে। তাই বয়স্ক এবং জটিল শারীরিক সমস্যা থাকা মানুষজনকে দেওয়া হবে এই টিকা। এসব উন্নত দেশের সুবিধা হলো—তাদের মোট জনসংখ্যার একটা বড় অংশই পূর্ণাঙ্গ টিকার আওতায় এসেছে। আবার টিকার তেমন ঘাটতিও নেই। কিন্তু, বাংলাদেশের মোট জনগোষ্ঠীর অর্ধেকের বেশি এখনও করোনার টিকার আওতায় আসেনি। তাহলে দেশে বুস্টার ডোজের কী হবে?
জাতীয় পরামর্শক কমিটির সভাপতি বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কিন্তু এটাকে (বুস্টার) এখনও অনুমোদন দেয়নি। কারণ, দুটি ডোজের পরও যাদের ইমিউনিটি তথাকথিতভাবে কম বলা হচ্ছে—তারপরও যে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকবে না, এটা কিন্তু এখনও বলা হচ্ছে না। আর আরেকটি ব্যাপার হলো—আমরা এখন এটা নিয়ে কেন ভাবব? কারণ, আমাদের প্রথম টিকাই তো এখনও উদ্দিষ্ট জনগোষ্ঠীকে দেওয়া যায়নি। দ্বিতীয় টিকাও দেওয়া যায়নি। টিকার যেমন প্রয়োজন আছে, তেমনি টিকার রাজনীতি খুবই জটিল আকার ধারণ করেছে সারা বিশ্বব্যাপী। এর একটি হলো—টিকা কোম্পানিগুলোর মধ্যে একটি প্রতিযোগিতা আছে। কেউ স্টক করে বসে আছে, কিন্তু অনেক দেশ পাচ্ছে না।’
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তার মোস্তাক হোসেনের মতে, এ বছরের মধ্যে দেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষকে টিকা দেওয়ার পর, আগামী বছর গুরুতর অসুস্থ ও বয়স্ক মানুষজনকে বুস্টার ডোজ দেওয়ার বিষয়ে চিন্তা করা যেতে পারে।
ডা. মোস্তাক হোসেন বলেন, ‘অতিরিক্ত তৃতীয় ডোজ না দিয়ে বরং আমাদের চেষ্টা করা উচিত—প্রতিটি দেশে সমানুপাতিক হারে যারা ঝুঁকিপূর্ণ মানুষ, তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া। বয়স যাদের বেশি, যাঁরা ফন্ট্র লাইনার হিসেবে কাজ করেন, তাঁদের পেশাগত কারণেই জণগণের সংস্পর্শে যেতে হয়। তাঁদের টিকা দিলে তখন সেটা কাম্য অনুপাতে টিকা দেওয়া হবে। তারপরেই কেবল তৃতীয় ডোজ বা বুস্টার ডোজ দেওয়া যেতে পারে, শুধু বৈষম্য দূর করার জন্যই নয়, যাতে করে নতুন নতুন ভ্যারিয়্যান্ট জন্ম না হয়, সেটা প্রতিরোধ করার জন্য।’
ইউরোপের কয়েকটি দেশে করোনার সংক্রমন আবারো বাড়ছে। তাই দেশেও সংক্রমনের উর্ধ্বগতি ঠেকাতে টিকার ওপরই ভরসা করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এ বছরের মধ্যে দেশের অধের্কের বেশী মানুষকে টিকার আওতায় আনতে পারলে স্বস্তিজনক অবস্থায় থাকা যাবে বলেও মনে করেন তারা।