কোরবানির মাংস বেচে মাদক সেবন!
দিনাজপুরের হিলিতে কোরবানির ঈদের দিন ভিক্ষা করে মাংস সংগ্রহ করেন আজগর আলী (৫৩)। দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত ঘুরে তিনি সংগ্রহ করেন তিন কেজি ২০০ গ্রাম গরু ও ৪০০ গ্রাম খাসির মাংস। সন্ধ্যায় তিনি স্থানীয় দুইজন ব্যক্তির কাছে ৮৫০ টাকায় মাংসগুলো বিক্রি করেন। আর সেই টাকায় সেবন করেছেন হেরোইন।
আজগর আলী বলেন, ‘আমার নীলফামারীর সৈয়দপুরের বাড়িতে অনেকে আছে। আমি হেরোইন খাই। এজন্য আমাকে বাড়িতে উঠতে দেয় না। আমি হেরোইনের নেশায় হিলিতে আসি। আগে কখনও ঈদে মাংস ভিক্ষা করিনি। এবার প্রথম। যে টাকায় মাংস বিক্রি করলাম তাতে আমার তিনদিন আরামে হেরোইন খাওয়া যাবে। এরপরের চিন্তা পরে করা যাবে।’
শুধু আজগর আলী নয়, তার মতো হিলিতে কয়েকশ মাদকসেবী এবার কোরবানির ঈদকে টার্গেট করে মাংস ভিক্ষা করে কেজি কেজি মাংস সংগ্রহ করেছেন। এদের মধ্যে কেউ বাড়িতে নিয়ে গেছেন, আবার কেউ মাদকের নেশা পূরণে অন্যের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন।
কথা হয় হিলি বাজারে আরেক মাদকসেবী আয়নালের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি হিলিতে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে মানুষের কাজ করে দেই। এতে আমি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা কামাই করি। ওই টাকা দিয়ে সন্ধ্যায় চুড়িপট্টিতে গিয়ে হেরোইন খাই। ১০০ বা ২০০ যা-ই থাকে বাড়িতে খরচ দেই। এবার আমি ঈদে কোরবানির আড়াই কেজি মতো মাংস পেয়েছি। অনেকে কিনতে চেয়েছে, আমি বিক্রি করিনি। সব মাংস খাওয়ার জন্য বাড়িতে দিয়েছি।
এদিকে, খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হিলিতে এবার কোরবানির ঈদে দরিদ্র ও ভিক্ষুকদের সঙ্গে ছদ্মবেশে মাদকসেবীরাও মাংস সংগ্রহে বাড়ি বাড়ি ঘুরে মাংস সংগ্রহ করেছেন। দরিদ্র মানুষেরা তাদের খাবারের জন্য রাখলেও মাদকসেবীরা নেশা করার জন্য অন্যের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। আবার কেউ মাদক বিক্রেতাদের কাছে দাম ধরে দিয়ে মাদক নিয়েছেন।
মধ্যবাসুদেবপুর গ্রামের আব্দুল করিম মোল্লা জানান, এবারই প্রথম হিলিতে এই চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। মাদকসেবীরা ফকির-মিসকিনদের সঙ্গে মিশে বাড়ি বাড়ি কোরবানির মাংস সংগ্রহ করেছে। আমরা তাদের দেখে চিনতে পারলেও মানবিক বিবেচনায় মাংস দিয়েছি। পরে জানতে পারি মাদকসেবীরা মাংসগুলো হেরোইন খাওয়ার জন্য বিক্রি করেছে।
চুড়িপট্টি এলাকার সিরাজুল ইসলাম জানান, কম দাম পেয়ে মাদকসেবীদের কাছ থেকে অনেক দরিদ্র লোকজনকে মাংস কিনতে দেখা গেছে। এসব মাদকসেবীদের দ্রুত পুনর্বাসন ও চিকিৎসা করানো দরকার। তাদের কারণে মানুষজন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে।