ক্লাবের লাইট বন্ধ করে মেয়েদের ওপর তারা ঝাঁপিয়ে পড়ে : পরী মণি
ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে সাভার থানায় চিত্রনায়িকা পরী মণির দায়ের করা মামলায় ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও তুহিন সিদ্দিকী অমিসহ তিন জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি শেষ হয়েছে। আগামী ১৮ মে পরী মণির মামলায় বিচার শুরু হবে কিনা, তার আদেশ দেওয়া হবে।
আজ মঙ্গলবার ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৯ এর বিচারক হেমায়েত উদ্দিন এ দিন ধার্য করেন। আসামিরা আদালতে তাঁদের আইনজীবীদের মাধ্যমে মামলার দায় হতে অব্যাহতির প্রার্থণা করেন। এ সময় পরী মণি আদালতের এজলাসে বাদীর ডকে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘বোট ক্লাবে রেপ করার জন্য আসামিদের কোনো রুমের প্রয়োজন হয় না। ফোন করলেই ক্লাবে লাইট বন্ধ হয়ে যায়। তাঁরা যেকোনো মেয়ের ওপর খোলা মাঠে ইচ্ছামতো ঝাঁপিয়ে পড়ে। ওখানে কোনো কন্ট্রোল নেই। তাঁরা আমাকে জোর করে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। রুমের লাইট, ফ্যান অফ (বন্ধ) করে হত্যার চেষ্টা করে।’
এরপরে পরী মণিকে বিচারক দ্রুত থামতে বলেন। তখন পরী মণি বলেন, ‘আমাকে সবাই থামতে বলে। কিন্তু আমাকে বলতে হবে। কারণ তাদের অনেক পাওয়ার।’ এরপরে বিচারক আসামিদের অব্যাহতির বিষয়ে ও অভিযোগ গঠনের আদেশের জন্য ১৮ মে দিন ধার্য করেন।
এদিকে পরী মণি আদালতের এজলাস থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছি। আমার সঠিক বিচার লাগবে। যেকোনো পরিস্থিতিতে আমি লড়ে যাব। সবাই আমাকে চুপ করার চেষ্টা করছিল। একজন র্যাপিস্ট যদি খোলা আকাশে-বাতাসে ঘুরে বেড়ায়, তাহলে আর্জি আর কি হবে। শারীরিক অবস্থা নিয়ে আদালতে আসার বিষয়ে জানতে চাইলে পরী মণি বলেন, ‘আমি অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছি। আমার সঠিক বিচার লাগবে। সঠিক বিচার চাই। যেকোনো পর্যায়ে আমি লড়ে যাব।’
২০২১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কামাল হোসেন ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নাসিরসহ তিন জনের বিরুদ্ধে অভিযোগত্র দাখিল করেন। এরপর মামলাটি বিচারের জন্য নারী ও শিশু আদালতে বদলি হয়ে আসে।
অভিযোগপত্রে পুলিশ বলেছে, বোট ক্লাবে আসামি নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও শাহ শহিদুল আলম চিত্রনায়িকা পরী মণির সঙ্গে অশ্লীল ভাষায় কথা বলাসহ অশ্লীল আচরণ করেন। এ সময় তারা পরী মণিকে মারধর করে হুমকি দেন।
আসামিদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ ধারাসহ পেনাল কোডের ৩২৩/৫০৬ অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে।
অভিযোগপত্রে পুলিশ আরও বলেছে, এ ছাড়া মামলার এজাহারনামীয় আসামি তুহিন সিদ্দিকী অমি চিত্রনায়িকা পরী মণিকে কৌশলে বোট ক্লাবে ডেকে নিয়ে যান। এরপর সেখানে পরী মণির সঙ্গে শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটায় অমির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। তাই নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৩০ ধারায় অমির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে।
এদিকে, মামলার পর নানা ঘটনা প্রবাহে বাদী পরী মণি নিজেই আসামি হয়ে যান। গত বছরের ৪ আগস্ট পরী মণিকে তাঁর বনানীর বাসা থেকে আটক করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। অভিযানে নতুন মাদক এলএসডি, মদ ও আইস উদ্ধার করা হয় বলে দাবি করে র্যাব।
পরদিন পরী মণিকে বনানী থানায় সোপর্দ করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করে র্যাব। এরপর ওই মামলায় পরী মণিকে তিন দফায় রিমান্ডে নেয় পুলিশ। আদালতে জামিন পেয়ে গত ১ সেপ্টেম্বর গাজীপুরের কাশিমপুরের মহিলা কারাগার থেকে মুক্তি পান পরী মণি। বর্তমানে মামলাটির বিচারকাজ চলছে।