ক্লিপের বক্তব্য সত্য হয়ে থাকলে তা নিন্দনীয় ও অপ্রত্যাশিত : হাইকোর্ট
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ কামরুন নাহারের ফাঁস হওয়া ‘ফোনালাপের অডিও’ ক্লিপের বক্তব্য সত্য হয়ে থাকলে তা খুবই নিন্দনীয় ও অপ্রত্যাশিত বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, একটি কলেজের অধ্যক্ষের কাছ থেকে কেউ এ ধরনের কথা আশা করেন না।
আজ মঙ্গলবার কামরুন নাহারকে কলেজটির অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রাখার নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের শুনানিকালে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন। পরে আদালত শুনানি ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মুলতবি করেন।
এর আগে গত রোববার ভিকারুননিসার দুই শিক্ষার্থীর অভিভাবক মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম অধ্যক্ষ হিসেবে কামরুন নাহারের দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রাখার নির্দেশনা চেয়ে রিট করেন।
আজ রিটের পক্ষে শুনানিতে আইনজীবী মো. আবদুল্লাহ আল হারুন ভূঁইয়া বলেন, অধ্যক্ষের ফোনালাপ ২৬ জুলাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। পরদিন ২৭ জুলাই দেশের মূল ধারার দৈনিকগুলোয় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। অতিমারি পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা অনলাইনে ক্লাস করে। সে কারণে তাদের ডিজিটাল ডিভাইসের সুবিধা রয়েছে। রিট আবেদনকারী অভিভাবকদের সন্তানেরা পঞ্চম ও সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। অধ্যক্ষের ওই অডিও ক্লিপ দেখে তারা তাদের বাবাদের (রিট আবেদনকারী) অবহিত করেছে। দেশের সবাই ক্লিপটি দেখেছে। রিট আবেদনকারীদের সন্তানেরা ক্লিপটি দেখে হতাশা ও হীনমন্যতায় ভুগছে।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদন তুলে ধরে রিট আবেদনকারীর আইনজীবী আরও বলেন, উনি (অধ্যক্ষ) বলেছেন, ভ্যানিটি ব্যাগে পিস্তল রাখতেন আগে থেকে। উনি বালিশের নিচে পিস্তল নিয়ে ঘুমান।
এ সময় আদালত বলেন, লাইসেন্স করা পিস্তল থাকলে তো রাখতেই পারেন।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার বলেন, ওই ঘটনায় কমিটি গঠন করা হয়েছে ও কমিটি কাজ করছে। তদন্তে যা আসবে, তার ভিত্তিতে সরকার ব্যবস্থা নেবে।
আদালত বলেন, কমিটি কবে ফর্ম হয়েছে এবং এর টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশন কী?
জবাবে বিপুল বাগমার বলেন, যেদিন পত্রিকায় খবর এসেছে, তার পরদিন কমিটি গঠন করা হয়।
শুনানিতে বিপুল বাগমার বলেন, ব্যক্তিগত আলাপচারিতা, উনি প্রিন্সিপাল হিসেবে বক্তব্য দেননি।
এ সময় আদালত বলেন, যদি ভিডিও ক্লিপের বক্তব্য সত্য হয়ে থাকে, তা খুবই নিন্দনীয় ও অপ্রত্যাশিত। একটি কলেজের অধ্যক্ষের কাছ থেকে কেউ এ ধরনের কথা আশা করে না।
ওই রিটের ওপর আজ শুনানিতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার আদালতকে বলেন, ওই ঘটনায় কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই বিষয়ের ওপর তদন্ত চলছে। কমিটির প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে সরকার ব্যবস্থা নেবে।
এ সময় আদালত বলেন, ‘ঘটনার পর মন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করেছে। তারা কাজ করছে। কিছুদিন বিধিনিষেধ থাকায় আমরা কেউই ঘর থেকে বের হতে পারিনি। সীমিত কিছু কাজ অনলাইনে চলেছে। যেহেতু বুধবার থেকে অফিস-আদালত খুলছে এবং সেহেতু বিষয়টি দেখবে বলে মন্ত্রণালয় ওই কমিটি গঠন করেছে, আমরা আশা করব মন্ত্রণালয় ৩০ আগস্টের মধেই তদন্ত শেষ করবে। আদালতের এই অভিপ্রায় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মন্ত্রণালয়কে জানিয়ে দেবেন। আগামী ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করা হলো।’
এর আগে মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম ২৭ জুলাই শিক্ষাসচিব এবং মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর পৃথক আবেদন করেন। এতে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ও তদন্তের স্বার্থে অধ্যক্ষকে সাময়িক বরখাস্তের নিবেদন করা হয়। এতে ফল না পেয়ে ৮ আগস্ট রিটটি করেন তিনি।
‘আমি গুলি করা মানুষ, পিস্তল বালিশের নিচে থাকত’ শীর্ষক প্রতিবেদনসহ গণমাধ্যমে ওই বিষয় নিয়ে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন যুক্ত করে রিটটি করা হয়। একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ভিকারুননিসা স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ কামরুন নাহার এবং অভিভাবক ফোরামের উপদেষ্টা মীর শাহাবুদ্দিন টিপুর একটি ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে। এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এতে অধ্যক্ষ ওই অভিভাবককে বলেন, ‘আমি কিন্তু গুলি করা মানুষ। ব্যাগের মধ্যে রিভলবার নিয়া হাঁটা মানুষ। আমার পিস্তল বালিশের নিচে থাকত। কোনো...বাচ্চা যদি আমার পেছনে লাগে, আমি কিন্তু ওর পেছনে লাগব, আমি শুধু ভিকারুননিসা না, আমি দেশছাড়া করব।’
ফোনালাপের অডিও ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।