খাদ্যের জন্য বিদেশের ওপর নির্ভরশীল থাকা যাবে না : কৃষিমন্ত্রী
কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, ভবিষ্যতে খাদ্য নিরাপত্তা টেকসই করা বিরাট চ্যালেঞ্জ। এই মুহূর্তে দেশে সাড়ে ১৬ কোটি মানুষ। অন্যদিকে কৃষি জমি কমছে। এ অবস্থায়, এই কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হলে কৃষিকে বিজ্ঞানভিত্তিক করতে হবে, যান্ত্রিক করতে হবে, আধুনিক করতে হবে। উদ্ভাবিত জাত ও প্রযুক্তিকে দ্রুত মাঠে নিয়ে যেতে হবে। তাহলেই খাদ্য নিরাপত্তা টেকসই করা সম্ভব হবে।
রাজশাহীর শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে রাজশাহী, রংপুর বিভাগসহ বরেন্দ্র অঞ্চলে তেল ফসল ও ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি শীর্ষক কর্মশালায় আজ বৃহস্পতিবার মন্ত্রী এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
কৃষি কর্মকর্তাদের দ্রুত খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, খাদ্যের জন্য বিদেশের ওপর কোনক্রমেই নির্ভরশীল থাকলে হবে না। আন্তর্জাতিক বিশ্ব খুবই নির্দয় ও নিষ্ঠুর; দেশের স্বার্থে, জাতীয় স্বার্থে তাদের মধ্যে কোন মানবতাবোধ, গণতন্ত্র ও নীতি-আদর্শ কাজ করে না। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যে শস্য রপ্তানির একটি চুক্তি হয়েছে, কিন্তু নানা অজুহাতে সেটি এখনো কার্যকর হয়নি। এরকম অস্বাভাবিক বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে নিজেদের খাদ্য নিজেরা উৎপাদন করতে না পারলে, টাকা থাকলেও খাদ্য পাওয়া যাবে না।
কর্মকর্তাদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, দ্রুত চালের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ব্রি ২৮সহ পুরনো জাতের ধানের পরিবর্তে নতুন উদ্ভাবিত বেশি উৎপাদনশীল জাত ব্রি ধান ৮৯, ৯২, ১০০সহ নতুন জাতগুলো কৃষকের নিকট দ্রুত পৌঁছে দিন ও জনপ্রিয় করুন। এ জাতগুলোর ফলন বিঘাতে ৩০ মণের বেশি হয়। এগুলো চাষ করলে চালের উৎপাদন ৩০ শতাংশ বাড়ান সম্ভব হবে।
আব্দুর রাজ্জাক আরও বলেন, দেশে ডলারের সংকট নেই, তেলের সংকট নেই, সারেরও সংকট নেই। কিন্তু কিছু তথাকথিত বুদ্ধিজীবীসহ যারা চায় সরকারের তাড়াতাড়ি পতন হোক, দেশে খাদ্য সংকট হোক, অর্থনৈতিক বিপর্যয় হোক, তারাই এটি বলে বেড়াচ্ছে। তারা স্বপ্ন দেখছে, এসব সংকট হলে আন্দোলন করে ক্ষমতায় আসবে বা সরকারের পতন হলে অগণতান্ত্রিক অনির্বাচিত সরকারের উপদেষ্টা ও মন্ত্রী হবে। আমি মনে করি, তারা গণতন্ত্রের শত্রু, দেশের শত্রু।
কৃষিসচিব মো. সায়েদুল ইসলামের সভাপতিত্বে বিএআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ মো. বখতিয়ার, ব্রির মহাপরিচালক শাহজাহান কবীর, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বেনজীর আলম, বারির মহাপরিচালক দেবাশীষ সরকার প্রমুখ বক্তব্য দেন।
কর্মশালায় বিদ্যমান শস্যবিন্যাসে তেল ফসলের অন্তর্ভুক্তি ও উচ্চ উৎপাদনশীল ধানের জাত চাষের মাধ্যমে তেল ও ধানের উৎপাদন বৃদ্ধিতে পরিকল্পনা ও করণীয় বিষয়ে ৫টি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের কৃষি কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
পরে বিকেলে নগরীর একটি হোটেলে খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) আয়োজিত কৃষি সেক্টর রূপান্তরে বিনিয়োগ শীর্ষক আঞ্চলিক কর্মশালায় কৃষিমন্ত্রী প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন।