খালেদা জিয়ার ফুসফুসে ‘সামান্য’ সংক্রমণ, দেওয়া হয়েছে ওষুধ
বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সিটি স্ক্যানের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন পেয়েছে তাঁর চিকিৎসক দল। গতকাল বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে রাজধানীর বসুন্ধরায় এভার কেয়ার হাসপাতাল থেকে প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরই ভার্চুয়ালি পর্যালোচনা করেন চিকিৎসকরা। পরে খালেদা জিয়ার জন্য সর্বসম্মতিক্রমে নতুন একটি ওষুধ যুক্ত করা হয়। বর্তমান শারীরিক অবস্থায় বাসায় রেখেই চিকিৎসা চলবে বলে জানান চিকিৎসকরা।
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ফুসফুসের অবস্থা জানতে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে ফুসফুসের সিটি স্ক্যান করানোর সিদ্ধান্ত নেয় তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক দল। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টায় গুলশানের বাসভবন ফিরোজা থেকে রাজধানীর বসুন্ধরায় এভার কেয়ার হাসপাতালে যান বিএনপির চেয়ারপারসন। সেখানে প্রায় এক ঘণ্টা অবস্থানের পর হাসপাতাল থেকে আবারও ফিরোজায় ফিরে আসেন তিনি।
করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর দ্বিতীয় সপ্তাহ পার করছেন খালেদা জিয়া। তাই এখনো তাঁকে শঙ্কামুক্ত বলার সময় আসেনি বলে জানায় চিকিৎসক দল। যেহেতু খালেদা জিয়ার ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য সমস্যা আছে, সেহেতু তাঁকে আগামী এক সপ্তাহ নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হবে বলে জানায় চিকিৎসক দল।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসকরা আরও জানান, দেশে ও দেশের বাইরে বেশ কয়েকজন চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে করোনার বৈশ্বিক চিকিৎসা পদ্ধতি মেনেই খালেদা জিয়াকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।
বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, গত রোববার সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে। তখন থেকে গুলশানের বাসায় অবস্থান করছেন তিনি। তাঁর বাসার আরও কয়েকজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। শুরু থেকেই খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের দেখভাল করছেন ডা. এফ এম সিদ্দিকীর নেতৃত্বে একদল চিকিৎসক।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিশেষ আদালতের রায়ে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড নিয়ে কারাবন্দি হন খালেদা জিয়া। তারপর নাজিমউদ্দিন রোডের সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগারে শুরু হয় তাঁর কারাজীবন। একই বছরের ৩০ অক্টোবর রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা পাঁচ বছর বাড়িয়ে ১০ বছরের আদেশ দেন বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বেঞ্চ।
অন্যদিকে, ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত। রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে অবস্থিত ঢাকার ৫ নম্বর অস্থায়ী বিশেষ জজ ড. মো. আখতারুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে সাত বছরের কারাদণ্ড ছাড়াও খালেদা জিয়াকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানা অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত।
নাজিমউদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে এক বছরের বেশি সময় বন্দিজীবন কাটানোর পর চিকিৎসার জন্য তাঁকে নিয়ে আসা হয় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) কেবিন ব্লকের প্রিজন সেলে।
গত বছর সারা বিশ্বে মহামারি করোনা ছড়িয়ে পড়লে শর্তসাপেক্ষে সরকার প্রধানের নির্বাহী আদেশে জামিন পান খালেদা জিয়া। প্রায় ২৫ মাস (কারাগার ও বিএসএমএমইউ'র প্রিজন সেল) কারাভোগের পর তিনি ২০২০ সালের ২৫ মার্চ মুক্ত হন। বিএসএমএমইউ প্রিজন সেল থেকে মুক্তির পর গুলশানে নিজের ভাড়া বাসা ‘ফিরোজা’য় অবস্থান করছেন সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী।