খুলনার সমাবেশ নিয়ে সরকার সন্ত্রাস করছে : মির্জা ফখরুল
খুলনায় বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে সরকার একটি সন্ত্রাসের রাজত্ব তৈরি করছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ শুক্রবার দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমন অভিযোগ করেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে আন্দোলন করছি। এরই অংশ হিসেবে আগামীকাল (২২ অক্টোবর) খুলনায় আমাদের সমাবেশ। এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে সরকার একটি সন্ত্রাসের রাজত্ব তৈরি করছে খুলনায়। পথে পথে আমাদের নেতাকর্মীদের ও সাধারণ মানুষকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, খুলনার দায়িত্বপ্রাপ্ত দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় যে বাড়িতে অবস্থান করেছিলেন, গতকাল রাতে সেই বাসায় পুলিশ তল্লাশি চালিয়ে সেখান থেকে ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেছে।
ফখরুল আরও বলেন, আমি জানতে পেরেছি, নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সড়কে যাকে যেখানে পাওয়া যাবে, তাঁকে গ্রেপ্তার করা হবে। গতকাল তারা লাঠিসোটা রামদা নিয়ে শোডাউন করেছে। মোটরসাইকেল নিয়ে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা সন্ত্রাস সৃষ্টি করেছে।
সন্ত্রাস সৃষ্টি করার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তির দাবি করেন মির্জা ফখরুল। একই সাথে খুলনার সমাবেশ যাতে বাধার সৃষ্টি না করা হয়, সেজন্য আহ্বান জানান।
বিএনপির এ নেতা বলেন, খুলনায় যদি কোনো সমস্যার সৃষ্টি হয় এর দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে এবং এতে প্রমাণিত হবে এ সরকার গণতন্ত্রকে বিশ্বাস করে না, আমাদের সভা-সমাবেশ তারা করতে দিতে চায় না।
খুলনার সমাবেশকে কেন্দ্র করে সমস্ত গণপরিবহণ বন্ধ করে দিয়েছে দাবি করে ফখরুল বলেন, এতে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা ব্যাহত করছে। এখানে প্রমাণিত হয়েছে সরকার চায় না একটি গণতান্ত্রিক উপায়ে মানুষ তাদের কথা, বক্তব্য, প্রতিবাদ প্রকাশ করুক। সংঘাতের দিকে ঠেলে দেওয়ার জন্য তারা চেষ্টা চালাচ্ছে।
তিনি আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে বলেন, এরা তো জনভীতি রোগে ভোগে। এরা মানুষ দেখলে ভয় পায়। এতে করে নির্বাচনগুলো সেভাবেই করে, যাতে করে দলগুলোকে বাদ দিয়ে করা যায়। সেই পদ্ধতিতেই নির্বাচন করে। অসুখটাই তাই, রোগটাই তাই। তারা ভয় পাচ্ছে এভাবে যদি জনগণ জেগে ওঠে, তাহলে উত্তাল পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। তখন তাদেরকে অত্যন্ত ধিকৃত অবস্থায় চলে যেতে হবে।
‘কী কারণে জনগণকে বাধা দিয়ে সমাবেশকে বন্ধ করতে চাচ্ছে? তার একটাই কারণ, মানুষ যদি বাড়তে থাকে তাদের ক্ষমতায় টিকে থাকার সম্ভব হবে না। জনগণের উত্তাল তরঙ্গে তাদেরকে ভেসে যেতে হবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা অমর্ত্য সেনের বইটি পড়েছেন। সেখানে ৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ নিয়ে তিনি লিখেছেন। ৭৪ সালের দুর্ভিক্ষটি ছিল মানবসৃষ্ট। অর্থাৎ সে সময় যারা ক্ষমতায় ছিলেন তাদের অব্যবস্থাপনা, অদক্ষতার কারণে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। আজকে সেই একই কারণে বাংলাদেশের ঘটনা ঘটছে। এ কথাগুলো আমরা বারবার বলে আসছি। বাংলাদেশের কৃষকদের প্রত্যেককে একটি করে সোনার মেডেল দেওয়া উচিত। কারণ তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণে আমরা কোনরকম খেয়ে বেঁচে আছি। আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ অথচ লাখ লাখ টন খাদ্য বিদেশ থেকে আমদানি করছে সরকার। এদের পুরো লক্ষ্যটি হচ্ছে লুট করা, চুরি করা। দুর্ভিক্ষের আগাম পদধ্বনি শুনতে পাওয়া যাচ্ছে। এখন প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলছেন অর্থাৎ তাদের এই যে ব্যর্থতা খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে, এটা এখান থেকেই বুঝা যায়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।