খুলনা বিভাগে একদিনে মৃত্যু ২৭, চিকিৎসার জন্য হাহাকার
গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে খুলনা বিভাগে ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় নতুন করে ১২৭৭ শরীরে শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে করোনা শনাক্তের সংখ্যা ৫৬ হাজার ২৭৫ এবং সুস্থ হয়েছে ৩৮ হাজার ৪০১ জন। ফলে খুলনা বিভাগে আজ মোট করোনা পজিটিভি রোগীর সংখ্যা ১৭ হাজার ৮৭৪।
অথচ এই বিভাগের ১০ জেলায় করোনা রোগীর চিকিৎসার জন্য শয্যাসংখ্যা মাত্র এক হাজার ১৯৩টি। ফলে হাসপাতালে ভর্তির নিয়ে চলছে হাহাকার। স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক জানান, দ্রুত শয্যাসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।
আজ বুধবার দুপুরে বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. রাশেদা সুলতানা জানান, খুলনা বিভাগে গতকাল মঙ্গলবার শনাক্ত ১২৭৭, সোমবার ১৩৬৭, রোববার ১৩৬৭, শনিবার ছিল ১২০২, শুক্রবার ৯৪৮ জন যা বৃহস্পতিবার ছিল এক হাজার ৩২২ জন।
খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক আরও জানান, ২৪ ঘণ্টায় খুলনায় সাত, সাতক্ষীরায় দুই, যশোরে তিন, ঝিনাইদহে দুই, কুষ্টিয়ায় নয়, চুয়াডাঙ্গায় এবং মেহেরপুরে তিনজন। মোট ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।।
স্বাস্থ্য বিভাগের পরিসংখ্যানে দেখে যায়, আজ পর্যন্ত খুলনা বিভাগের ১০ জেলা করোনা শনাক্ত হয়েছে ৫৬ হাজার ২৭৫ জন। এর মধ্যে সুস্থ ৩৮হাজার ৪০১ জন। ফলে এই মুহূর্তে করোনা পজিটিভি নিয়ে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা ১৭ হাজার ৮৭৪ জন। এই বিপরীতে এই বিভাগে করোনা চিকিৎসার শয্যাসংখ্যা এক হাজার ১৯৩ জন। ফলে নিজ বাসায় বা বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন ১৬ হাজার ৬৮১ জন রোগী। তাদের কাছ থেকে সংক্রমণ প্রতি নিয়ত ছাড়াচ্ছে।
একইভাবে খুলনা তিনটি হাসপাতালে শয্যাসংখ্যা ৩০০, তার বিপরীতে রোগী রয়েছে চার হাজার ৮১৬ জন।
গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. গাজী মিজানুর রহমান ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে জানান, হাসপাতালে শয্যার চেয়ে রোগী বেশি । আবার হাসপাতালের সামনে অ্যাম্বুলেন্সে রোগী ভর্তির জন্য হাহাকার করছে। তিনি অসহায়।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. সুহাষ রঞ্জন হালদার অক্ষেপ করে বলেন, ‘একটা রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত নতুন রোগীর ভর্তির জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এর চেয়ে ভয়াবহ চিত্র আইসিইউতে।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জেলাভিত্তিক করোনা সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিভাগে শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যার দিক থেকে খুলনা জেলা শীর্ষে রয়েছে ২৫৭ জন, তারপর কুষ্টিয়ায় ২১১ জন এবং যশোরে১৪৫ জন। ছোট জেলার মধ্যে চুয়াডাঙ্গায় ৮৯ ও বাগেরহাটে ৮৬ জন।
খুলনায় গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছে ৩৭৭ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৫৬৯৮ জন। আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ২৫৭ জন এবং সুস্থ হয়েছে ১০৮৮২ জন।
বাগেরহাটে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৯১ জনের। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হলো ৩৩৯০ জন। আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৮৬ জন এবং সুস্থ হয়েছে ২৩৫৪ জন।
সাতক্ষীরায় গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছে ৫০ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ৩৩৮৩ জন এবং মারা গেছে ৭০ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ২৪৮৮ জন।
যশোরে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছে ২৮১ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ১২৩৬৮ জন। এ সময় মারা গেছে ১৪৫ জন এবং সুস্থ হয়েছে ৭৪৭০ জন।
নড়াইলে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছে ৪০ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ২৬৭২ জন। মারা গেছে ৪৪ জন এবং সুস্থ হয়েছে ২০৩৬ জন।
মাগুরায় গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত ২৩ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৫৬১ জন। এ সময় মারা গেছে ২৭ জন এবং সুস্থ হয়েছে ১২৪৭ জন।
ঝিনাইদহে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছে ১১৫ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ৪৩৪৫ জন। মারা গেছে ৯০ জন এবং সুস্থ হয়েছে ৩০১৪ জন।
কুষ্টিয়ায় গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছে ১৮৯ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ৭৭২৫ জন। মারা গেছে ২১১ জন এবং সুস্থ হয়েছে ৫৫২৩ জন।
চুয়াডাঙ্গায় গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছে ৫৩ জনের। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ৩৩১৯ জন। মারা গেছে ৮৯ জন এবং সুস্থ হয়েছে ২১৭৩ জন।
মেহেরপুর গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছে ৫৮ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৮১৪ জন। আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৫১ জন এবং সুস্থ হয়েছে ১২১৪ জন।