গণতন্ত্রের চর্চা থাকলে সরকার ইতিহাস বিকৃত করতে পারত না : ড. মোশাররফ
দেশে সঠিক গণতন্ত্রের চর্চা থাকলে কোনো সরকার, কোনো দল অব্যাহতভাবে এইভাবে ইতিহাস বিকৃত করতে পারত না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
আজ মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) আয়োজনে ‘ইতিহাস বিকৃতি, ঘৃণার চাষ ও গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নিয়ে খন্দকার মোশাররফ হোসেন এ মন্তব্য করেন।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, যে জাতি তার সঠিক ইতিহাস জানে না, সে জাতি কখনো টেকসইভাবে উন্নতি করতে পারে না। সে জাতি বিশ্বব্যাপী কখনো নিজেকে সম্মানের জায়গায় প্রতিষ্ঠিত করতে পারে না। তাই আমাদের সঠিক ইতিহাস জানতে হবে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি, আজকে যারা ক্ষমতায় তারা গত ১২ বছর যাবত ফ্যাসিবাদী কায়দায় ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য অত্যন্ত নির্দয়ভাবে ইতিহাসকে বিকৃত করে চলেছে। আমি সব ইতিহাস বিকৃতির নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আমি বিশ্বাস করি দেশে সঠিক গণতন্ত্রের চর্চা থাকলে কোনো সরকার, কোনো দল অব্যাহতভাবে এইভাবে ইতিহাস বিকৃত করতে পারত না। সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ হতো, প্রমাণ দেওয়া হতো। অতএব এটা থেমে যেত। কিন্তু তারা ফ্যাসিস্ট সরকার হওয়ায় এটি পারছে।
আওয়ামী লীগ বারবার মিথ্যা বলে সেটাকে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলে মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, এই আওয়ামী লীগ বলছে, জিয়াউর রহমান যুদ্ধ করেননি, জিয়াউর রহমান পাকিস্তানের দালাল ছিলেন। সর্বশেষ তারা প্রশ্ন তুলেছে জিয়াউর রহমান গুলি করেছেন কিনা। আমি আপনাদের শুধু ২৫ মার্চের কালো রাতের ঘটনা বলি। ২৫ মার্চের কালো রাতের পরে যে যত কথা বলুক, রাজনৈতিক কোনো দিকনির্দেশনা ছিল না, এটা সত্যি। অষ্টম বেঙ্গল রেজিমেন্ট থেকে প্রথম বিদ্রোহ হয়েছিল এটা ইতিহাস সাক্ষ্য। এই ইতিহাস কেউ পাল্টাতে পারে না। সেই অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে কে বিদ্রোহ করেছিলেন? মেজর জিয়া।
বিএনপির এ নেতা বলেন, মেজর জিয়াউর রহমান অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রধান ছিলেন না। কর্নেল জানজুয়া অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রধান ছিলেন। জিয়াউর রহমার তার পরের ধাপের কর্মকর্তা ছিলেন। এই যে তিনি বাঙালি অফিসার ও সৈন্যদের সংগঠিত করে, সব অস্ত্র তাদের হাতে দিয়ে ২৫ মার্চ শেষ রাত অর্থাৎ ২৬ তারিখ ২.২৫ মিনিটে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে দাঁড়িয়ে বিদ্রোহ করেছিলেন সেটা কি ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা যাবে? সেই দিন জিয়াউর রহমান, কর্নেল অলি আহমেদ ও মীর শওকত তারা কি সেদিন তিনটি গোলাপ ফুল হাতে নিয়ে কর্নেল জানজুয়াসহ পাকিস্তানি অন্য সৈন্যদের গ্রেপ্তার করেছিলেন? না, নিশ্চয়ই সেদিন পশ্চিম পাকিস্তানি সৈন্যদের সঙ্গে যুদ্ধ করে তাদের পরাস্ত করা হয়েছিল।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আজকে আমরা সবাই একমত এই ফ্যাসিস্ট টাউট সরকারের হাত থেকে জনগণ আজ মুক্তি চায়। কারণ দেশে গণতন্ত্র নেই, স্বাধীনতা নেই, মানুষের কথা বলার অধিকার নেই, রাজনৈতিক দলগুলোর সভা-সমাবেশ করার ক্ষমতা নেই। এমনকি সংবাদপত্রের স্বাধীনতাও আজ অনুপস্থিত।
সাবেক এই স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সাংবাদিকরা যে লিখতে চাননি, এটাও সঠিক না। তারা কম চেষ্টা করেননি। কিন্তু যারা লিখতে চায় তারা কিভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছে তা আপনারা দেখেছেন। মাহমুদুর রহমানকে দেশ ছাড়তে হয়েছে। অনেক সাংবাদিককে জেল খাটতে হয়েছে। আর এই ধরনের সরকার থাকলে এটা চলতেই থাকবে। তাই আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হই। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে হটিয়ে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করি।