গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিন, অন্যথায় বিপদ অপেক্ষা করছে : অলি আহমদ
সরকারের উদ্দেশে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট ডক্টর কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রম বলেছেন, সময় থাকতে সচেতন হোন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে জনগণকে রেহাই দিন। গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিন। সুশাসন ও ন্যায়বিচার কায়েম করুন। অন্যথায় সামনে বিপদ অপেক্ষা করছে। জনগণের মনোভাব বুঝার চেষ্টা করুন। তাহলে সঠিক উত্তর ও পন্থা পেয়ে যাবেন। ক্ষমতায় টিকে থাকার লোভ বিপদের কারণ হতে পারে। অতীত অভিজ্ঞতা তাই বলে।
রাজধানীর পূর্ব পান্থপথে আজ শনিবার (১৮ মার্চ) এলডিপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক প্রতিবাদ সমাবেশে অলি আহমদ এসব কথা বলেন।
অলি আহমদ বলেন, দেশে আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটেছে। কথায় কথায় মারামারি খুনাখুনি। সবার মধ্যে অস্থিরতা। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রলীগ দ্বারা ছাত্রছাত্রী নির্যাতন ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড অহরহ ঘটছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ইয়াবা ব্যবসায়ীরা আলিশান জীবন-যাপন করছে। তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে।
অলি আহমদ আরও বলেন, গণমাধ্যমের খবর দেশে বিপুল অবৈধ অস্ত্র ঢুকছে। সরকারের চৌকস পুলিশ বাহিনী সে তথ্য জানে না এমনটা হতে পারে না। আর যদি সরকার জানে এমন হচ্ছে তবে কেন এই অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হচ্ছে না। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, দেড় লাখ অস্ত্রের হালনাগাদ তথ্য নেই। অথচ ২০১৮ সালে পুলিশ-বিজিবি এবং সন্ত্রাসীরা অস্ত্র নিয়ে দিনের ভোট রাতে সম্পন্ন করেছিল। পুলিশ ও র্যাব জানে, অবৈধ অস্ত্র কোথায় আছে। দেরিতে হলেও এই অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের উদ্যোগ নিতে হবে।
এলডিপি প্রধান বলেন, কিছুদিন আগেও আমি বলেছিলাম ঋণ খেলাপিরা অর্থনীতি ধ্বংস করবে। এখন দেখি ঋণ খেলাপি আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। মধ্যবিত্ত ও গরিবের টাকা লুণ্ঠন করছে। দেশে এখন লুটপাটের প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছে। অর্থ সংকটের কারণে গত ৭ মাসে এডিবি বাস্তবায়ন মাত্র ২৮ শতাংশ। শূন্য অগ্রগতি নিয়ে বছর পার ২৩৬ প্রকল্পের যা বিগত ৭ বছরে সর্বনিম্ন। সরকারের মোট ঋণ সাড়ে ১৩ লাখ কোটি টাকা। তন্মধ্যে বৈদেশিক ঋণ ৪,৯৫,৭৯৪ কোটি টাকা। ব্যাংক ঋণ ৪,১৯,৬২৭ কোটি টাকা, সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ ৩,৬৫,৫৩৬ কোটি টাকা। জিপিএফ থেকে ৬২,৭৪০ কোটি টাকা, বিগত অর্থবছরে সুদ বাবদ ব্যয়- ৭৫ হাজার কোটি টাকা। বর্তমান অর্থবছরে সুদ বাবদ ব্যয় হবে ৭৩ হাজার কোটি টাকা। সুদে বিপুল অর্থ ব্যয়ের কারণে রাজস্ব হ্রাস পাচ্ছে। আমদানি-রপ্তানি হ্রাস পাচ্ছে। টাকার অবমূল্যায়ন ২৬ শতাংশ হয়েছে। এ সবকিছু বিবেচনা করলে বুঝা যায় অর্থনৈতিক অবস্থা সুখকর নয়।
কর্নেল অলি বলেন, বায়ুদূষণ ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন মহানগরে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অতিক্রম করেছে। আগামী ৬ বছর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে। ঢাকা প্রায় সময় বায়ুদূষণে ১ নম্বর অবস্থানে আছে। এ অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য আমাদের সবাইকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। আবহাওয়া, অবৈধ অস্ত্র ও নাজুক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কাউকে ছাড় দেবে না। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সর্বনিম্ন পর্যায়ে। দুর্নীতি অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। আমরা কি এই ধরনের স্বাধীন দেশ কায়েম করার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম। যুবসমাজকে কোনো সদুত্তর দিতে পারি না।
সভাপতির বক্তব্যে এলডিপির মহাসচিব ডক্টর রেদোয়ান আহমদ বলেন, পৃথিবীর কোনো স্বৈরশাসক টিকে থাকতে পারেনি। আওয়ামী লীগও পারবে না। আওয়ামী লীগ ও গণতন্ত্র একসাথে চলে না। গত ১৪ বছর ধরে তারা দুর্নীতি ও চাপাবাজি করে ক্ষমতায় টিকে আছে। আগামীতে এই সরকার আর টিকতে পারবে না।
এলডিপি মহাসচিব ডক্টর রেদোয়ান আহমদের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন- এলডিপির প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. নেয়ামূল বশির, ড. আওরঙ্গজেব বেলাল, অ্যাডভোকেট এসএম মোরশেদ, ভাইস প্রেসিডেন্ট মাহে আলম চৌধুরী, উপদেষ্টা অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান, অধ্যাপিকা মোছা. কারিমা খাতুন, যুগ্ম মহাসচিব বিল্লাল হোসেন মিয়াজি, আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবুল হাসেম, প্রচার সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিলু, ঢাকা মহানগর পশ্চিম এলডিপির সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা সাহাদাত হোসেন মানিক, উত্তর এলডিপির সাধারণ সম্পাদক অবাক হোসেন রনি, ঢাকা মহানগর পূর্বের সাধারণ সম্পাদক অসীম ঘোষ, গণতান্ত্রিক যুবদলের সভাপতি আমান সোবহান, গণতান্ত্রিক শ্রমিক দলের সভাপতি মামুন, গণতান্ত্রিক স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি খালিদ বিন জসিম, গণতান্ত্রিক আইনজীবী ফোরামের সভাপতি অ্যাডভোকেট নূরে আলম, গণতান্ত্রিক ছাত্রদলের সভাপতি মেহেদী হাসান মাহবুব, গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক দলের সভাপতি খোকন, এলডিপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আলী আজগর বাবুসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।