গণসংযোগে আইভী-তৈমূরের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ
ভোটারদের মন গলাতে গণসংযোগে মেয়র পদপ্রার্থী আইভী ও তৈমূর কেউই পিছিয়ে নেই। পিছিয়ে নেই কাইন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের নারী প্রার্থীরাও।
আজ শনিবার সকাল থেকেই আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী সিদ্ধিরগঞ্জে তিন ও চার নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগ করেন। অপরদিকে বন্দরের ২১ ও ২২ নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগ করেন স্বতন্ত্র মেয়র পদপ্রার্থী অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার।
এ সময় আইভীকে সিদ্ধিরগঞ্জে তিন ও চার নম্বর ওয়ার্ডের দলীয় ভোটাররা ফুলের পাঁপড়ি ছিটিয়ে অভ্যর্থনা জানায়। তিনি নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে দলমতের ঊর্ধ্বে থেকে নাগরিকদের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট প্রার্থনা করেন। বিগত সময়ের উন্নয়ন প্রতিপক্ষ মেয়র পদপ্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকারের চোখে পড়ছে না উল্লেখ করে তাঁর সমালোচনা করেন আইভী।
আইভী বলেন, আমার সিটিবাসীকে ইংরেজি নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আমি আজ নির্বাচনি প্রচারণা শুরু করেছি ৩ নম্বর ওয়ার্ডে। আমার সঙ্গে আমার দলের লোকজন আছেন, আওয়ামী লীগের লোকজন, সাধারণ মানুষ এবং মুক্তিযোদ্ধারা আছেন। আমি আজ এখানে ২টা পর্যন্ত প্রচারণা চালাব। এরপর আমি ৪ নম্বর ওয়ার্ডে যাব। আমার মনে হয়েছে, এখানে-ওখানে সারা পেয়েছি। এটা আসলে নৌকারই জায়গা। আমি মনে করি, এখানে দলমতের ঊর্ধ্বে ওঠে সবাই আমাকে ভোট দিবে ইনশা আল্লাহ। উনি (তৈমূর) না জেনে, উনাকে তো কেউ শিখিয়ে দিচ্ছে, শেখানো বুলি উনি বলছেন। আসলে উনার যদি ই-টেন্ডার সম্পর্কে অভিজ্ঞতা থাকত, তাহলে উনি এই অভিযোগটাই আনতে পারতেন না।
দ্বিতীয়ত কোনো উন্নয়ন যদি না হয়ে থাকে, এই যে আপনারা যে হেঁটে আসলেন এই রাস্তাটা, এটা কিন্তু সিটি করপোরেশন থেকেই করা। উনি যে প্রচারণা চালাচ্ছেন, ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে যে রাস্তার উপর দিয়ে যাচ্ছেন সব রাস্তাই তো এনসিসির করা। আমি জানি না উনি কেন এ অভিযোগ করছেন। হয়তো নির্বাচনের জন্য করছেন।
আমি সারাক্ষণই মাঠে থাকি। আমার সঙ্গে জনগণের যোগাযোগ। আমি বাড়তি কোনো সুযোগ দলীয়ভাবে নেইনি এবং আমি নিবও না। প্রশাসন তো আমাকে সেভাবে হেল্প করে নাই।
কেন একজন নতুন ভোটার আপনাকে ভোট দেবে এ প্রশ্নের জবাবে আইভী বলেন, আমি মনে করি এই যে তরুণ প্রজন্মের জন্য প্রত্যেকটি জায়গায় চেষ্টা করেছি খেলার মাঠ করে দেওয়ার জন্য; যদিও এখানে তেমন কোনো জায়গা নাই। সরকারি জায়গা অ্যাকোয়ার করে আমি করার চেষ্টা করছি। তা ছাড়া তরুণ প্রজন্ম দেখেছে আমি স্বচ্ছভাবে রাজনীতি করি। আমি সাধারণত মিথ্যার আশ্রয় নেই না এবং আমি কখনও চাঁদাবাজি বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত না।
বন্দরে ২১ ও ২২ নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগকালে তৈমূর আলম জানান, সিটি করপোরেশনের ব্যর্থতার কারণে জনগণ আজ ক্ষুব্ধ। তাই নগরবাসী তাঁকে সমর্থন জানাচ্ছেন। তিনি নির্বাচিত হলে জনগণের দুর্ভোগ লাঘব করার আশ্বাস দেন। ট্যাক্স, ওয়াসার পানির সমস্যা, ট্রেড লাইসেন্স বিধি ও জন্মনিবন্ধন জটিলতার অবসান ঘটাবেন বলে তিনি ভোটারদের আশ্বাস দেন।
তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, সিটি করপোরেশনের ব্যর্থতায় আজকে নারায়ণগঞ্জবাসী ক্ষুব্ধ। এই ক্ষুব্ধতার কারণেই আমার সঙ্গে জনগণের সমর্থন অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। আমি আল্লাহপাকের মেহেরবাণীতে নির্বাচিত হলে জনগণের দুর্ভোগ যেভাবে হোক দূর করব। এর আগে বহু প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে গিয়ে আমি যেভাবে দায়িত্ব পালন করেছি, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে অনুরূপ দায়িত্ব পালন করব ইনশা আল্লাহ।
আমি যে অভিযোগগুলো করি এর সাক্ষী হলো নারায়ণগঞ্জ নগরবাসী। ট্যাক্স বৃদ্ধি পেয়েছে কি না, এটা নগরবাসী বলতে পারবে। পানির জন্য আলাদা করে দেড় লাখ টাকা নেয় কি না, ট্রেড লাইসেন্স ফি বৃদ্ধি পেয়েছে কি না এবং জন্ম নিবন্ধনের জন্য জনদুর্ভোগ বৃদ্ধি পেয়েছে কি না—এটা নগরবাসীকে জিজ্ঞাসা করবেন, উনারা ভালো বলতে পারবেন। আমি সত্য বলছি না মিথ্যা বলছি—এটা নগরবাসী বলতে পারবেন। এই জয়টা তো জনগণের জয়। জনগণের সঙ্গে সরকারের নির্বাচন চলছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস সরকারের ব্যর্থতা জনগণের পক্ষে আসবে।
আগামীকালকে নির্বাচন কমিশনার আসবেন তাকে পরিষ্কার ভাষায় বলব, যদি তারা নিরপেক্ষভাবে ভূমিকা পালন করতে না পারেন, যদি কোনো বিশৃঙ্খলা হয়—তার জন্য তারা দায়ী থাকবেন।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে ভোটগ্রহণের আর মাত্র ১৫ দিন বাকি। ২৭টি ওয়ার্ডে পাঁচ লাখ ১৭ হাজারের অধিক ভোটার তাদের পছন্দের মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী সদস্যদের নির্বাচিত করবেন আগামী ১৬ জানুয়ারি।