‘গরিবের ডাক্তার’ নলিনী দাস স্মরণসভা
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ‘গরিবের ডাক্তার’ খ্যাত প্রয়াত নলিনীরঞ্জন দাসের স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে তাঁর পরিবার প্রতিষ্ঠিত উপজেলার শিমুলকান্দি উচ্চবিদ্যালয় এই স্মরণসভার আয়োজন করে।
চলতি বছরের ৩ এপ্রিল মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী, ‘গরিবের ডাক্তার’ খ্যাত নলিনীরঞ্জন দাস বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভোগে পরলোক গমন করেন।
বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হাজি আফিকুল ইসলাম হারিছের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত স্মরণসভায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য দেন বিএনপিদলীয় সাবেক এমপি, বিশিষ্ট লেখক, কলামিস্ট মো. শফিকুল ইসলাম, প্রয়াত ডা. নলিনীরঞ্জন দাসের ছোটভাই সম্প্রচার বিশেষজ্ঞ মনোরঞ্জন দাস, বিএনপিনেতা ডাক্তার আব্দুল ওয়াহাব, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজাহারুল ইসলাম প্রমুখ।
এ সময় বক্তারা বলেন, প্রয়াত ডা. নলিনীরঞ্জন দাস বহুগুণের অধিকারী ছিলেন। ‘সাদা মনের মানুষ’ বলতে যা বুঝায়, তিনি ছিলেন তেমন। কোনো ধর্ম-বর্ণ-গোত্রে নিজেকে আবদ্ধ করে না রেখে তিনি ছিলেন একজন ‘মানুষ’। সব মানবিক গুণে তিনি ছিলেন গুণান্বিত। যা বর্তমান কালের জন্য খুবই বিরল।
বক্তারা আরও বলেন, ডা. নলিনীরঞ্জন দাস তাঁর ডাক্তারি পেশার শুরু থেকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বিনা পয়সায় রোগী দেখেছেন। ওষুধের মূল্য কেউ দিলে নিয়েছেন, না দিলে কখনোই চেয়ে নেননি। ফলে বহুবার ফার্মেসি দিলেও, তাঁর সেই ব্যবসা লাভজনক হয়নি। পুঁজি হারিয়ে তিনি বারংবার দেউলিয়া হয়েছেন। কিন্তু এতে কখনও তাঁর কোনো দুঃখবোধ হয়নি। এটিকে বরং তিনি মানবসেবার ব্রত হিসেবে নিয়েছিলেন। ঐতিহ্যবাহী শিমুলকান্দি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা তাঁর পরিবার। গ্রামের অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর লোকজনের সন্তানদের শিক্ষিত করে গড়ে তোলার প্রয়াসে বাবার দেওয়া স্কুলটি তিনি আমৃত্যু দেখ-ভাল করেছেন। পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ছিলেন বহু বছর। তাঁর রোজগারের বেশিরভাগ টাকা তিনি অকাতরে বিলিয়েছেন এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কল্যাণে।
মহান মুক্তিযুদ্ধে ভৈরবে হানাদার ও রাজাকার প্রতিরোধ কমিটি গঠনের প্রথম সভাটি হয় ডা. নলিনীরঞ্জন দাসের বাড়িতে। সেই কারণে পাকবাহিনী তাঁর বাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দেয়। রাজাকাররা হামলা চালায় সেখানে। কিন্তু তাঁকে এসব হামলা পিছু হটাতে পারেনি লক্ষ্য থেকে। স্বাধীনতাযুদ্ধের পুরো ৯ মাস ডা. নলিনীরঞ্জন দাস যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে গেছেন বিনা পয়সায়।
বক্তারা বলেন, ডা. নলিনীরঞ্জন দাস সমাজ বা রাষ্ট্র থেকে কখনও কিছু পাওয়ার আশা করতেন না। তিনি কেবলি দেওয়ার চেষ্টায়রত ছিলেন। রাগ, ক্রোধ, অহমিকা তাঁকে কখনোই স্পর্শ করত না। ধীর ও অল্পভাষী মানুষ ছিলেন তিনি। পেশার বাইরে বেশিরভাগ সময় তিনি ব্যয় করতে পড়াশোনা করে। তাই তাঁর জানার পরিধি ছিল বহুমুখী ও প্রগাঢ়।