গাজীপুরে ত্রিভুজ প্রেমের জেরে খুন হন কলেজছাত্র জয়
গাজীপুরে ক্লুলেস কলেজছাত্র খুনের ঘটনার প্রায় এক বছর পর রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। বুধবার বিকেলে গাজীপুর পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন।
ত্রিভুজ প্রেমের জেরে কলেজছাত্র প্রেমিককে মারধর করে চলন্ত গাড়ি থেকে ফেলে দিয়ে খুন করে প্রেমিকা, প্রেমিকার প্রেমিকসহ তাদের বন্ধুরা। এ খুনের ঘটনায় এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলেও জানান পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার।
গ্রেপ্তারকৃত যুবকের নাম তানহা জুবায়ের (২৫)। তার বাড়ি ঢাকার আশুলিয়া থানাধীন বাড়ইপাড়া এলাকায়।
পিবিআইয়ের ওই কর্মকর্তা জানান, গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর দুপুরে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে গাজীপুরের কাশিমপুর থানাধীন তেঁতুইবাড়ী এলাকার ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিমিটেডের (চ্যানেল আই) বাংলোর সামনে থেকে কলেজছাত্র হাবিবুল বাশার জয়কে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। পরে তাকে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে এলাকাবাসী। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
ঢাকার আশুলিয়া থানাধীন কবিরপুর এলাকার রহিজ উদ্দিনের ছেলে হাবিবুল বাশার জয় (২০) স্থানীয় আলহাজ আব্দুল মান্নান ডিগ্রি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। এ ঘটনায় নিহত ছাত্রের বড় ভাই বাদী হয়ে এজাহারনামীয় দুজন ও অজ্ঞাত পরিচয় তিন-চারজন আসামির বিরুদ্ধে কাশিমপুর থানায় এজাহার দায়ের করেন। প্রায় দুই মাস মামলাটি তদন্ত করে কোনো রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি)।
পরবর্তী সময়ে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের নির্দেশে চাঞ্চল্যকর ও ক্লুলেস এ খুনের মামলা তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় গাজীপুরের পিবিআইকে। পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তা তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে এ ঘটনায় জড়িত তানহা জুবায়েরকে আশুলিয়ার বাড়ইপাড়া এলাকা থেকে গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত ভোররাতে গ্রেপ্তার করেন। আজ বুধবার আদালতে তিনি নিজেকে জড়িয়ে এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত অপর আসামিদের নাম উল্লেখ করে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ক্লুলেস চাঞ্চল্যকর এ কলেজছাত্র খুনের রহস্য উন্মোচন হয়েছে।
পিবিআই কর্মকর্তা আরও জানান, গত বছর করোনা মহামারির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় কোচিংয়ে ক্লাস করতে গিয়ে কলেজছাত্র হাবিবুল বাশার জয়ের সঙ্গে স্থানীয় একটি স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী নিলুফা ইয়াসমিন ঝুমুরের পরিচয় হয়। সেই পরিচয়ের সূত্রধরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। কিছুদিন পর ঝুমুর রাজধানীর একটি বেসরকারি পলিটেকনিক কলেজের ছাত্র সজিব হোসেনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে জয়ের সঙ্গে ঝুমুরের বিরোধ দেখা দেয়। বিষয়টি জানতে পেরে ঝুমুরের অপর প্রেমিক সজীব তার বন্ধুদের নিয়ে জয়কে মারধরের পরিকল্পনা করেন।
পরিকল্পনা অনুযায়ী গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর বাড়ইপাড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে সহযোগীদের নিয়ে ঠিকানা পরিবহণের একটি বাসে উঠেন সজিব। পথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে কবিরপুর থেকে ঝুমুরকে একই বাসে উঠান সজিব। এ সময় ঝুমুরের পিছু নিয়ে একই বাসে উঠেন জয়। বাসে জয়ের এক সিট আগে পাশাপাশি বসে সজিবের কাঁধে মাথা রাখে ঝুমুর। এ সময় তারা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে বসে। এতে জয় উত্তেজিত হয়ে উঠলে তার সঙ্গে সজিবের কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতি শুরু হয়। এ সময় সজিবের সহযোগীরা জয়কে এলোপাতাড়ি মারপিট করে বাসের বাম পাশের পিছনের জানালা দিয়ে চলন্ত গাড়ি থেকে ফেলে দেয়।