গাজীপুরে রফিকুল ইসলাম মাদানী আরও দুদিনের রিমান্ডে
রফিকুল ইসলাম মাদানীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আরও একটি মামলায় দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গাজীপুর মেট্রোপলটিন পুলিশের (জিএমপি) বাসন থানার একটি মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শেখ নাজমুন নাহার এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে গাছা থানার এক মামলায় দুদিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গতকাল মঙ্গলবার রফিকুল ইসলাম মাদানীকে কারাগারে পাঠানো হয়। জিজ্ঞাসাবাদকালে তাঁর কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য পেয়েছে পুলিশ।
জিএমপির সহকারী কমিশনার শুভাশীষ ধর জানান, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তারকৃত রফিকুল ইসলাম মাদানীকে বাসন থানার একটি মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে গত ১৮ এপ্রিল আদালতে আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সাখাওয়াত হোসেন। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের বিচারক আজ বুধবার ভার্চুয়ালি শুনানি করেন। শুনানি শেষে রফিকুল ইসলাম মাদানীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন বিচারক।
বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ কামরুল ফারুক জানান, গত ১১ এপ্রিল গাজীপুর সিটি করপোরেশনের টেকনগরপাড়া এলাকার কফিল উদ্দিনের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান এ মামলা দায়ের করেন। মামলায় তিনি মাদানীর বিরুদ্ধে ওয়াজ মাহফিলের নামে ধর্মীয় বক্তব্যের আড়ালে রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য প্রদান করে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার অভিযোগ করেন। এতে তাঁর বিরুদ্ধে মারাত্মক মিথ্যা, ভয়ভীতি দেখিয়ে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, মানহানিকর তথ্য প্রকাশ এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি করার মতো অপরাধে সহায়তার অভিযোগ আনা হয়।
শুভাশীষ ধর আরও জানান, এর আগে গাছা থানায় দায়েরকৃত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপর একটি মামলায় রফিকুল ইসলাম মাদানীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। ওই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁকে গত রোববার দুপুরে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারগার-২ থেকে গাছা থানায় নেওয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তাঁর কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য পেয়েছে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গতকাল মঙ্গলবার আদালতে হাজির করা হলে আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
গাছা থানার ওসি মো. ইসমাইল হোসেন জানান, দুই দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে রফিকুল ইসলাম মাদানী অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। তিনি হেফাজতকে সংগঠিত করতে নানা কর্মসূচি, সরকারবিরোধী নানা কর্মপরিকল্পনা ও কার্যক্রম পরিচালনার কথা জানিয়েছেন। এর মধ্যে একটি ছিল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশে আগমন প্রতিহত করা। ওই কাজে জড়িত স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় অনেক নেতার নামও বলেছেন তিনি। তবে তদন্তের স্বার্থে সেসব তথ্য প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না।
গত ৭ এপ্রিল ভোররাতে রফিকুল ইসলাম মাদানীকে নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা থানার লেটিরকান্দা এলাকার বাড়ি থেকে আটক করেন র্যাব-১-এর সদস্যরা। তিনি ওই এলাকার মৃত সাহাব উদ্দিনের ছেলে। ওই দিন রাতেই গাজীপুর মহানগরীর গাছা থানায় তাঁকে হস্তান্তর করা হয়। ৮ এপ্রিল তাঁর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের করেন র্যাব-১-এর নায়েব সুবেদার (ডিএডি) মো. আব্দুল খালেক। এ মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়। আটককালে তাঁর কাছ থেকে চারটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। তিনি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে রাষ্ট্রবিরোধী বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। এ ছাড়া জব্দকৃত মোবাইল ফোনে আপত্তিকর ও কুরুচিপূর্ণ ‘এডাল্ট কনটেন্ট’ অশ্লীল ভিডিও চিত্র পাওয়া গেছে। এসব ছবি ও ভিডিও তিনি নিয়মিত দেখতেন এবং সেগুলো রাখতেন এবং লিংক দিতেন। এ জন্য তাঁর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২-এর ৮(৫)(ক) ধারা সংযোজন করা হয়েছে।
রফিকুল ইসলাম মাদানী বিভিন্ন মাহফিলে রাষ্ট্র তথা সরকারবিরোধী ও আইনশৃঙ্খলা পরিপন্থি উসকানি ও বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ডিজিটাল মাধ্যমে প্রদান করেন। যা তার নির্দেশে ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পায়। তাঁর উসকানমিূলক বক্তব্যের কারণে তাঁর অনুসারীরা গত ২৬ মার্চ বায়তুল মোকাররম মসজিদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও নাশকতা করে। এতে হতাহতের ঘটনাও ঘটে বলেও মামলায় অভিযোগ করা হয়।
এ ছাড়া রফকিুল ইসলাম মাদানী বিভিন্ন সময়ে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ও সুনাম ক্ষুণ্ণ করা, জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি, সামাজিক তথা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিঘ্ন ঘটানো, আইনশৃঙ্খলা বিনষ্ট করা, প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে শত্রুতাসহ সরকারের প্রতি ঘৃণারভাব সৃষ্টি এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার উদ্দেশ্যে দেশের সরল ও ধর্মানুরাগী মানুষের ধর্মীয় মূল্যবোধ ও ধর্মী অনুভূতিতে আঘাত করে বক্তব্য প্রদান করেন, যা ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। তিনি বাড়িয়ালী এলাকাস্থিত নিজের ‘মারকাজুল নূর আল ইসলামিয়া মাদ্রাসায়’ বসে দেশদ্রোহ ও সরকারবিরোধী কার্যকলাপ এবং নাশকতা কর্মকাণ্ড ঘটানোর পরিকল্পনা করতেন। তিনি সরাসরি সশস্ত্র জিহাদের ডাক দেন এবং এখনই জিহাদের উপযুক্ত সময় বলে সবাইকে জিহাদে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে উসকানির ভিডিও চিত্র ফেসবুক, ইন্টারনেট ও ইউটিউবের বিভিন্ন চ্যানেল ও পেজে আপলোডের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন বলে দায়েরকৃত মামলায় উল্লেখ করা হয়।