গার্ডার পড়ে ৫ জন নিহত : অভিযুক্তদের ধরতে মাঠে নেমেছে র্যাব
রাজধানীর উত্তরায় নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের গার্ডার পড়ে পাঁচজন নিহতের ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। আজ মঙ্গলবার দুপুরে র্যাব-১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন এ তথ্য জানিয়েছেন। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তিনি।
আব্দুল্লাহ আল মোমেন বলেন, ‘আমাদের টিম এরইমধ্যে অভিযুক্তদের ধরতে অভিযান শুরু করেছে। আশা করছি, দ্রুতই আমরা তাদের গ্রেপ্তার করতে পারব।’
গতকাল সোমবার ফ্লাইওভারের গার্ডার পড়ে পাঁচজন নিহতের ঘটনায় অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে মামলা হয়েছে। এতে ক্রেন পরিচালনাকারী চালক, প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও নিরাপত্তার দায়িত্বপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, রয়েছে অজ্ঞাত ব্যক্তিও। গতকাল সোমবার দিনগত মধ্যরাতে উত্তরা পশ্চিম থানায় এই মামলা করা হয়। মামলাটি করেন নিহত ফাহিমা আক্তার ও ঝর্না আক্তারের ভাই আফরান মণ্ডল বাবু।
এর আগে উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মোহসীন তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ‘পাঁচজন নিহতের ঘটনায় মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় গুরুত্বসহকারে তদন্ত শুরু হয়েছে। জড়িতদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান চলছে।’
সোমবার বিকেলে উত্তরার জসিমউদ্দিন এলাকায় বিআরটি প্রকল্পের একটি গার্ডার ক্রেন দিয়ে তোলার সময় প্রাইভেটকারের ওপর পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাইভেট কারে থাকা পাঁচজনের মৃত্যু হয়। যারমধ্যে দুজন শিশুও রয়েছে।
জানা গেছে, গাড়িটিতে মোট সাতজন যাত্রী ছিলেন। এরমধ্যে দুই শিশু, দুই নারী ও একজন পুরুষ মারা গেছেন। শুধু বেঁচে আছেন নবদম্পতি—রিয়া আক্তার (১৯) ও রেজাউল করিম হৃদয় (২৬)। তাঁরা রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
নিহতরা হলেন—রুবেল (৫০), ঝর্ণা (২৮), ফাহিমা, জান্নাত (৬) ও জাকারিয়া (২)। তাদের মরদেহ রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।
স্বজনরা জানান, ফাহিমা হলেন নববধূ রিয়া মনির মা। আর ঝর্ণা তাঁর খালা। রুবেল সম্পর্কে ফাহিমা-ঝর্ণার বেয়াই।
ফাহিমা-ঝর্ণাদের বাড়ি জামালপুরের ইসলামপুরে। আর রুবেলের বাড়ি মেহেরপুরে।
নিহত ঝর্ণার ভাই আফরান মণ্ডল বাবুর করা মামলার এজাহারে বলা হয়, প্রত্যক্ষদর্শীদের মাধ্যমে বাবু জানতে পারেন, বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পে একটি চাইনিজ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিজিজিসি কাজ করছে। এই কাজের অংশ হিসেবে ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের ঢাকা থেকে গাজীপুরগামী রাস্তায় বক্সগার্ডার একটি ক্রেনের সাহায্যে লোবেট ট্রাকে ওঠানো হচ্ছিল। প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা না নিয়ে সড়কে যান চলাচলের সময় ঝুঁকিপূর্ণভাবে কাজ করা হচ্ছিল। তাঁর স্বজনদের বহনকারী গাড়িটি ঘটনাস্থলে পৌঁছালে বক্স গার্ডার গাড়িটির চালকের আসনসহ পেছনের আসনের অর্ধেকের বেশি অংশ জুড়ে আছড়ে পড়ে। ফলে ঘটনাস্থলেই গাড়িটি দুমড়ে মুচড়ে যায়। এতে গাড়িতে থাকা সাতজনের মধ্যে পাঁচজন নিহত হন।
এজহারে আরও উল্লেখ করা হয়, আসামিদের অবহেলার কারণে মৃত্যু হয়েছে। ক্রেনের চালক, সিজিসিসি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত অজ্ঞাত ব্যক্তিদের অবহেলার কারণে এ ঘটনা ঘটেছে।
এদিকে এ ঘটনায় সরকারের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিনুল্লাহ নূরী। তিনি বলেছেন, ‘কমিটিকে যতদ্রুত সম্ভব প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।’