‘গায়েবি কান্নার’ আওয়াজ খুঁজে বের করল পুলিশ
রহিম মোল্লা (ছদ্মনাম) প্রায় প্রতিরাতে ‘গায়েবি কান্না’র আওয়াজ শুনতে পান। বাড়ির আশপাশ থেকে এই আওয়াজ শুনতে পান তিনি। কিন্তু কয়েকদিন চেষ্টা করেও কীসের আওয়াজ, কোথা থেকে আসে তা বুঝতে পারছিলেন না। এ ঘটনা মিরপুর-২ এর ব্লক-বিতে।
এক সময় রহিম সিদ্ধান্ত নেন বিষয়টি পুলিশকে জানাবেন। সে অনুযায়ী, বাংলাদেশ পুলিশের ফেসবুক পাতার ইনবক্সে বিষয়টি জানান তিনি। রহিম মোল্লার বার্তাটি পেয়ে পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স উইং থেকে মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোস্তাজিরুর রহমানকে নির্দেশনা দেওয়া হয় বিষয়টি তদন্ত করার জন্য।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ওসি মোস্তাজিরুর রহমান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. নাজমুল হক ও এসআই মো. আব্দুর রাজ্জাককে বিষয়টি তদন্ত করার নির্দেশ দেন। নির্দেশনা পেয়ে তাঁরা দুজন সাদা পোশাকের টিম নিয়ে সেখানে যান।
আজ শুক্রবার পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি মিডিয়া সোহেল রানা স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তাঁদের দুজনের প্রত্যক্ষ তদারকিতে সাদা পোশাকের টিমটি পরপর দুদিন রাতের বেলা সম্ভাব্য কয়েকটি বিল্ডিং ও আশপাশের এলাকায় খোঁজ রাখেন। অবশেষে ‘গায়েবি কান্নার’ রহস্যের জট খুলতে সক্ষম হয় পুলিশ।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, একটি হাউজিং কমপ্লেক্সের ভেতরে পরিত্যক্ত একটি ভবনে মো. জাহাঙ্গীর নামের এক ব্যক্তি তাঁর দুই বাচ্চা ও স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করেন। তাঁদের গ্রামের বাড়ি ভোলার চরফ্যাশনে। ওই ভবনের পরিবেশটা বেশ ভূতুরে। এখানে জাহাঙ্গীর প্রায় প্রতিদিন তাঁর সন্তানদের হাত-পা বেঁধে মারপিট করতেন। তারই চিৎকার শোনা যেত দূর থেকে। স্ত্রী ও বাচ্চাদের অভিযোগের ভিত্তিতে জাহাঙ্গীরকে আটক করেছে পুলিশ। এ বিষয়ে উপযুক্ত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
বিকেলে উপপরিদর্শক (এসআই) মো. নাজমুল হক এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ঘটনা আরও কয়েকদিন আগের। আমরা ওই এলাকায় দুদিন গিয়ে তল্লাশি করে বুঝতে চেষ্টা করি ঘটনাটা আসলে কী? তারপর দেখলাম একটি নির্মাণাধীন ভবনের পাশের জমিতে টিনের চাল দিয়ে বসবাস করছিলেন মো. জাহাঙ্গীর। জাহাঙ্গীরের আট ও ১০ বছরের দুটি বাচ্চা আছে। ওই বাচ্চারা দুষ্টুমি করত। দুজন মিলে মারামারি করত। কথা বলে জানতে পেরেছি, জাহাঙ্গীর নিরক্ষর। সেজন্য তিনি না বুঝে হয়তো সন্তানদের মারপিট করতেন।’
এসআই আরও বলেন, ‘তিন-চারদিন আগে আমরা জাহাঙ্গীরকে থানায় নিয়ে আসি। পরে বাবাকে ছাড়াতে জাহাঙ্গীরের সন্তানরা উঠেপড়ে লাগে। এক সময় আমরা মুচলেকা নিই তাঁর কাছ থেকে। তিনি আমাদেরকে জানান, আর সন্তানদের নির্যাতন করবেন না। পরে আমরা তাঁকে ছেড়ে দিই। ওই বাড়ির মালিক কেয়ারটেকার হিসেবে জাহাঙ্গীরকে থাকতে দেন।’