‘গুলিবিদ্ধ মেজর সিনহা পানি পানি বলে কাতরাচ্ছিলেন’
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মুহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার দ্বিতীয় দফায় চতুর্থ দিনে আজ বুধবার সাক্ষ্য দিয়েছেন ঘটনাস্থলের পাশের বায়তুল নূর জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ শহীদুল ইসলাম।
আদালতে হাফেজ শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘পুলিশ চেকপোস্টে বাহারছড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের আইসি লিয়াকত অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহাকে তাঁর গাড়ি থেকে নামতে বলেন। নামার সঙ্গে সঙ্গে পর পর দুই রাউন্ড গুলি করেন। এ সময় সিনহা পড়ে যান এবং কাতরাতে থাকেন। পানি পানি করে কাতরাতে থাকেন।’
শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘‘কিছুক্ষণ পর ওসি প্রদীপ ঘটনাস্থলে আসেন। এ সময় ওসি প্রদীপ আসামি লিয়াকত ও নন্দ দুলালের সঙ্গে কানে কানে কথা বলেন। পরে পাশে গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে থাকা সিনহার পাঁজরে লাথি মারেন এবং গালিগালাজ করেন। পরে ওসি প্রদীপ মোবাইলে কারো সঙ্গে কথা বলেন, ‘লাশ ফেলে দিয়েছি এখন কি করবো?’ পরে একটি ময়লার গাড়িতে সিনহার লাশ ফেলে দেন।’’
জবানবন্দিতে শহীদুল ইসলাম আরও বলেন, ‘গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত অবস্থায় মেজর সিনহা সাহায্য চাইলেও পুলিশ সাহায্য করেনি।’
ইমাম শহীদুল ইসলাম মসজিদের ছাদ থেকে ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন বলে আদালতকে জানিয়েছেন।
তৃতীয় দফায় বাকি সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করা হবে আগামী ২০, ২১ ও ২২ সেপ্টেম্বর। মামলায় আরও ৭৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হবে।
আজ দুপুর সোয়া ২টার পর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত থেকে বেরিয়ে বাদীপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর জানান, আজ বুধবার দ্বিতীয় দফার চতুর্থ দিনে ঘটনাস্থলের নিকটবর্তী বায়তুল নূর জামে মসজিদের ইমাম শহীদুল ইসলামের জবানবন্দি গ্রহণের মধ্য দিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে।
আইনজীবী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর জানান, আজ দ্বিতীয় দফা সাক্ষ্যগ্রহণের শেষ দিন। এদিনে স্থানীয় মসজিদের ইমাম শহীদুল ইসলাম মসজিদের ছাদ থেকে ঘটনাস্থলের পুরো ঘটনা আদালতের কাছে তুলে ধরেছেন। এতে আমরা সন্তুষ্ট।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম জানান, আজ সকাল ১০টায় জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে এ সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। সাক্ষ্যগ্রহণ ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের জেরা শেষ হয় দুপুর সোয়া ২টার দিকে।
আসামিপক্ষের আইনজীবী রানা দাশ গুপ্ত বলেছেন, ‘মসজিদের ছাদ থেকে মেরিন ড্রাইভ সড়কের দূরত্ব অনেক। মাঝখানে অনেক গাছপালা আছে। এই দূরত্ব থেকে কোনো ঘটনা স্পষ্টভাবে দেখা সম্ভব নয়। মূলত অশুভ অপরাধীচক্রের প্ররোচণায় কিছু সাক্ষী মিথ্যা সাক্ষ্য দিচ্ছেন।’
আজ সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে কক্সবাজার জেলা কারাগার থেকে মামলার ১৫ আসামিকে প্রিজন ভ্যানে করে কড়া পুলিশ পাহারায় আদালতে আনা হয়।
গত বছরের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।