গৃহকর্মীর কান্নার শব্দ বন্ধে মুখে পুরে দিতেন গামছা
পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার জান্নাতুল নামের নয় বছরের এক শিশুকে খুন্তি দিয়ে ছ্যাঁকা দিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে গৃহকর্তার বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, ছ্যাকা দেওয়ার পর কান্নার শব্দ যাতে বাইরে না আসে সেজন্য মুখে পুরে দেওয়া হতো গামছা। বাড়িতে এসে নির্যাতনের কথা কাউকে বলে দিলে মেরে ফেলা হবে বলে হুমকি দিতেন গৃহকর্তার স্ত্রী।
জানা যায়, সাঁথিয়া উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামের ক্যানালপাড়ার জান বক্স দ্বিতীয় বিয়ে করে বাড়ি ছাড়েন। প্রথম স্ত্রী নুরজাহান খাতুন (৪৫) দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন। বড় মেয়েকে বিয়ে দিলেও অভাবের সংসারে যেন দুচোখে অন্ধকার দেখেন নুরজাহান। তিনি দুই সন্তান সঙ্গে নিয়ে ঢাকায় চলে আসেন কাজের সন্ধানে। তিন বছর আগে ঢাকা থেকে গ্রামে এসে অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ নেন মা নুরজাহান। এতেও সংসারের অভাব দূর না হওয়ায় বাধ্য হয়ে নয় বছরের জান্নাতুল খাতুনকে সাঁথিয়ার রায়েকমারী গ্রামের মিঠুর ঢাকার বাসায় কাজে পাঠান। সেখানে গৃহকর্তা মিঠুর স্ত্রীর নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে উঠে ছোট জান্নাতুল। গৃহকর্তার স্ত্রী শাপলা খাতুন প্রায়ই জান্নাতুলকে মারপিট ও গরম খুন্তির ছ্যাঁকা দিতেন। গতকাল শুক্রবার নয় মাস পর জান্নাতুলকে বাসে ঢাকা থেকে পাবনার বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। মিঠুর মা মায়া খাতুন জান্নাতুলকে বাড়িতে পৌঁছে দেন। জান্নাতুলের বাড়িতে গেলে দেখা যায় তাঁর দুই হাত, পিঠে, মুখে নির্যাতনের চিহ্ন। খুন্তির ছ্যাঁকার দাগ এখন শরীরের সঙ্গে মিশেনি।
জান্নাতুল বলেন, ‘কোনো কাজ করতে বা নির্দেশ পালনে বিলম্ব হলে মিঠুর স্ত্রী শাপলা শুরু করতেন অত্যাচার। যাতে শব্দ বাইরে না যায় তার জন্য মুখের মধ্যে গামছা পুরে দিতেন। আমি বাড়ি আসতে চাইলে তারা নিষেধ করতেন। আমার মায়ের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করতে দিতেন না। বাড়িতে এসে নির্যাতনের কথা কাউকে যেন না বলি সেজন্য আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিতেন। এমনকি শাপলা বলে দিয়েছিল বাড়িতে এসে আমি যেন বলি সড়ক দুঘর্টনায় আহত হয়েছিলাম।’
জান্নাতুলের মা নুরজাহান বলেন, ‘মিঠুর মা সাঁথিয়ার ক্ষেতুপাড়া আব্দুস সাত্তার উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মায়া ভরণ-পোষণ ও বিয়ে দিয়ে দেওয়ার চুক্তিতে বাসার কাজের জন্য আমার মেয়েকে ঢাকার উত্তরার খিলক্ষেতে তাঁর ছেলের বাসায় পাঠায়। মিঠুর মা মাসে মাসে ঢাকায় গেলেও অত্যাচারের কথা গোপন রেখেছিল। আমি আমার মেয়ের পেটের ভাতের জন্য কাজে পাঠিয়েছিলাম, অত্যাচারের জন্য না। আমার মেয়েকে নির্যাতনের বিচার দাবি করছি।’
এ ব্যাপারে মিঠুর মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
মিঠুর মা ক্ষেতুপাড়া আব্দুস সাত্তার উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মায়া খাতুন জানান, ‘জান্নাতুলকে আমি কাজের জন্য ঢাকা পাঠাই। সেখানে সে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে।’ এটুকু বলেই ফোন কেটে দেন।
এ ব্যাপারে সাঁথিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশিফ মোহাম্মদ সিদ্দিকুল ইসলাম জানান, ঘটনাস্থল ঢাকা হওয়ায় মামলা সেখানেই করতে হবে। আমি জান্নাতুলের পরিবারকে ঢাকায় সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা করার পরামর্শ দিয়েছি।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ঢাকা খিলক্ষেত থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান জান্নাতুলের মা নুরজাহান খাতুন।