গোপালগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বেড়ে ৯, আহত ২৫
গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলায় বাস, প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে একই পরিবারের তিন জনসহ নিহতের সংখ্যা বেড়ে নয় জনে দাঁড়িয়েছে। এ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে আরও ২৫ জন। আহতদের ১২ জন সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
উপজেলার মিল্টন বাজার এলাকায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। কাশিয়ানী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেহেদি হাসান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নিহতদের মধ্যে একই পরিবারের যে তিন জন রয়েছেন, তাঁরা হলেন—রাজধানী ঢাকার বারডেম হাসপাতালের চিকিৎসক বাসুদেব সাহা (৫৫), তাঁর স্ত্রী শিবানী সাহা (৪৫) ও ছেলে আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত স্বপ্নীল সাহা (২০)।
ডা. বাসুদেব গোপালগঞ্জ শহরের সাবেক কাউন্সিলর প্রফুল্ল সাহার ছেলে। মায়ের অসুস্থতার খবরে তাঁরা গোপালগঞ্জের বাড়ি ফিরছিলেন। দুর্ঘটনায় তাঁদের প্রাইভেটকারের চালক মো. আজিজুল ইসলামও (৫৩) নিহত হন।
নিহত অন্যান্যরা হলেন—মোটরসাইকেল আরোহী অনিক মোল্যা (২৯) ও আফসান মীম (২০), বাসের যাত্রী আলতাফ হোসেন খান (৫০), ধান মাড়াইরত ফিরোজ মোল্যা (৫০), তাঁর স্ত্রী রুমা বেগম (৪৫)।
ইউএনও মেহেদি হাসান জানান, রাজিব পরিবহণের একটি বাস আজ সকালে ঢাকার দিকে যাচ্ছিল। এ সময় কাশিয়ানী উপজেলার মিল্টন বাজার এলাকায় একটি প্রাইভেটকার ও একটি মোটরসাইকেলের সঙ্গে বাসটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে তিনটি বাহনই দুমড়েমুচড়ে গেলে ঘটনাস্থলেই সাত জন নিহতের ঘটনা ঘটে। পরে আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পর আরও দুজনের মৃত্যু হয়।
কাশিয়ানীর ভাটিয়াপাড়া হাইওয়ে পুলিশের এসআই সিরাজুল ইসলাম ও এটিএসআই গৌতম কুমার এনটিভি অনলাইনকে জানান, নিহতের মধ্যে ডাক্তার বাসুদেবের বাড়ি গোপালগঞ্জ শহরের বটতলা এলাকায়। তাঁদের প্রাইভেটকারের চালক আজিজুল ইসলাম ময়মনসিংহ জেলার গৌরিপুর থানার গোলাপপুর গ্রামের নুরুল ইসলামে ছেলে।
ধান মারাইরত ফিরোজ কাশিয়ানী উপজেলার দক্ষিণ ফুকরা গ্রামের পিয়ার আলী মোল্লার ছেলে। মোটরসাইকেল আরোহী অনিক দক্ষিণ ফুকরা গ্রামের জিন্দার মোল্লার ছেলে এবং আফসানা মীম একই উপজেলার খায়েরহাট গ্রামের ইয়ার আলী ফকিরের মেয়ে।
বাসযাত্রী আলতাফ হোসেন খান বরগুনা জেলার পাথরঘাটা থানার চরদোয়ানী গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে।
পুলিশের এই দুই কর্মকর্তা আরও জানান, বিকেলে নিহত ৯ জনের পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই তাঁদের মরদেহ স্ব-স্ব পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এ ছাড়া দুর্ঘটনাকবলিত বাস, মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার ও ধান মাড়াই মেশিন জব্দ করে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে।
কাশিয়ানী ইউএনও মেহেদি হাসান জানান, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধারকাজ শুরু করেন।
কাশিয়ানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ মাসুদ রায়হান জানান, দুর্ঘটনার পর আহত ব্যক্তিদের কাশিয়ানী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
গোপালগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ একই তথ্য জানিয়ে বলেন, ‘দুর্ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশের পাশাপাশি স্থানীয়দের সহায়তায় দ্রুত উদ্ধার কাজ শুরু করা হয়।’
ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করে জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা জানান, বার বার আইনশৃঙ্খলা কমিটির মিটিংয়ে সড়ক দুর্ঘটনার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। তারপরও সড়কে মৃত্যু থামানো যাচ্ছে না। নিহতদের পরিবারকে ১০ হাজার টাকা এবং আহতদেরকে পাঁচ হাজার করে টাকা দেওয়া হয়েছে।