গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত গুরুত্বপূর্ণ : রাষ্ট্রপতি
একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে চলমান সংলাপের সপ্তম দিনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে নতুন আইন প্রণয়নের দাবি জানায় গণফোরাম এবং অনুসন্ধান (সার্চ) কমিটিসহ তিন দফা প্রস্তাবনা দিয়েছে বিকল্প ধারা বাংলাদেশ।
আজ রোববার সন্ধ্যায় গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি মুকাব্বির খান এমপি নেতৃত্বে আট সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল এবং বিকল্প ধারা বাংলাদেশের মেজর (অব.) আবদুল মান্নান, এমপির নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল পৃথক পৃথকভাবে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বঙ্গভবনের দরবার হলে আলোচনায় অংশ নেয়।
সংলাপ শেষে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন বাসসকে জানান, গণফোরাম নেতারা সংবিধানের ১১৮ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন আইন প্রণয়নসহ কয়েক দফা প্রস্তাবনা দেন।
গণফোরাম নেতারা বলেন, জনগণের প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। এ জন্য দরকার স্বাধীন নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন কমিশন। তারা আশা প্রকাশ করেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ও মতবিনিময়ের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন ফলপ্রসূ হবে।
ইসি গঠনে আইন প্রণয়ন এখন একটি গণদাবি উল্লেখ করে গণফোরামের প্রতিনিধিদলের নেতারা জানান, তাঁরা বিশ্বাস করেন, জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে সরকার নির্বাচন কমিশন আইন প্রণয়ন করবে। স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রেখে নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে প্রস্তাব দেন গণফোরামের নেতারা।
পরে সন্ধ্যা ৭টার সঙ্গে সংলাপে যায় বিকল্পধারার প্রতিনিধিদল। রাষ্ট্রপতির কাছে আইন প্রণয়নসহ তিন দফা প্রস্তাব পেশ করে তারা। তারা নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর পাঠানো "অনুসন্ধান কমিটি"র কাছে দেওয়া নামগুলো থেকেই প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনারের নাম প্রস্তাবের সুপারিশ করে তারা।
অনুসন্ধান কমিটি গঠনের জন্য বিকল্পধারা দেশের বিশিষ্ট নাগরিক ঊর্ধ্বতন পদাধিকারীদের নাম সুপারিশ করে। সাত সদস্যের প্রতিনিধিদলের মধ্যে সংলাপে অংশ নিয়েছেন বিকল্পধারা বাংলাদেশের মুখপাত্র মাহি বি চৌধুরী এমপি।
বিকল্পধারার প্রতিনিধিরা নির্বাচন কমিশন গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নেওয়ার জন্য রাষ্ট্রপতিকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান।
নেতাদের বঙ্গভবনে স্বাগত জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন কমিশন যাতে গঠন করা যায় সেজন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সুচিন্তিত মতামত খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠন একটি সাংবিধানিক দায়িত্ব। একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য পরামর্শ গ্রহণের যথার্থতা রয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, রাজনীতিবিদদের অনুকরণীয় কিছু করে যেতে হবে, যাতে পরবর্তী প্রজন্ম এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেদের জন্য কিছু করে যেতে পারে।
রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিবরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
গত ২০ ডিসেম্বর প্রথম দিনে সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সঙ্গে সংলাপে বসেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
এখন পর্যন্ত মোট ১০টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
আগামীকাল ৩ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬টায় সংলাপে যোগ দেবে গণতন্ত্রী পার্টি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি সন্ধ্যা ৭টায় এবং বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়।
৪ জানুয়ারি সংলাপ হবে বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের সঙ্গে সন্ধ্যা ৬টায়, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সঙ্গে সন্ধ্যা ৭টায়।
৫ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬টায় সংলাপ হবে হবে জাতীয় পার্টির (জেপি) সঙ্গে এবং সন্ধ্যা ৭টায় জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সঙ্গে।
৬ জানুয়ারি গণফ্রন্টের সঙ্গে সন্ধ্যা ৬টায় এবং লিবারেল ডেমোক্রেটিক পাটির্র (এলডিপি) সঙ্গে সন্ধ্যা ৭টায় সংলাপের কথা রয়েছে।
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সঙ্গে আলোচনা হবে ৯ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬টায় এবং বাংলাদেশ মুসলিম লীগের (বিএমএল) সঙ্গে ওই দিন সন্ধ্যা ৭টায়।
অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার তারিখ এখনো নির্ধারিত হয়নি।
এর আগে নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
রাষ্ট্রপতিকে সিইসি এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। গত কয়েকটি মেয়াদে রাষ্ট্রপতি 'সার্চ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন।
বর্তমান ইসির পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি। এ সময়ের মধ্যেই রাষ্ট্রপতি নতুন কমিশন গঠন করবেন, যাদের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।