গ্রেনেড হামলা নিয়ে সাঈদ খোকনের বক্তব্যকে ‘রহস্য’ বললেন রিজভী
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা নিয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের বক্তব্যে ‘রহস্য’ দেখছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
বিএনপিনেতা বলেন, ‘২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা নিয়ে আমরা একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছি। সেটা হচ্ছে, ঢাকার সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফের ছেলে সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন গতকাল একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন। হামলার আগের দিন তাঁর বাবা হানিফ তাঁকে আগেই বলেছিলেন যে, নেত্রীর ওপর হামলা হতে পারে, এই তথ্যটা নেত্রীকে জানাও।’
রিজভী বলেন, ‘সাঈদ খোকন ঘটনার আগের দিন নেত্রীকে জানিয়েছেন যে, আপনার বাসায় বা যাতায়াত পথে আক্রমণ হতে পারে। কিন্তু এই বিষয়টা শেখ হাসিনা আমলে নেননি। এইটা আমাদের কাছে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, কেন এই বিষয়টা তিনি (শেখ হাসিনা) গুরুত্ব দিলেন না? আমলে নিলেন না?’
আজ শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে রিজভী এসব কথা বলেন।
প্রায় দেড় দশক আগে ২০০৪ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী শান্তি সমাবেশে নারকীয় গ্রেনেড হামলা চালানো হয়, যা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা নামে পরিচিত। সেসময় বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট ক্ষমতায় ছিল।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতা সেদিন অল্পের জন্য এই ভয়াবহ হামলা থেকে বেঁচে গেলেও আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। এ ছাড়া এই হামলায় আরও ৪০০ জন আহত হন। আহতদের অনেকেই চিরতরে পঙ্গু হয়ে গেছেন। তাদের কেউ কেউ আর স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাননি।
আজকে সেই ঘটনা প্রসঙ্গে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘এই সরকারের আন্দোলনের ফসল এক-এগারোর সরকারের সময় এই হামলা মামলা নিয়ে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নাম চার্জশিটে আসেনি। সে সময় অনেক তদন্ত করেছে। কিন্তু এই সরকার ক্ষমতায় এসে তাদের লোক যারা নির্বাচন করবে পোস্টার ছাপিয়েছে তাকে আইও বানিয়ে তদন্ত করে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নাম দিয়েছে। এতে স্পষ্ট হয় এটা একদম পরিকল্পিত, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এসব ঘটনার সব সময় আমরা নিন্দা জানাই। কিন্তু সঠিক তদন্তের মাধ্যমে কারা জড়িত তাদের বের করার আন্তরিকতা এদের মধ্যে আমরা দেখতে পাইনি। সে সময় বিএনপি ক্ষমতায় ছিল কিন্তু তারা বিএনপিকে কোনো সহযোগিতা করেনি।’
রিজভী আরও বলেন, ‘তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া সুধাসদনে শেখ হাসিনাকে দেখতে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এবং তদন্তের বিষয়ে আলোচনা করতে চেয়েছিলেন, তাও তারা করেননি। সবকিছু বিবেচনা করে দেখলে এবং গতকালকের সাঈদ খোকনের তথ্য থেকে বুঝা যায়, এখানে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য করা হয়েছে।’
বিএনপিনেতা বলেন, ‘এই সরকার মুফতি হান্নানকে নির্যাতন করে স্বাক্ষর নিয়েছিল কিন্তু পরবর্তীকালে তিনি সেটা অস্বীকার করেছেন এবং বলেছেন আমাকে নির্যাতন করে স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে। এ থেকে বোঝা যায়, এই সরকার জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ধ্বংস করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। সাঈদ খোকন যে তথ্য দিয়েছিলেন, তারা তাতে সতর্ক হতে পারতেন বা সরকারের সঙ্গে আলোচনা করতে পারতেন। আরেকটি বিষয় হলো, তাদেরকে যে জায়গায় সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল সেই জায়গায় না করে হঠাৎ করে অন্য জায়গায় করে। এ থেকে বোঝা যায় যে, হামলা সাজানো ছিলো। এবং এই হামলার মাধ্যমে বিএনপির ভাবমূর্তি নষ্ট করতে উদ্দেশ্য ছিল। যেটা আবারও প্রমাণিত হলো গতকাল সাঈদ খোকনের বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে।’
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘পরিস্থিতি দিন দিন নৈরাজ্যের দিকে ধাবিত হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক, স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য তাঁর অফিসে তালা দেওয়া হচ্ছে, ভাঙচুর করা হচ্ছে। মানে, একটি ভয়ঙ্কর গুণ্ডামির রাজ্য তৈরি করছে। আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসছে এবং ক্ষমতায় আসার যে প্রেক্ষাপট সেই প্রেক্ষাপট তৈরি থেকেই মনে হয়েছে যে বাংলাদেশে একটি রাজনৈতিক দল থাকবে, তাদের ভোটের কোনো দরকার নেই, তারা আজীবন ক্ষমতায় থাকবে এবং তাদের প্রভুদের খুশি করতে পারলেই তারা আজীবন ক্ষমতায় থাকতে পারবে। তারা নানা ধরনের কথা বলেছে, নানা ধরনের ঘটনা তৈরি করেছে। আর সেগুলো উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করেছে। বিএনপির ওপর চাপানোর চেষ্টা করেছে।’
দেশের গণমাধ্যমের বিষয়ে বিএনপিনেতা আরও বলেন, ‘গণমাধ্যম যদি স্বাধীনভাবে কাজ করতে না পারে তাহলে সেটাকে গণতান্ত্রিক সমাজ বা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা বলে না। বিচার বিভাগ আছে, গণমাধ্যম আছে। কিন্তু সবগুলোর চিন্তায় মনে হচ্ছে, একটি শক্তিকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য। যেখানে ভিন্ন মতের স্বাধীনতা নেই, সেটাকে গণতন্ত্র বলে বিবেচিত হবে না। এখন একতরফাভাবে একদলীয় শাসন ব্যবস্থার জন্য কাজ হচ্ছে। সুতরাং বর্তমানে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নয়, তাদের বক্তব্য তুলে ধরার জন্য কাজ হচ্ছে।’