গ্রেপ্তার এড়াতে প্রযুক্তিতেও দক্ষ হয়ে উঠে গাড়িচোরেরা
একটি সংঘবদ্ধ গাড়ির চোরচক্র, বিশেষত পণ্যবাহী গাড়ি চুরি করে আসছিল। গত কয়েকদিন ধরে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এই গ্রুপটিকে অনুসরণ করতে থাকে। গতকাল মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে আজ বুধবার পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে রাজধানীর মিরপুর ও বেড়িবাঁধ এলাকা থেকে এই চক্রের পাঁচজনকে আটক করার দাবি করেছে র্যাব।
আজ বুধবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের র্যাব মিডিয়া সেন্টার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাপিড অ্যাকশান ব্যাটালিয়নের (র্যাব-৪) অধিনায়ক মোজাম্মেল হক।
গ্রেপ্তারকৃত হলেন নারায়ণগঞ্জের মো. সোহেল (২৬), মো. সাগর (২৩), মো. হাসান (২৬), মো. কামরুজ্জামান (৩৯) ও কুমিল্লার মো. সাকিব হোসেন (২৩)। গ্রেপ্তারের সময় এদের কাছ থেকে চোরাইকৃত চারটি পিকআপ, সাতটি টায়ার রিং, দুটি টায়ার, একটি টুলস বক্স, একটি চাবির ছড়া ও সাতটি মুঠোফোন উদ্ধার করা হয়।
মোজাম্মেল হক বলেন, সংঘবদ্ধ চক্রের এ সদস্যরা পরষ্পরের যোগসাজসে তিন বছর ধরে রাজধানী ঢাকার ধোলাইখাল, যাত্রাবাড়ী, নারায়ণগঞ্জে, গাজীপুর, নরসিংদী ও কুমিল্লা এলাকা থেকে পিকআপসহ বিভিন্ন ধরনের গাড়ি চুরি করতেন। দীর্ঘদিন ধরে র্যাব এ চোরচক্রকে ধরতে ছায়াতদন্ত শুরু করে। তারপর কয়েকটি অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাব-৪ অধিনায়ক আরও বলেন, ‘এই গাড়ির চোরচক্রটি এতটাই ধূর্ত যে, গ্রেপ্তারকৃতরা যে মোবাইল ব্যবহার করতেন, সেগুলো নন-অ্যান্ড্রয়েড। একটি গাড়ি চুরি সম্পন্ন করার পর পর তারা পাঁচ দিনের মধ্যে মোবাইল ও সিম ভেঙে ফেলতেন। এবং যখন ঘুমাতে যেতেন, তখন মোবাইল এবং সিম ঘুমানোর স্থান থেকে অন্তত এক কিলোমিটার দূরত্বে রাখতেন। যাতে করে প্রযুক্তির মাধ্যমে হলেও তাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শনাক্ত করতে না পারে। তারা এ পর্যন্ত শতাধিক গাড়ি চুরি করেছে বলে আমাদের কাছে তথ্য আছে।’
'গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে সোহেল এবং সাগর আপন দুই ভাই। তারা দুজনই মাদকাসক্ত। এই মাদকের টাকা যোগাড় করার জন্য তারা গাড়ি চুরিচক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। গাড়িচুরির মামলায় তারা দুই ভাইই কুমিল্লার জেলে ছিল। সে সময় সাগরের সঙ্গে এদের দুই ভাইয়ের পরিচয় হয়। জেলখানায় বসে তারা পরিকল্পনা করে একটি চক্র গড়ে তোলার। জেল থেকে বের হয়ে তারা তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ শুরু করে। এবং পরবর্তীতে কামরুজ্জামান ও সাকিবের সঙ্গে তারা সংঘবদ্ধ চক্রটি গড়ে তোলেন’, যোগ করেন মোজাম্মেল হক।
র্যাব আরও জানায়, এই গাড়ি চোরচক্র নিজেদেরকে পরিচয় দিতেন রাজা, বাদশা, সম্রাট, বস এবং বুলেট হিসেবে। এর মধ্যে সোহেল ছিল এই গ্রুপের প্রধান। তিনি খুব ভালো গাড়িচালক। তিনি মুহূর্তের মধ্যে অন্য চাবি দিয়ে গাড়ি চালু করতে পারতেন। পিকআপের চালক খাবার খেতে বা অন্য কোথাও একটুর জন্য গেলেই সোহেল অন্য চাবি দিয়ে গাড়ি চালু করে চলে যেতেন। আর সোহেলের ভাই সাগর; তার ভালো প্রযুক্তি জ্ঞান দিয়ে গাড়িতে থাকা জিপিএস সিস্টেম (গাড়ি শনাক্ত করার যন্ত্র) মুহূর্তের মধ্যে বন্ধ করে দিতেন। এরপর তারা গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যেতেন। এ ছাড়া কিছু মাদকাসক্ত চালকের সঙ্গে তারা ভালো সম্পর্ক করতেন। তাদেরকে বলতেন, মালিককে বলতে, গাড়ি চুরি হয়েছে গেছে। পরবর্তীতে এই টাকার ভাগ তিনিও (চালক) পাবেন।