চট্টগ্রাম আদালতে হামলা : বোমা মিজানের মৃত্যুদণ্ড, আরেক আসামির যাবজ্জীবন
২০০৫ সালে চট্টগ্রাম আদালত ভবনে পুলিশ চেকপোস্টে আত্মঘাতী বোমা হামলা মামলায় নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) শীর্ষনেতা মিজান ওরফে জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমা মিজানকে মৃত্যুদণ্ড এবং অপর আসামি জাবেদ ইকবালকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দিয়েছেন আদালত।
বোমা হামলার ঘটনার প্রায় ১৬ বছরের মাথায় আজ রোববার দুপুরে চট্টগ্রামের সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক আব্দুল হালিমের আদালত মামলার যায় ঘোষণা করেন।
রায় ঘোষণার পর আদালত প্রাঙ্গণে চট্টগ্রাম সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি মনোরঞ্জন দাশ বলেন, ‘এ মামলার মোট পাঁচ জন আসামি ছিলেন। তাঁরা হলেন—জেএমবি’র প্রধান শায়খ আবদুর রহমান, তাঁর সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিদ্দিকুর রহমান ওরফে বাংলা ভাই, জেএমবির সামরিক কমান্ডার আতাউর রহমান সানি, জেএমবির শীর্ষ নেতা মিজান ওরফে জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমা মিজান এবং জাবেদ ইকবাল। এর মধ্যে প্রথম তিন জনের অন্য মামলায় ফাঁসি হওয়ায় তাঁদের নাম এ মামলা থেকে বাদ দেওয়া হয়। মামলার একমাত্র আটক আসামি জাবেদ ইকবাল কারাগারে আছেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বোমা মিজান পলাতক রয়েছেন।
জানা গেছে, ২০১৪ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে হাজিরা দেওয়ার জন্য ময়মনসিংহের আদালতে নেওয়ার পথে ত্রিশাল এলাকায় প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে পুলিশের কাছ থেকে তিন জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয় অন্য জঙ্গিরা। এর মধ্যে একজন বোমা মিজান। এরপর বোমা মিজানকে আর গ্রেপ্তার করা যায়নি। অপর যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জাবেদ ইকবালকে রায় ঘোষণাকালে আদালতে হাজির করা হয়।
২০০৫ সালের ২৯ নভেম্বর সকালে চট্টগ্রাম আদালত ভবনের পুলিশ চেকপোস্টের সামনে বোমা হামলা চালায় জঙ্গিরা। ঘটনাস্থলে নিহত হন পুলিশ কনস্টেবল রাজীব বড়ুয়া এবং ফুটবলার শাহাবুদ্দীন। আহত হন পুলিশ কনস্টেবল আবু রায়হান, সামসুল কবির, রফিকুল ইসলাম, আবদুল মজিদসহ ১০ জন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, এ ঘটনায় নগরীর কোতোয়ালি থানায় দায়ের করা মামলায় ২০০৬ সালের ১৮ মে চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের তৎকালীন পরিদর্শক হ্লা চিং প্রু জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমান্ডার জাবেদ ইকবাল ওরফে মোহাম্মদ ও বোমা তৈরির কারিগর জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমারু মিজানসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন।
চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে ২০০৬ সালের ১৬ জুলাই মামলাটির অভিযোগ গঠন করা হয়। এর মধ্যে অন্য একটি মামলায় বাকি তিন জন—জেএমবি’র প্রধান শায়খ আবদুর রহমান, তাঁর সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিদ্দিকুর রহমান ওরফে বাংলা ভাই এবং জেএমবি’র সামরিক কমান্ডার আতাউর রহমান সানি নামের তিন আসামির ফাঁসির আদেশ হয়। ফলে এ মামলা থেকে তাঁদের বাদ দেয়া হয়েছিল। চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে ২০০৬ সালের ১৬ জুলাই মামলাটির অভিযোগ গঠন করে। পরে মামলার বিচার চলছিল প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে।
২০০৮ সালে মামলাটি চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। সাক্ষীরা হাজির না হওয়ায় ১৩৫ কার্যদিবসের মধ্যে মামলাটি নিষ্পত্তি করা যায়নি। পরে মামলাটি প্রথম অতিরিক্ত চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে ফেরত যায়। পরে পুনরায় ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে মামলাটি চট্টগ্রাম বিভাগীয় ট্রাইব্যুনালে পাঠান চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ। ২০১৮ সালে চট্টগ্রাম সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনালের গঠন করা হলে চট্টগ্রামের জঙ্গিদের সব মামলা এই ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। একই বছর ৬ আগস্ট মামলাটি সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনালে রিসিভ করেন।
দীর্ঘ ১৬ বছর মামলা চলার পর রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে এবং মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ ৩২ জনের সাক্ষী আদালতে হাজির করেছেন। আসামিপক্ষে আসামি জাবেদ ইকবাল নিজেই সাক্ষী দিয়েছেন। সাক্ষীদের সাক্ষ্যপ্রমাণ এবং আলামত জব্দের মধ্য দিয়ে আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে রাষ্ট্রপক্ষ সক্ষম হয়েছে বলে জানান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী।